শামীমের আহবানে

প্রকাশিত: ৯:৪০ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১৮, ২০২১

শামীমের আহবানে
সামছুদ্দোহা ফরিদ
আমি বন্ধু বলি আর সহকর্মীই বলি, শামীমের মা অসুস্থ্যতার জন্য ময়মনসিংহ সায়েম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর দূটো কিডনি ডেমেজ, ডায়ালসিসের মাধ্যমে তাঁর জীবন বাঁচার মাধ্যম হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁর কোন ভাবনা নেই। মা তার বেঁচে থাকুক এই তার কেবল প্রয়াস। উদ্বিগ্ন, দুঃচিন্তা ও অনিশ্চিয়তা তার ক্লান্ত শ্রান্ত দেহকে নিরস করতে পারেনি, দমিয়ে রাখতে পারেনি। কেহ তার পাশে নেই। কাছের মানুষ গুলো সরে পড়েছে। তার গোটা পরিবার মাতৃসেবায় নিয়োজিত যা এ পৃথিবীর এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হঠাৎ করে ফোন, ফরিদ,ময়মনসিংহ আসলে আমি একটু সাহস পেতাম। কি আর করা বিপরীত কোন প্রশ্ন না করে বিকালের ট্রেনে ময়মনসিংহ আসলাম। বন্ধুর মাকে বাকহীন,প্রায় অনুভূতিহীন দেখে আমি ভীত বিহ্বল হয়ে পড়লাম। ১৩ই আগস্ট দিবাগত রাত আমার জীবনে ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। মায়ের সামান্য কাতরানোর শব্দে এ কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে সারারাত নিদ্রাহীন বিচরণ আমার ভিতরে ও নিজ মাতার প্রতি অনভূতির শিহরণ জাগিয়েছিল। আমিও জাগ্রত অবস্থায় তার অনভূতির গভীরতা আমার হৃদয় দিয়ে পরিমাপ করলাম। আমার অভিজ্ঞতা শুধু একদিনের কিন্তু শামীমের এমনি প্রতি রাত। আমার শুধু প্রার্থণা আল্লাহ শামীমকে যেন শক্তি দেন,সাহস দেন। আমিন।
১৪ই আগস্ট শামীম রক্তের জন্য হন্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের পর আমাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে লিফটহীন সপ্তম তলায় আরোহন করলাম। রিপোর্ট আদান প্রদানের পর ডাক্তাররের কথায় আশ্বস্ত হল শামীম। হার্টের রোগী শামীম। দৈহিক ঘাটতি থাকতে পারে তার কিন্তু মনের জোর একেবারেই অনড়। থামবার পাত্র সে নয়, মা বলে কথা।
অবশেষে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তার নিকট হতে বিদায়। পা গুলো যেন আগাচ্ছিল না। অগত্যা কি আর করা পরের দিন ১৫ই আগস্ট, জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান বলে কথা। স্টেশানে পৌঁছে দেখি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস স্টেশনে দাঁড়ানো। কাউন্টারে টিকিট চাইতেই মহিলা টিকিট মাস্টারের নেতিবাচক উক্তি,”টিকিট নাই”। গেইট দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা কাপড় পরিহিত গেইটের দুধারে দাঁড়ানো ব্যক্তি টিকিটের মূল্য দুইশত দশ টাকা চাইল। ভাড়া অধিক বলাতেই আমি কেন বলাতে তারা তিক্তভাবে বলল, “আপনি সরতে পারেন”। মন কষ্টে শামীম কে ফোন দিলাম তখন আমি স্টেশানের অন্য এক গেইটে। সে বলল,আপনি উঠে পড়েন। আমি সাহস নিয়ে উঠলাম। ভাবলাম টিটি আসলে টিকিট টা ট্রেনেই সেরে নিব। একজন আমাকে বসার সুযোগ করে দিল অন্য জন এসে টাকা টা নিয়ে নিল ঠিক কিন্তু টিকিট পেলাম না। একজন উত্তরে বলল, এ ট্রেনের কোন টিকিট হয় না। অবশেষে বুঝলাম আমিও অন্যায় কাজটি করেছি।
আমি নেত্রকোণা পৌঁছলাম ঠিক কিন্তু আমার উদ্বিগ্নতা কমেনি কারণ রোগী ভাল অবস্থায় ছেড়ে আসেনি। শামীমের রোগী নিয়ে ব্যস্ততার জন্য ফোন দেওয়া টা ও কষ্ট মনে হত। কারণ সে মুহূর্তে যদি তার মার কাছে ব্যস্ত থাকে।

Loading