ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে সক্রিয় বালুখেকো চক্র ।। জানেন না ডিসি

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ , মার্চ ২০, ২০২১

আনিসুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি:

বালাগঞ্জ উপজেলার রশীদপুর গ্রাম এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ভেঙ্গে ভয়ানক ক্ষতির শিকার রশীদপুর ও আশপাশের এলাকা। এলাকাবাসী ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বললে ইউএনও এর অনুমতি আছে বলে বালু খেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজ অভ্যহত রেখেছে । এ ব্যাপারে বালাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুজিনা আক্তারের নির্দেশে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে আপত্তি দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় রশিদপুর গ্রামের আনসার বিডিপির সদস্য নুরুল ইসলাম মামুন। নুরুল ইসলাম মামুন ঘটনাস্থল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার একটি লাইভও করেন। লাইভে ইউএনও এর আলাপও শুনা যায়। বালু খেকোদের হামলার শিকার নুরুল ইসলাম মামুন বলেন, এখানে অবৈধ বালুখেকোরা দীর্ঘদিন থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে চলছে। এতে আমাদের গ্রাম ও আশপাশের গ্রাম নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। এ ব্যাপারে একাধিকবার বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। শনিবার ঘটনাস্থলে বালু উত্তোলন হচ্ছে দেখে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ফোন করে জানাই। তিনি আমাকে বলেন, ড্রেজার চালাবার অনুমতি নাই, তুমি ড্রেজারে গিয়ে ওদের সাথে আমার আলাপ করিয়ে দাও। নুরুল ইসলাম মামুন গ্রামের মুরব্বিদের নিয়ে ড্রেজারে গিয়ে ইউএন ও ‘র সাথে কথা বলতে বললে-ড্রেজারে থাকা লোকজন ক্ষেপে গিয়ে তার উপর হামলা চালায়। হামলার শিকার হয়ে তিনি আবারো ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি বালাগঞ্জে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ মন্ডলকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ মন্ডল বলেন, বালু উত্তোলনের ঘটনা সঠিক। এখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে৷ তবে, বালু উত্তোলনের জন্য উত্তোলনকারীদের মৌখিক অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি প্রজেক্টের প্রয়োজনে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ৩-৪দিন পরে প্রজেক্ট শেষ হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, প্রজেক্ট শেষে এখান থেকে তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আইন বলে-উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বালু বা মাটি উত্তোলন ও ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে হামলার শিকার নুরুল ইসলাম মামুন মামলা দায়েরের জন্য থানায় অবস্থান করছেন বলে জানান। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তোলিত বালু ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার চাঁন্দপুর এলাকায় বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্টক করে বিক্রি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে সরকারি অনুমোদন ব্যতিত এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নদী সড়ক ভাংগন সৃষ্টি হচ্ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন বালাগঞ্জ বা ফেঞ্চুগঞ্জ কেউ ই কোনরূপ অভিযান পরিচালনা করছেন না অজ্ঞাত কারনেই। চলমান করোনা পরিস্থিতেও বালুখেকোদের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না কুশিয়ারা নদী। লকডাউনের সময়েও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুর নিচেই দিন রাত ভিড়ছে বালু বোঝাই জাহাজ(ভলগেট) সেখান থেকে আনলোডিং বোট দিয়ে বালু খালাস করে পাইপ দিয়ে নেওয়া হচ্ছে পাশের জমিতে। ডাম্পিং করা হচ্ছে পরিবেশ আইন না মেনেই। এছাড়াও, ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের চান্দপুর-মিরগঞ্জ সংযোগ স্থানে সড়কের উপর দিয়ে বালুর পাইপ নেওয়ার ফলে যানবাহন চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুশিয়ায়া নদী এলাকায় সরকারি কোন বৈধ বালু মহাল নেই।সুলতানপুর-ভেলকোনায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদী বালু মহালও হাইকোর্টে পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)’র দায়ের করা মামলায় লিজ বাতিল করা হলেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি স্থানীয় প্রশাসনকে। যার ফলে কুশিয়ারা ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি, মানিকোনা সুলতানপুর, চাঁনপুর বালাগঞ্জ জিসি সড়কের কয়েকটি অংশ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য বারের মত রাতের আধারে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে পরিবেশের তোয়াক্কা না করে  চান্দপুরে বালু ডাম্পিং করার ফলে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। বালু ফেলার কারনে উর্বরতা হারাচ্ছে আশপাশের জমিও। এছাড়াও ডাম্পিং এলাকায় শক্তিশালী এক্সেবেটার দিয়ে কাজ করায় মাটি দুর্বল হয়ে ধ্বসে পড়লে বিপদ ঘটতে পারে পাশের রাজ ফিলিং স্টেশনে। এছাড়াও এসব কাজের জন্য নেই পরিবেশের অনাপত্তিপত্র। পাশাপাশি সেতুর নিচ দিয়ে পাইপ স্থাপন করায় যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন। সরেজমিনে দেখা যায় বিক্রি করা বালু ড্রাম ট্রাক দিয়ে পরিবহন করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সিলেট-বালাগঞ্জ যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি। খোজ নিয়ে জানান যায়, বালু চক্রে জড়িত রয়েছেন উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউপি সদস্য আব্দুল কালাম, চান্দপুরের খালেদ আহমেদ, ও শেরপুরের শেখ  লিটন আহমেদ সহ প্রভাবশালী একটি চক্র। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল হক বলেন, বালাগঞ্জে বালু উত্তোলনের ব্যপারে অবগত নন। এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোন তথ্য নেই।

Loading