সুদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় গরু নিল দাদন ব্যবসায়ীঃঅসহায় গরুর মালিক

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ১৯, ২০২১

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগন্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর (মলামারী) গ্রামের মোঃ জনাব আলীর ছেলে মোঃএবাদুল হক (৪৫) সুদের লাভের টাকা সময়মত পরিশোধ করতে না পারায় লাভের টাকার উপর জোর জবরদস্তি করে গরু নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেয় এক দাদন ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,একমাত্র সম্বল গরু দু’টি নিয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়ে আর্তনাদ করছেন পরিবারের সদস্যবৃন্দ। একমাত্র সম্বল হারিয়ে পথে বসেছেন গরুর মালিক। তিনি গরুর ব্যবসা করে বাবা, স্ত্রী -সন্তান সহ মোট ৯সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের সদস্য নিয়ে দিনাতিপাত করে আসছিলেন।গরু হারিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন তিনি। করোনা মহামারীতে গরুর বাজার বন্ধ হওয়ায় বড় সংসার নিয়ে চলা তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।ওই অবস্হায় দিশেহারা হয়ে টাকার জন্য দ্বিকবিদিকজ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটোছুটি করেও কোন ব্যবস্হা না হওয়ায় লাভের উপর টাকা চায় একই গ্রামের মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে দাদন ব্যবসায়ী লিটন মিয়ার( ৪৬) কাছে।তখন লিটন মিয়া প্রতি লাখে ৮হাজার টাকা লাভে নিতে হবে বলে জানায়।অসহায় এবাদুল নিজের এত বড় সংসার ও গরু ব্যবসা সক্রিয় করতে এমন কঠিন বোঝা না নিয়ে কোন উপায় ছিল না।অবশেষে উভয়ের সম্মতিতে ২০২০ সালের শেষদিকে এমন শর্তে লিটনের কাছ থেকে ২লাখ ৫০ হাজার নেয় এবং এবাদুল গরুর ব্যবসা শুরু করে।কিছুদিন পর দাদন ব্যবসায়ী লিটনকে তার পাওনার মূল টাকা থেকে ১লাখ টাকা দিয়ে দেয়এবাদুল।বাকী ১লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে প্রতিমাসে লাভ দিয়ে আসতে থাকে।এই অবস্হয় হঠাৎ করে গরু ব্যবসার অবনতি হলে এবাদুল সংসার চালিয়ে লাভের টাকা ১২০০০ প্রায় আড়াই মাস দিতে পারে নাই।তখন থেকেই এবাদুলের উপরে লাভ ওমূল টাকা পরিশোধের জন্য চাপ শুরু করেন লিটন।আর সেই চাপে এবাদুল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখা থেকে ১লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লিটনের মূল১লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।কিন্তু বাকী থেকে যায় লিটনের আড়াই মাসের লাভের ৩০,০০০টাকা।এই লাভের টাকা পরিশোধ করতে এবাদুলকে চাপ দিতে থাকেন লিটন।কিন্ত এবাদুল দিতে না পারায় বিষয়টি নিয়ে স্হানীয় ভাবে সালিশ বৈঠক হয়।আর সেই সালিশে সিদ্ধান্ত হয় লিটনের লাভের ৩০,০০০টাকা থেকে ২০,০০০এবাদুলের দিতে হবে। আর সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক লাভের ২০,০০০টাকা পরিশোধ ও ব্যবসার লাভের জন্য পূর্বে ক্রয় করা ২টি গরু স্হানীয় উচাখিলা বাজারে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য।

এবাদুল বিক্রির জন্য বাজারে গরু নিচ্ছে এমন খবর পেয়ে লিটন ও তার ভাইয়েরা সেই বাজারে গিয়ে এবাদুলের কাছ থেকে জোর করে গরু নিয়ে বিক্রি করে সব টাকা নিয়ে নেয়।এ সময় এবাদুল ও তার ছেলে বাধা দিলে তারা এবাদুলের ছেলেকে মারধর করে।এতে এবাদুল নিরুপায় হয়ে স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানায়।সেই সময় চেয়ারম্যানের সাথে বসা ছিলেন থানার এস আই উমর ফারুক।তখন চেয়ারম্যান বিষয়টি এসআই কে দেখার জন্য বলেন।তখন সেই এস আই এবাদুলকে সাথে নিয়ে গরুর বাজারে গিয়ে দেখে লিটন ও তার ভাইয়েরা চলে গেছে।তারপর এসআই উমর ফারুক বিষয়টি নিয়েএবাদুলকে আইনগত ব্যবস্হা নিতে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন।পরে এবাদুল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দু ‘পক্ষকেই থানায় আসতে বলে পুলিশ।তারপর ওসি তদন্ত থানায় বসে তাদেরকে নিয়ে আলোচনা করেও সমাধান দিতেপারেনি।এ অবস্হায় ভুক্তভোগী এবাদুল হতাশ হয়ে ময়মনসিংহ জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেন।বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এবাদুল বলেন,গরু ব্যবসার জন্য লিটনের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখে ৮হাজার টাকা লাভে ২ লাখ ৫০হাজার টাকা নিয়েছি।টাকা নেয়ার পর থেকেই তার লাভের টাকা পরিশোধ করে আসছি।এরই মাঝে লিটনের দেয়া মূল টাকা থেকে প্রথম ১লাখ টাকা পরিশোধ করেছি।কিন্ত বাকি থেকে যায় লিটনের আড়াই মাসের লাভের ৩০ হাজার টাকা। পরে সেই টাকা নিয়ে স্হানীয় ভাবে সালিশ করে ২০হাজার টাকা দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে বিধায় কয়েকদিন পূর্বে ক্রয় করা ২টি গরু বিক্রয় করতে বাজারে নিয়ে গেলে তারা স্হানীয় ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় জোর করে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়।তারপর পুলিশ সহ বিভিন্ন জায়গায় বিচার দিয়েও কোন বিচার পাওয়া যায়নি। তাই কোর্টে মামলা করেছি।এমন পরিস্থিতিতে আমি পরিবারের ৯ সদস্য কে নিয়ে সংসার চালাতে আর পারছি না।

এ বিষয়ে লিটন মিয়া বলেন,আমি এবাদুলের কাছে টাকা পাই,সেই টাকা চাইতে গেলে দিবে দিবে বলে বারবার তারিখ করে ;কিন্তু পরিশোধ করেনি।তবে গরু বিক্রয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার গরু আমি বিক্রি করেছি।ঈশ্বরগন্জ থানার ওসি (তদন্ত)জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন,বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ থানায় এসেছিল কিন্তু কারো কোন সঠিক তথ্য-প্রমাণ না থাকায় সমাধান সম্ভব হয় নি।পরে শুনেছি একটি পক্ষ কোর্টে মামলা করেছে।

Loading