আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর উজির হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ ২ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

প্রকাশিত: ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২

ঢাকা জেলার আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর উজির হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ ০২ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। র‌্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতার যেমনঃ সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা রহস্য উদঘাটনসহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে যার প্রেক্ষিতে সার্বিক মূল্যায়নে ২০২১ সালে র‌্যাব-৪ ক্লুলেস অপরাধ রহস্য উদঘাটনে প্রথম স্থান লাভ করে। এছাড়াও র‌্যাব-৪ কর্তৃক ২০-৩০ বছর যাবত বিভিন্ন মামলার পলাতক যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুদ্ধর্ষ খুনী, ডাকাত ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’কে ১৯ বছর পর, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)’কে ০৭ বছর পর, ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯)’কে, চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতি’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)’কে গ্রেফতার করা হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার চাঞ্চল্যকর সাইদুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী নান্নু শেখ @ নূরনবীকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এবং র‍্যাব-৬ এর একটি যৌথ চৌকস আভিযানিক দল গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখ দুপুরে ঝিনাইদাহ সদর থানাধীন আরাপপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর উজির হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ এজাহারনামীয় নিম্নোক্ত ০২ জন আসামীকে মামলা রুজু হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়ঃ ক। মোঃ টুটুল @ সবুজ (৩০), জেলা- কুষ্টিয়া। খ। মোছাঃ জেসমিন (২৫), জেলা- কুষ্টিয়া।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ আশুলিয়া থানাধীন পূর্ব ডেন্ডাবর এলাকার জনৈক আসলামের বাড়িতে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় অজ্ঞাতনামা একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার লাশটি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ উজির (৫৫) এর বলে শনাক্ত করে। ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ভিকটিম উজির (৫৫) নিজ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মুদি ও সারের ব্যবসা করে আসছিলো। একই এলাকার আসামি মোঃ টুটুল @ সবুজ (৩০) পেশাগত কাজে ঢাকার আশুলিয়া থাকতো। আসামী টুটুল যখনই গ্রামের বাড়ি যেত ভিকটিম উজিরের সাথে সখ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতো। ঘটনাচক্রে আসামী টুটুল অপর আসামী জেসমিন (২৫) এর সাথে প্রেমে জড়িয়ে পরে। ভিকটিম উজির তাদের এর সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় নেতিবাচক কথা বলে এবং এবং আসামী টুটুলকে বিবাহ করতে নিরুৎসাহিত করে। তথাপিও আসামীরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং ভিকটিম উজিরের উপর বিভিন্নভাবে আক্রোশ তৈরি হয় এই দম্পতির। গত জুলাই ২০২২ মাসে আসামী টুটুল গ্রামের বাড়িতে গেলে ভিকটিম উজির আলীর একটি মোবাইল চালানোর কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বেশকয়েকবার ভিকটিম উজির আসামীর কাছে তার ফোনটি ফেরত চায়। এক পর্যায়ে আসামী টুটুল ভিকটিমকে মোবাইল ফেরত নেয়ার জন্য আশুলিয়ায় তার বাসায় বেড়াতে আসতে বলে। ভিকটিম সরল মনে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ টাকার আশুলিয়ায় টুটুল-জেসমিন দম্পতির বাসায় আসে। ভিকটিম আসামীদের বাসায় আসলে পূর্ব থেকে মনোমালিন্য এবং মোবাইল ফেরত চাওয়ার জেরে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামী টুটুল ও জেসমিন দম্পতি ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং রাতের আধারে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পরপরই আসামীরা আত্মগোপনে চলে যায়। উক্ত ঘটনায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়াসহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রæতিতে র‌্যাব-৪ আসামীদের গ্রেফতারে ছায়াতদন্ত শুরু করে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় আসামীরা ছদ্মবেশে ঝিনাইদহ সদর থানাধীন আরাপপুর এলাকায় অবস্থান করছে যার প্রেক্ষিতে র‍্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল র‍্যাব-৬ এর সহযোগীতায় আসামীদের গ্রেফতার করে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় ভিকটিম উজির’কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

৪। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Loading