সকলে জুম্মোজাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের নিয়ে ভাবুন

প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১২, ২০২২

প্রিয়দর্শী চাকমা

পাহাড়ের বর্তমান রাজনৈতিক,ধর্মীয়,সামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট হতে উত্তরণের জন্য সবাইকে যার যার অবস্থান হতে সবাইকে ভাবার যথেষ্ট সময় এসেছে, এখনি যদি আমরা সকলে চুপ করে বসে থাকি নতুন প্রজন্মদের কথা না ভাবি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা অন্ধকারে তলিয় যাবো নতুন প্রজন্মরা আমাদের উপর দোষ চাপাবেন তারা বলবেন আমরা কিছুই করে যাই নাই। এ প্রসঙ্গে আমি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো।আমরা কিন্তু সকলেই চাই আমরা সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে যাই।কেউ চায়না পিছে পড়ে থাকতে, তাহলে আসুন আমরা আলোচনা করি কিভাবে আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সুন্দর নতুন প্রজন্ম উপহার দিতে কিভাবে সমাজে মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারি?
১/ প্রথমে আমরা নজর দেবো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে।
২/ দ্বিতীয়ত নজর দেবো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দিকে।
৩/ তৃতীয়ত নজর দেবো সংবাদ পত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দিকে।
৪/ চতুর্থত নজর দেবো যারা টুকিটাকি লেখালেখী করে সে হতে কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক,ব্লগার,মুক্ত চিন্তার লোক,সমাজ সেবক,রাজনৈতিক নেতা কিংবা বুদ্ধিজীবী যেই হোক না কেন।
এবার আসুন আমরা মূল পর্বে চলে যাইঃ
১/ প্রথম টার্গেট হবে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পারে প্রাথমিক,নিম্ন মাধ্যমিক,মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক,উপরে বিশ্ব বিদ্যালয় লেভেল পর্যন্ত। যারা শিক্ষকতা করেন প্রথমে তাদের একটু দায়িত্বটা বেশী কাঁধে নিতে হবে কারণ উনারাই হলেন আসল মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষকের কাছে না শিখে কেউ ছাত্র হতে পানেনা। সুতরাং শিখতে হলে ছাত্রদের শিক্ষকের কাছে অবশ্যই যেতে হয় মানুষের মতো মানুষ হতে। হ্যা আপনিই একজন শিক্ষক মানুষ গড়ার মহান কারিগর আপনাকে অবশ্যই হতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক আপনি শুধু ছাত্রদের পাশ করিয়ে দিয়ে বছর বছর নতুন ক্লাসে প্রমোশন পাইয়ে দিলে হবে না। আপনাকে অবশ্যই ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা, আদর্শ,ন্যায়পরায়ণতা,মহানুভবতা,শততা,ন্যায়নিষ্ঠা,সাধুতা,সত্যতা,পরোপকারীতা,সমাজ হিতৈষী,ধার্মিকতা,মৈত্রী,দয়া,মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমর ক্ষমাগুণ,শিক্ষা গ্রহণের গুণ এবং পরিবর্তিত হওয়ার গুণ সমূহ ছাত্র ছাত্রীদের শেখাতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মরা যদি এ সব গুণের অধীকারী হয়ে গড়ে উঠে সকলে প্রজ্ঞাবান হয় সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মানে আমরা দ্রত এগিয়ে যেতে বাধ্য। আমরা আবো এক শিক্ষিত শৃংখলিত আদর্শ জুম্মো জাতি।
২/ এবার আসি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দিকে।আমাদের জুম পাহাড়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন ঘটেছে।চারিদিকে মন্দির,কিয়্যাঙ/বিহার,উপাসনালয়ের ভরপুর হিলের মাটি। এখন ধর্ম আচরণ প্রতিপালনের ক্ষেত্র ব্যাপক প্রসারিত। যদিও চারিদিকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সরসারি আমরা কুন্তু সেভাবে ধর্মীয় দিক দিয়ে আমরা অগ্রসর হতে পেরেছি বলে আমার মনে হয় না।জানি না এ ব্যর্থতা কার ধর্মীয় গুরুদের না সাধারণ আম জনতার? এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে – আপনি যেই ধর্মর ধর্মীয় গুরু হন না কেন আপনার কিন্তু সমাজের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য অনেক ও ব্যাপক। আপনি যদি মনে করে থাকেন শুধু স্বর্গ নির্বাণ লাভই আপনার একমাত্র কাজ তাহলে আপনাকে এ ধরাধামে কউ স্মরণে রাখবে না।আপনি একজন ধর্মীয় গুরু/কিংবা একটা বিহার/মন্দিরের অধ্যক্ষ আপনি শুধু বিহারের অধ্যক্ষের দায়িত্বটা কোন রকম পালন করে যেতে পারলেই হবে না আপনাকে ধর্ম গুরুর পাশাপাশি একজন আদর্শ শিক্ষক ও জনবান্ধ সমাজ সেবক হতে হবে। আপনার কাছে প্রতিদিন অনেক দায়ক দায়িকার সমাগম হয়, অনেক কোমল মতি ছাত্র ছাত্রীরা আপনার মন্দির/ বিহারে যায় ওদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নীতি আদর্শ,ন্যায় নিষ্ঠা,সত্যবাদিতা,বিনয়ী, সুন্দর আদর্শ,শৃংখলা,নিয়মানুবর্তিতা, শততা,ন্যায়পরায়ণতা,কুশল কর্ম সমূহ শিক্ষা দিন বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশের শৃংখলা আচরণ গুলি শিখিয়ে দিন যাতে তারা সুশৃংখল সুন্দর সমাজ নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে তারা যাতে খারাপ পথে ধাবিত না হয়,তারা যেন ধর্মচ্যুত না হয়,তারা যেন জাতির প্রতি অনুগত হয়,সুশীল,দানবীর তারা অকুশলকে যেন সবসময় না বলে।এভাবে যদি আপনারা সকল ধর্মগুরুরা একান্ত নিজের দায়িত্ব মনে করে পরম মততায় কাঁধে তুলে নেন তাহলে অবশ্যই আমারা/ আমাদের নতুন প্রজন্ম পাহাড়ের বর্তমান বাস্তবতার রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে মুক্তি পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
৩/ এবার আসি তৃতীয় ধাপে আমাদের পাহাড়ীদের মধ্যে যারা সংবাদ পত্র এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াই কাজ করেন আপনারা সকলে পাহাড় বান্ধব হয়ে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের নিয়ে কাজ করুন যাতে বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট হতে আগামী প্রজন্ম মুক্ত হতে পারে এমন পজিটিভ সংবাদ পরিবেশন করুন তারা যাতে সেগুলি অনুকরণ করে তারা যেন সকলে ন্যায়পরায়ন হয়, আমরা যেন সুশৃঙ্খল সুন্দর আগারী প্রজন্ম পাই। সংবাদ এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হচ্ছে বর্তমান সময়ের শক্তিশালী গণমাধ্যম আপনারাই পারেন সমাজ পরিবর্তনের সুশীল ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। আপনারা একমাত্র পারেন মুহুর্তে সকল খবর বিশ্বের দরবারে পৌঁছিয়ে দিতে পাহাড় বিনির্মাণে আপানার হতে পারেন অগ্রগামী সৈনিক।
৪/ সর্বশেষ প্রস্তাবনায় আসা যাক এবারঃ
বর।তমান সেস্যাল মিডিয়া যুগে কিন্তু আমরা পাহাড়ীরা কোন অংশে পিছিয়ে। জুম পাহাড়ে পাহাড়ীদের মধ্য থেকে কিন্তু অনেক অনেক ক্ষুরধার দক্ষ লেখকের আর্বিভাব ঘটেছে। অনেকেই আছেন লেখালেখী জগতের ভাল ভাল প্রবন্ধ,কবিতা,গান, বিভিন্ন লেখালেখী নিয়ে নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছেন।
উনাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে আসুন আপনারা সকলে মিলে জুম পাহাড়ের বর্তমান হাবুডুবু নৈরাজ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের কথা ভেবে আমরা আপনাদের সকলেই নতুন প্রজন্মকে এসবের থেকে বাঁচাতে উত্তরণের পথ খুঁজে দিতে হবে।আপনারাই পারেন সঠিক সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করে লেখনীর মাধ্যমে আপামর পাহাড়ী সমাজকে রক্ষা করতে। আপনারা উদ্বুদ্ধ করুন লেখনীর মাধ্যমে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এবং ধর্মীয় গুরুদের প্রতি যে অনুরোধ গুলি করে ছিলাম সে সম্পর্কে পজিটিভ হয়ে গঠলমূলক বেশী বেশী সুপরামর্শ মূলক লেখালেখী করুন। আপনাদের দক্ষ লেখনী হাতিয়ার এনে দিতে আগামী প্রজন্মের বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে মুক্তির স্বাদ।
উপসংহারঃ
আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের নিয়ে নিখুঁত চিন্তা ভাবনা করি তাদেরদকে আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য সুন্দর আগামী বিনির্মাণে একযোগে কাজ করে যাই তাদের জন্য সুন্দর পৃথিবী সুন্দর সুবুজের সমারোহ সুন্দর পার্বত্য চট্টলা রেখে যাই। আসুন আমরা আগাম প্রজন্ম সেভাবে গড়ে তুলি তারা যাতে সকলে মানবিক,,জ্ঞানবান,সহমর্মিতা ,সত্যবাদী,ন্যায়পরায়ণ,কৌশলী,বনয়ী,ক্ষমাপরায়ণ,ধার্মিক,সৎ সাহসী,ন্যায় নিষ্ঠাবান,উদারতা,দক্ষতা,সুশৃঙ্খল, মহৎপরায়ণ,জ্ঞানবান,ধনবান,পূণ্যবান, বিদ্যাবন,তেজস্বী,যশস্বী হয়ে সকলের নিকট আদরণীয় হয় এমন মহতী গণাবলীর আদর্শিত হয়ে নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলি। আমরা যদু এমন প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি তারা কখনও অন্যায় করবেনা অন্যায় কাজ করতে তাদের হাত কাঁপবে, তারা পাপকর্ম করতে পারবে না তাদের বিবেক তাদের বাধা দিবে। তারা আর ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া বিবাদ করবেনা তারা একে অপরকে শত্রু মনে করবেনা, তারা কখনও ভাইয়ের বুকে গুলি চালানোর জন্য অস্ত্র তুলে নিবেনা ফলে জুম্মজাতি পাবে এক আদর্শে আদর্শিত সভ্য সুশিক্ষিত নতুন এক জুম্মজাতি। আসুন সমরা সকলে আওয়াজ তুলি আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি চাইনা,আমরা আমাদের মাঝে যুদ্ধ বিগ্রহ চাইনা,আমরা শান্তি চাই, আমরা সুন্দর সভ্য সমাজ চাই, আমরা সুন্দর আগামীর পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই।
হে স্যোসাল জগতের বন্ধুরা আপনারা যদি সকলে আমার সাথে একমত হন তাহলে পোস্টটি সকলে শেয়ার করে সকলকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করুন পাহাড়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করুন।আমি ভালবাসি আমার পার্বত্য চট্টলাকে, আমি ভালবাসি আমার জাতিকে,আমি ভালবসি আমার ভাষাকে,আমি ভালবাসি আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে। আমি এদেশের নাগরিক, আমি আমার নাগরিক অধিকার নিয়ে সচেতন আমি আমার সকল অধিকার বিনাবাধায় ভোগ করতে চাই কারণ আমি চাকমা হলেও এদেশের একজন নাগরিক। জাতিতে আমি চাকমা আমি নই উপজাতি যারা আমাকে উপজাতি তকমা দে তাদের আমি ঘৃণা করি তাদের মুখে আমি থু থু মারি।

Loading