পাকিস্তানের রাজনীতির নাটাই নওয়াজের হাতেই

প্রকাশিত: ৪:৫৪ অপরাহ্ণ , জুলাই ২৪, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : গত বছর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানোর পর দেশজুড়ে ব্যাপক শোডাউন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির মাঠে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ তথা পিটিআইয়ের তেমন সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতে ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা বেশ দৌড়ঝাঁপের মধ্যে আছেন।

পাকিস্তানি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, কয়দিন পর পরই দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা লন্ডন-দুবাই ছুটে যাচ্ছেন। লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ শরিফ। লন্ডনের পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই দুবাইয়ে পৌঁছেও বৈঠক করছেন তিনি।

চলতি বছরের শেষ দিকে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ উপলক্ষ্যে আগস্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি নওয়াজ শরিফের ছোটভাই এবং পিএমএল-এনের শীর্ষ নেতা।

পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের এক রায় অনুযায়ী, সরকারি কোনো পদে থাকার যোগ্য নন নওয়াজ শরিফ। দুর্নীতির মামলা প্রমাণ হওয়ায় এমন রায় দিয়েছেন দেশটির আদালত। তবে সম্প্রতি শাহবাজ শরিফের সরকার পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করেছে, যেখানে নওয়াজ শরিফ নির্বাচন করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবটি আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন দেশটির আদালত। আগেও একাধিকবার এমন পদক্ষেপ ভেস্তে গেছে।

এ কারণে শাহবাজ শরিফসহ দলীয় নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে নওয়াজ শরিফের দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও এখনো লন্ডনেই রয়ে গেছেন তিনি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ কয়েক দিন আগে বলেছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বান্দিয়াল অবসর নেওয়ার পর দেশে ফিরবেন পাকিস্তান পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ।

জিও নিউজের খবর অনুযায়ী, গত ১৮ জুলাই তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে নওয়াজ শরিফের প্রত্যাবর্তনের ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।’ প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। এর পর বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।

মনে করা হচ্ছে, নওয়াজ শরিফ আগামীতে দেশে ফিরতে পারবেন এবং দলীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করে নির্বাচনেও অংশ নেবেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে জোটে থাকা অন্যান্য দলের নেতা লন্ডন ও দুবাই গিয়েই তার সঙ্গে বৈঠক করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কে দায়িত্ব নেবেন, সেটি ঠিক করতেই আপাতত একের পর এক বৈঠক হচ্ছে বলে খবর দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

জিও নিউজ রোববার এক প্রতিবেদেনে জানিয়েছে, পিএমএল-এনের সিনিয়র সহসভাপতি ও নওয়াজকন্যা মরিয়ম নওয়াজ দুবাই পৌঁছেছেন। সেখানে জোটের প্রধান শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে পিএমএল-এনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

দ্য নিউজের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিপিপির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি শুক্রবার সন্ধ্যায় করাচি থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে দুবাইয়ের আল-মাকতুম বিমানবন্দরে পৌঁছান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভবত আগস্টের শুরুতে সরকার জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিলে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে পিএমএল-এন এবং পিপিপির নেতৃত্ব পরামর্শ করবে। এর আগেও দুই দলের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।

পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানের সঙ্গেও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পরামর্শ করা হবে।

অবশ্য জোটের আরেক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) গত মাসে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক বৈঠক হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, এভাবে আস্থা রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

তবে এই ব্লকের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আশা করছেন, পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ মাওলানা ফজলের উদ্বেগ দূর করতে তার সঙ্গে দেখা করবেন।

করাচির জেইউআই-এফ নেতারা দ্য নিউজকে নিশ্চিত করেছেন যে, মাওলানা ফজল আগামী সপ্তাহে দুবাই যাবেন এবং সেখান থেকে যাবেন লন্ডনে।

এদিকে শুক্রবার পাকিস্তান মুসলিম লীগ-ফাংশনাল (পিএমএল-এফ) প্রধান পীর পাগারা সিবগাতুল্লাহ রশদি করাচিতে মাওলানা ফজল এবং তার সহযোগীদের জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। নৈশভোজে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জোট ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।

দিন যত যাচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই খোলাসা হচ্ছে। তবে এসব আলোচনা, পরামর্শ কিংবা সমালোচনা কীভাবে দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করবে, সেটা দেখার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

Loading