আশুলিয়ায় গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সমিতি

প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ , মার্চ ২২, ২০২২

সাভারের আশুলিয়ায় প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে সটকে পড়ার অভিযোগ উঠেছে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে একটি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে। এফডিআর ও সঞ্চয়ের লাখ লাখ টাকা হারিয়ে দিশেহারা গ্রাহকরা। সমিতির মালিকানাধীন জায়গাটিও গোপনে বিক্রি করে মালিকপক্ষ পালিয়ে যাওয়ায় পাগলপ্রায় তারা।
শনিবার আশুলিয়ার জামগড়া ছয়তলা রূপায়ন মাঠ এলাকায় চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অফিসে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সমিতির জায়গাসহ টিনশেডের ভবনটিও মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল নামে এক ব্যক্তি ক্রয় করেছেন দেয়ালে এমন লিখন চোখে পড়ে। এসময় শতাধিক গ্রাহক লাভের আশায় জমানো অর্থ হারিয়ে সমিতির সামনে বিলাপ করছিলেন।

গত ১৫ মার্চ থেকে অভিযোগ ওঠা চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম, মালিক ও ম্যানেজার মাহমুদুল্লাহ ইকবালসহ ১৫জন মালিক পলাতক। তবে ভাইস চেয়ারম্যান রেজা কিবরিয়া রাজু মুঠোফোনের বার্তায় নিজেকে চেতনা পরিবার লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করেন। আর চেতনা মাল্টিপারপাস আলাদা প্রতিষ্ঠান বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

জামগড়া এলাকার মুদি দোকান ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান ও তার দুই ভাই মনিরুজ্জামান ও ওহিদুজ্জামান এই সমিতিতে ৭৮ লাখ টাকা রেখে এখন হাহাকার করছেন।

আনিসুজ্জামান বলেন, ৫ বছর মেয়াদে ২০২০ সালে তারা তিন ভাই ৭৮ লাখ টাকার এফডিআর করেছিলেন। এর মধ্যে তার ৩০ লাখ টাকা। প্রতি লাখে তাদের ১৮০০ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দুই দিন আগে জানতে পারেন জায়গা ও স্থাপনা বিক্রি করে সমিতির মালিকপক্ষ পালিয়েছে। এরপর ভাইস চেয়ারম্যান রেজা কিবরিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দিনাজপুরে তাদের প্রজেক্ট বিক্রি করে তার টাকা পরিশোধের প্রুতিশ্রতি দেন। কিন্তু শনিবার তার সাথেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কি করবেন আর পরিবারকেই বা কি জবাব দিবেন এমন চিন্তায় দিশেহারা তিনি।

গৃহিনী মোসলেমা আক্তার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে কান্না সামলাতে পারেননি। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট কইরা ৫ লাখ টাকা রাখছিলাম এই সমিতিতে। এখন তাদের কাউরেই ফোনে পাইতেছি না। সবার ফোন বন্ধ। সকাল থেকে তিনবার আসছি সমিতিতে। কিন্তু সমিতির দরজায় তালা দেখে সামনেই দাড়ায় আছি। কি করবো এখন? আমি আর কথাও বলতে পারছি না। যারা আমাদের কষ্টের টাকা নিয়ে এমন করল আল্লাহ যেন তাদের বিচার করে।
এ বিষয়ে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মালিকপক্ষের ভাইস চেয়ারম্যান রেজা কিবরিয়া রাজুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে প্রতিবেদক পরিচয়ে পাঠানো ক্ষুদে বার্তার উত্তরে তিনি লেখেন, আমি চেতনা পরিবার লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান। কিন্তু চেতনা মাল্টিপারপাসের নই। দুইটা টোটালি আলাদা প্রতিষ্ঠান। যে সমস্যাটা হয়েছে সেটা চেতনা মাল্টিপারপাসের।

সমিতির জায়গা ক্রয় করা মঞ্জুরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় তিনি সমিতির মালিকদের কাছ থেকে ৮.১৩ শতাংশ জায়গা কিনেছেন কিছুদিন আগে। তবে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার বিষয়টি তিনি জানেন না। কত টাকার বিনিময়ে এই সম্পদ কিনেছেন তাও বলতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, এরকম বিষয় আমার জানা নেই। তবে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

Loading