বিএনপির বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্ক থাকবে নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: ৯:০৯ অপরাহ্ণ , ডিসেম্বর ৫, ২০২২

সমাবেশের নামে বিএনপি যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি নাকি রাজপথ ও ঢাকা দখল করবে। ফখরুল সাহেব আমি বলতে চাই, আমাদের নেতাকর্মীরা মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় পাহারায় থাকবে। বিএনপি বিআরটিসির বাস পুড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট সড়কে শেখ হাসিনার ভিত্তি প্রস্তর রাতের অন্ধকারে পুড়িয়েছে। তারা আগুন-লাঠি নিয়ে আসবে, এজন্য তারা পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চায়। বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ফখরুল সাহেব বলেন খাঁচা।

জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহবায়ক এবং নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্লাহ খাঁন সোহেল এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

‘খেলা হবে’ জনগনের পছন্দের স্লোগান উল্লেখ্য করে কাদের বলেন, আমি আজীবন এ স্লোগান দিয়ে যাব, এ স্লোগান জনগন খুবই পছন্দ করে। তাই আমি বলবো, খেলা হবে, হবে খেলা। এ ডিসেম্বরে খেলা হবে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে, টাকা চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে, দূর্ণীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। কিন্তু এ স্লোগান ফখরুল সহ আরও কয়েকজনের পছন্দ না। জনগনের পছন্দের এ স্লোগান আমি দিয়ে যাবো, আমি বলে যাবো খেলা হবে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, একরামুল করিম চৌধুরী (স্থানীয় সাংসদ) আমার ছোট ভাই, দল এবং নোয়াখালীর স্বার্থে আমি একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ও আমার ভাই আবদুল কাদের মির্জা সহ তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কোন্দল মুক্ত নোয়াখালী আমি দেখতে চাই। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও কোন্দল আর কোলাহল দেখতে চান না, পছন্দও করেন না।

সম্মেলনের বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ একই মঞ্চে তার বক্তব্যে বলেন, বাস-ট্রেনে পেট্টোল ঢেলে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করবেন, আর মামলা হলে গ্রেপ্তার করলে এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা বলেন-বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার নামে নাইকো দুর্নীতি মামলা সহ আরও দুর্নীতির মামলা রয়েছে, এসব মামলার রায় হলে হয়তো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাদের নেতাদের বাকী জীবন কারাগারেই থাকতে হবে। বিএনপিকে আহ্বান করে বলবো, দেশে আইন আছে, সরকার ও সংবিধান আছে। যেখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সরকার সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে সমাবেশ করুন। অন্যভাবে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লক্ষ লক্ষ কর্মী আছে, তারাই আপনাদের নৈরাজ্য অপকর্ম রুখে দেবে।

সমাবেশে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। দল পরিচালনা করতে গিয়ে পরিবারকেও সময় দেওয়া যায় না। কত কুতুব যে এখন আওয়ামী লীগে আছে, ওদের ঠান্ডা করে দল চালানো খুবই কষ্টকর। আমি দায়িত্ব পেয়ে এখানে ৫০জন লোকও পায়নি।

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মো. আবদুস সবুর, নোয়াখালী এমপি মোরশেদ আলম, এইচ এম ইব্রাহিম, মামুনুর রশীদ কিরণ, আয়েশা ফেরদাউস, সংরক্ষিত সাংসদ ফরিদা খানম সাকি প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, সবশেষ ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিলো। যেখানে সভাপতি হিসেবে পুনঃরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। কমিটি ঘোষণার পর থেকে দীর্ঘসময় নানান ঘাত প্রতিঘাত, সহিংসতা ও হতাহতের পর সেই কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ না করে দুই বছরের মাথায় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে আহবায়ক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ৮৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

Loading