নেত্রকোণায় বিপর্যস্ত মহাদেও নদী পরিদর্শনে বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ , নভেম্বর ৬, ২০২১

নেত্রকোণার কলমাকান্দায় মহাদেও নদী ইজারা বহির্ভূত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত মহাদেও নদীরক্ষা কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর, ২০২১) উপজেলার সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাদেও নদীতে (৩৫.১৫ একর) বালুমহাল ইজারা প্রদান করা এ বালু মহালগুলো থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি ইজারার বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে অনুমোদন ছাড়াই ড্রেজারের মাধ্যমে এমনকি ভূ-গর্ভস্থ বালু ও পাথর আহরণ করার ফলে স্থানীয়দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন তিনি।

এসময় তিনি ইজারাকৃত স্থান ওঁমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও, বিশাউতি সন্যাসীপাড়া চিকনটুপ মৌজা এবং পাতলাবান, কান্দাপাড়া, বরুয়াকোনা, ডাকাইয়াপাড়াসহ আশে পাশের এলাকা পরিদর্শন করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, নেত্রকোণা জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান রঞ্জন, সম্পাদক এম. মুখলেছুর রহমান খান, বেলার হেড অব প্রোগ্রাম মোঃ খোরশেদ আলম, আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দিলওয়ার খান, বেলা’র কো-অর্ডিনেটর সায়েমা আফরোজ, বেলা’র টাঙ্গাইল বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ, স্থানীয়দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মি: লুয়ের নংমিন, মি: সুজন ম্রং, মি: প্রডাত নংউড়া, মি: এডভোকেট দিনেশ দারু, মি: বিপ্লব ঘাগ্রা,মি: অন্তিম জাম্বিল, মি: হযরত, মি: রনি, মো: আজিজ, মি: পিয়েন নংমিন, মি: আলফন্স নংমিন, মি: বিমল কুবি, মি: সুরেশ নংমিন, মি: বাবুল নাফাক, মি: পিটারসন কুবি পিটার, সুপার দিখার, সাধু পৌল নংমিন ।

এসময় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, শতাধিক ড্রেজার দিয়ে অননুমোদিত ও অবৈধ ভাবে বালু ও পাথর তোলার কারণে নদীতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটগভীরতার গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। নদী ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে নদীর দুই তীর, নদীসংলগ্ন ফসলি জমি, বসত বাড়ি, বাগান, গাছ। মারাত্মক ভাবে পানি সঙ্কটে পড়ছে এলাকাবাসী।

দিনে ও রাতে একইভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় শব্দ দুষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। স্কুল, কলেজগামী ছাত্রছাত্রী প্রচণ্ড শব্দে পড়ালেখা করতে পারেনা। এমনকি রাতে ঘুমাতেও পারছেনা এলাকাবাসী। বালুবাহী লরি কেড়েছে তাদের একমাত্র চলাচলের রাস্তাও। বহিরাগত শ্রমিকদের আনাগোনায় এলাকাবাসীর পারিবারিক ও সামাজিকনিরাপত্তা মারাত্মক ভাবে ক্ষুণ হচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে মহাদেও নদীটিও।

পরে মহাদেও নদীর ওঁমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও ও বিশাউতি বালুমহাল বাতিল করার দাবীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও মহাদেও নদী রক্ষা কমিটি-এর পক্ষ নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বরাবর এক স্মারক লিপি পেশ করেন (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মহাদেও নদীরক্ষা কমিটি সভাপতি লুয়ের নংমিন।

তাদের স্মারক লিপির প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেছেন নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান।

উল্লেখ যে, স্থানীয় এলাকাবাসী অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধির কাছে প্রতিকার চেয়ে পত্র প্রদান করেছে। এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় ৮নং রংছাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা ও আপনার বরাবর অননুমোদিত ও অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের প্রতিকার চেয়ে পত্র প্রদান করলেও অদ্যাবধি বালু ও পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ ও মহাদেও নদীরক্ষায় কোন পদক্ষেপ গৃহিত হয়নি।

Loading