কোভিড-১৯ পরবর্তী শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা ও করণীয় – অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা

প্রকাশিত: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ , মার্চ ২১, ২০২২

গত ১৫ মার্চ ২০২২ দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এলো। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে এখন সরাসরি শিক্ষকের পাঠ গ্রহণ করছে। আমার প্রতিষ্ঠানটি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এবং সংযুক্ত এসএসসি ভোকেশনাল। কিন্তু ক্লাস শুরুর পর থেকে গত এক সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের কিছু আচরণগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এরি মাঝে দু’টি সালিশ বৈঠকও করতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষকরা দুশ্চিন্তায় আছি কখন একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান যে সকল সমস্যা অতীতে ছিলো
সে সকল সমস্যা গুলো করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকায় পূর্বের চেয়ে এখন প্রবল হয়ে উঠেছে । পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন আচরণগত সমস্যা ।
দীর্ঘদিন শ্রেণীকক্ষের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিচ্ছে , তা হলো –

@ শ্রেণিকক্ষে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা কম ।
@ শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ।
@সহপাঠীদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণের সমস্যা।
@ সহপাঠীদের মাঝে ছোট ছোট গ্রুপ, পুরো ক্লাসের সাথে যোগাযোগ কম।
@ সহপাঠীদের সাথে মতপার্থক্যকে ঝগড়া মারামারি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
@প্রতিষ্ঠানের সহপাঠীদের চেয়ে বাহিরে বন্ধুর সংখ্যা বেশি।
@ শ্রেণি কক্ষে বেশিক্ষণ মনযোগ ধরে রাখতে চায় না।
@ সাধারণ বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।
@ এলাকায় কিশোর গ্যাং এর সাথে যোগাযোগ রাখে।
@ প্রত্যেকের হাতে Android mobile phone আছে। অথচ অনলাইন ক্লাসের সময় তার ব্যবহার ছিল খুবই কম।
@প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোষাক পড়তে চায় না।
@ আছে ২ বছরের জ্ঞানের শূন্যতা।
@ মোবাইল গেইমে ব্যস্থ থাকায় Home work করে না।
@বিষয়টি ছেলে মেয়ে উভয়ের মাঝে কম বেশি লক্ষ্য করা যায়।

বিষয়টি নিয়ে আমার সহকর্মী এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অন্য দুই একটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথেও কথা বলেছি। তাঁরাও সমস্যাটি স্বীকার করেছেন। সকলেই মতামত দিয়েছেন, দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষা পরিবেশের বাহিরে থাকায় এ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।

এখন আমাদের উচিত দ্রুত অভিভাবকগণের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। অভিভাবকগণের উচিত তার সন্তান ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা এবং একটু সময় দেয়া। সব কিছু যেন শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের উপর ছেড়ে না দেন। মোবাইল ফোনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করা। যদিও আমি ও আমার শিক্ষকগণ এরি মাঝে দলগত কাউন্সিলিং শুরু করে দিয়েছি। তবে সরকারের উচিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিং পদ সৃষ্টি করা।

সর্বোপরি অভিভাবক, শিক্ষক -কর্মচারী, শিক্ষাকর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। মহামারী করোনায় আমাদের যা ক্ষতি করেছে তার চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষতি হবে ছাত্রদের আচরণগত পরিমার্জনার বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে।

লেখক, মোঃ গোলাম মোস্তফা
অধ্যক্ষ
রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুল,
নেত্রকোণা
২০.৩.২০২২

Loading