বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড

ঈদের মার্কেট না করে ২০ লাখ টাকা দিলেন হিজড়া সম্প্রদায়

প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ , এপ্রিল ৯, ২০২৩

ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট। নিঃস্ব হয়ে গেছে ব্যাবসায়ীরা। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষ যখন মুখ লুকিয়ে তখন সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা পাশে দাঁড়িয়েছে ব্যাবসায়ীদের। বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা দিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। নিজেদের ঈদের মার্কেট না করে সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য দিলেন।

রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া মার্কেটে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার অর্থ প্রদান করা হয়।

এসময় বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী বলেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজ তাদের এই বিপদের সময়, আমরা আমাদের এবারের ঈদের যেসব কেনাকাটা রয়েছে সেই কেনাকাটা না করে ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারাদেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো।

গুরুমা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক-দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দেবো। এই টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে দেয়া হবে না, পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এই টাকা পৌঁছানো হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আজ হাতে পাওয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ২০ লাখ টাকা দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করবো তাদের যেনো কখনো অবহেলার চোখে না দেখে। এখন থেকে আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবো।

অনুদান হস্তান্তরকালে ঢাকাসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে তাদের সরদারনী আলেয়া হিজড়া হজের জন্য জমানো টাকা থেকে দুই লাখ টাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান হিসেবে দেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোরের দিকে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ৬টা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রথম ইউনিট। মার্কেটটিতে সহস্রাধিক কাপড়ের দোকান থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের সব ক’টি ইউনিট কাজে নেমে পড়ে। খবর পাঠানো হয় ঢাকার সকল স্টেশনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে সবশেষ কাজ করর ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিশেষায়িত টিম। আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দলও। অগ্নিনির্বাপনের জন্য ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টারও।

Loading