৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয়

ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া

প্রকাশিত: ১:২৮ অপরাহ্ণ , জুন ২৭, ২০২৩

বৃহত্তম ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি সকল আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সকাল ৯টায় ঈদুল আজহার ১৯৬তম বিশাল জামাত শুরু হবে শর্টগানের গুলির শব্দে। জামাতে ইমামতি করবেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি ফরিদউদ্দীন মাসউদ।

বিকল্প ইমাম থাকবেন মারকাস মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর নিরাপত্তা মোতায়েন থাকবে। ঈদের দিন শোলাকিয়া ও আশপাশের নিরাপত্তায় মাঠের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশপথে ৫ স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। জামাতকে সামনে রেখে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। ঈদগাহ ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এছাড়া মাঠে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করাসহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম, বোম ডিসপোসাল টিম, মাইন ডিটেক্টর ইউনিটসহ অন্যান্য টিম কাজ করবে। জায়নামাজ ছাড়া ঈদগাহে কোনোভাবেই মোবাইল ফোন, ছাতা, ব্যাগ ও অন্যকিছু নিয়ে মুসল্লিরা মাঠে ঢুকতে পারবেন না। এছাড়া সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাতে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠের দাগ কাটাসহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কার এবং অজু-পানির সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শন করে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিদের আগমনের সুবিধার্থে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঈদের দিন সকালে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ের জন্য প্রতিবারই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিগণ ছুটে আসেন। তবে কোরবানীর ব্যস্ততার কারণে ঈদুল আজহার জামাতে ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা কম হয়ে থাকে। সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য অনুযায়ী শোলাকিয়ায় ১৫ মিনিট আগে ৩টি, ৫ মিটি আগে ২টি ও ১টি আগে ১টি শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে জামাত শুরুর সংকেত দেয়া হয়। – জনকণ্ঠ

জেলা প্রশাসক ও মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজদ গণমাধ্যমে জানান, মুসল্লিসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ঈদ জামাত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে চাই। এ সময় তিনি মুসল্লিদেরকে নির্ভয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাতে শরীক হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ গণমাধ্যমে জানান, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। ২০১৬ সালে সংঘটিত জঙ্গী হামলার কারণে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে নিরাপত্তা টিম মাঠের দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। ঈদের দিন মাঠের সবখানে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি।

ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম গণমাধ্যমে জানান, গত ঈদুল ফিতরে সব বাধা বিপত্তি জয় করে এই মাঠে কয়েক লাখের মুসল্লি জামাতে অংশ নেন। এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মানুষের ঢল নামবে বলে আশা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।

শোলাকিয়া পরিচিত করেছে কিশোরগঞ্জকে, পরিচিত করেছে সারা দেশকে। মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৮২৮ সালে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছর ঈদের প্রথম জামাতে মুসল্লির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ থেকেই উচ্চারণ বিবর্তনে বর্তমানে ‘শোলাকিয়া’ নামকরণ হয়েছে।

Loading