চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটে ব্যাহত জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ , নভেম্বর ২২, ২০২২

চট্টগ্রামে বেশ কিছু দিন ধরে চলছে গ্যাস সংকট। অনেক বাসা-বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। সিএনজি স্টেশনেও মিলছে না চাহিদা মতো গ্যাস। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। তাতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এই ঘাটতির কারণে প্রায়ই গ্যাসের প্রেসার কম থাকছে। ঘাটতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কেজিডিসিএল।

কেজিডিসিএল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দুটি সার ও একটি বিদ্যুৎ কারখানায় একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের চোগান দিতে হচ্ছে। এ কারণে আবাসিক গ্রাহকরা অনেক ক্ষেত্রেই গ্যাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহও কমে গেছে। মূলত এই দুই কারণে গ্যাসের সংকট চলছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিপর্যয় নামার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে স্টিল রি-রোলিং মিল ও গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্প বিদ্যুৎনির্ভর হলেও কিছু কিছু সেকশন গ্যাসে চলে। যাদের ডাইয়িং ও ওয়াশিং প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। বেশ কিছু দিন ধরে চাহিদা মতো গ্যাস মিলছে না। এতে ডাইয়িং ও ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো সমস্যায় পড়েছে। পোশাক আয়রন করতেও সমস্যা হচ্ছে। কেউ কেউ গ্যাসের বিকল্প হিসাবে বৈদ্যুতিক জেনারেটর ব্যবহার করছেন। এতে বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। অনেক কারখানায় রাত-দিন কাজ করে অর্ডার সময় মতো রেডি করতে হচ্ছে।’

কেজিডিসিএলের বিপণন দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে গ্যাসের কিছুটা সংকট আছে। একটি বাল্ক (বড় আকারের গ্যাসচালিত ইউনিট) চললে কোনো সংকট থাকে না। সেখানে এখন একসঙ্গে চলছে তিনটি বাল্ক। তাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে মিলছে ২৯০ মিলিয়নের মতো। ঘাটতি থাকছে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট। দুটি সারকারখানার মধ্যে কাফকোতে ৪২, সিইউএফএলে ৪১ ও শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া আছে কলকারখানা। এগুলোর চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে গিয়ে গ্যাসের ঘাটতি পড়ছে।

কেজিডিসিএলের এই কর্মকর্তা আরও জানান, চট্টগ্রামে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তার পুরোটাই আমদানি করা এলএনজি। বর্তমানে এলএনজির কিছুটা সংকট রয়েছে। এলএনজি আমদানির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।

এদিকে যানবাহনেও দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট। নগরীর বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব স্টেশনে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও গ্যাস নিতে পারছেন না। সিএনজি স্টেশনগুলোর সামনে যানবাহনের লম্বা লাইন এখন নিত্য দিনের চিত্র। সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও গ্যাস পাচ্ছেন না যানবাহন চালকেরা।

নগরীর মুরাদপুর এলাকার কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, কোথাও গ্যাস পাই, কোথাও পাই না। এভাবে গ্যাস খুঁজতে খুঁজতেই কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। দিনের বাকি সময়টা অটোরিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে মালিকের জমা শোধ করতেই কষ্ট হয়ে যায়।

আবাসিক এলাকার বাসাবাড়িগুলোর অবস্থাও একই। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় প্রায়ই গ্যাস থাকছে না বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার গৃহিণী খাদিজা আক্তার সুইটি যুগান্তরকে বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাস মিলছে না। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই থাকে না গ্যাসের প্রেসার। মিট মিট করে চুলা জ্বলে, তা দিয়ে রান্না করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না বললেই চলে। রান্না করতে না পারায় প্রায়ই বাড়ির লোকজনকে না খেয়ে থাকতে হয়।

তিনি জানান, ওই এলাকার সবার অবস্থা একই। কেউ কেউ বিদ্যুৎ চালিত রাইস কুকারে রান্না করছেন। যাদের রাইস কুকার নেই তাদের কাঠ-খড় কিংবা কাগজ পুড়িয়ে রান্না করে খেতে হচ্ছে। নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ফিরিঙ্গি বাজার, অক্সিজেন এলাকাসহ অনেক এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস মিলছে না বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

যুগান্তর

Loading