রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ণ , মার্চ ৯, ২০২২

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের কারণে দেশটি থেকে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তার দেশ রাশিয়া থেকে আর তেল আমদানি করবে না।

বাইডেন বলেন, ‘‘ইউক্রেনে পুতিন কখনও জয়ী হতে পারবেন না। জ্বালানির ওপরই রাশিয়ার অর্থনীতি নির্ভরশীল। আর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখন চাপের মুখে পড়বেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।’’ খবর বিবিসি, সিএনএন ও গার্ডিয়ানের

তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘোষণায় বাইডেন বলেন, ‘‘এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ যারা গ্যাস পাম্পে কাজ করেন তাদের আঘাত করেছে পুতিনের এই যুদ্ধ। গ্যাসের দাম বেড়েছে।’’

বাইডেন স্বীকার করেন, এই রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি মূল্য শোধতে হবে। পুতিন যখন ইউক্রেন সীমান্তে সেনা জড়ো করছিলেন, সেসময় থেকেই গ্যাসের দাম বাড়তে থাকে। সেসময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাসের দাম ৭৫ সেন্ট বেড়ে যায়। নতুন নিষেধাজ্ঞার এই পদক্ষেপে তা আরও বাড়বে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে গিয়ে বাইডেন বলেন, ‘‘আমি চেষ্টা করবো এ দাম বৃদ্ধি যতোটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ইউক্রেন কোনোদিন পুতিনের বিজয়ক্ষেত্র হতে দেব না। রাশিয়ার আগ্রাসনের ক্ষতি আমাদের সবাইকে শোধ করতে হচ্ছে।’’

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে থামাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র। সরাসরি যুদ্ধেও জড়াতে রাজি নয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এর অর্থ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবীকে ঠেলে দেয়া। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাই বড় অস্ত্র। অবশেষে রাশিয়াকে চরম শিক্ষা দিতে দেশটি থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোবাইডেন দেশটির সাধারণ জনগণের চাপে এমন সিদ্ধান্ত। তবে এতে করে তেলের বাজারে আগুন লাগবে। স্বয়ং বাইডেনই তার নিষেধাজ্ঞার ভাষণে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বাজারই তেল সরবরাহের অভাবে অস্থির হয়ে পড়বে। ফলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করতে গিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তো রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করে আত্মঘাতী হওয়ার পথেই এগোলো যুক্তরাষ্ট্র।

ইউক্রেনে রুশ অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় এটি হলো রাশিয়ার ওপর সবশেষ নিষেধাজ্ঞা। মার্কিন আইনপ্রণেতারা এ পদক্ষেপ নেবার জন্য বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার জবাবে বলেছেন, রোশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে জার্মানির সঙ্গে যুক্ত গ্যাসলাইন বন্ধ করে দেবে। তাতে গ্যাস সংকটে পড়বে ইউরোপ। অন্যদিকে তিনি হুশিয়ার করেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এরই মধ্যে রাশিয়ার বন্ধু নয় কোন কোন দেশ সে তালিকাও প্রকাশ করেছে রাশিয়া।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্যও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মঙ্গলবার আরো পরের দিকে একথা ঘোষণা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী কয়েকমাসে পর্যায়ক্রমে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে, এবং রাশিয়ার গ্যাস এর আওতায় পড়বে না।

রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে এবং রাশিয়াকে অর্থনৈতিক চাপে রাখতে দেশটি থেকে তেল না কেনার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বিকল্প বাজার খুঁজতে বাইডেন সৌদি আরব, ভেনেজুয়েলা ও ইরান থেকে তেল কেনার কথা ভাবছেন। তবে এ জন্য বাইডনকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। খোদ মার্কিন সিনেটররাই এর সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন ভেনেজুয়েলা বা ইরানের মতো দেশ থেকে তেল আমদানি বা তাদের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। কারও মতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরই তেল-গ্যাস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাহলে এসব দেশের কাছে যাওয়া কেন?

ভেনেজুয়েলার কাছ থেকে তেল আমদানির পরিকল্পনা কতটা ভালো, সিএনএনের এ প্রশ্নের জবাবে সিনেটর মার্ক কেলে বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস কেনাটা ঠিক হবে না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেই গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে।’’

সিনেট জিওপি ক্যাম্পেইনের প্রধান সিনেটর রিক স্কট বলেন, ‘‘রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করা উচিত আমাদের। তবে তেলের জন্য আমাদের ভেনেজুয়েলামুখী হওয়া ঠিক হবে না।’’

সিনেটর জো মানচিন বলেন, ‘‘ভেনেজুয়েলা আমাদের জন্য নয়। অন্য দেশ তাদের কাছ থেকে তেল কিনতে সক্ষম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করতে পারি। আমরা কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে কাজ করতে পারি। অন্য অনেক দেশে এ সুযোগ নেই।’’

মানচিন বলেন, ‘‘ভেনেজুয়েলা আর ইরান আমাদের জন্য সব সময়ই কঠোর। সৌদিরা কিছুটা নমনীয় হতে পারে। তবে আমাদের যা করা উচিত, তা–ই করতে হবে।’’

Loading