পতাকায় রক্তের ছিটেঁ

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১৪, ২০২১

রাশেদুল আজীজঃ

শোষণ-বঞ্চনা,দাবী,সংগ্রাম,জেল-জুলুম পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। নিরস্ত্র বাংগালী প্রাণ গুলো একান্ত তাদের দাবীর সমর্থনে এককাতারে দাঁড়িয়ে জানকে হাতের মুঠোয় নিয়ে শহর থেকে গ্রাম,পাড়া থেকে ঘর,ঘর থেকে প্রতিটি জন একটি শপথে ইস্পাত দৃঢ় মরন কামড় হানে পাকিস্তানি অবিবেচক শাসক গোষ্ঠীর ক্ষমতায় __“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”সেই সময় পৃথিবী ভাগ ছিল শোষক আর শোষিত শ্রেণিতে। মানুষের বেচেঁ থাকার অধিকার,দেশের সার্বভৌমত্ব, মানুষের কৃষ্ঠি সংস্কৃতি, ধর্ম সবই শাসক শ্রেণী তাদের মর্জি মাফিক চলতে মানুষের উপর তাদের প্রভুত্ব কায়েম করে ছিল।মানুষ যখন মুক্তির জন্য এদিক ওদিক ছুটাছুটি আর হাহাকার করছিল।ঠিক তখনই মানুষের প্রাণের মানুষ তাদের অতিআপন,বন্ধুরূপে হাজির হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালী দাবী আদায়ে অটল,যাকে জুলুম-নির্যাতনে রক্তচক্ষু টলাতে পারে না। বাংলার মানুষকে একটি সোনার দেশ উপহার দিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ইতিহাসের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পৃথিবী যখন দু’ভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু শানিত কন্ঠে শোষিতের পক্ষে উচ্চারণ করেছিলেন মানুষের বেচেঁ থাকার কালজয়ী বাসনা স্বাধীনতা। মানুষ যখন তার ন্যায্য অধিকার,বেচেঁ থাকার নূন্যতম চাহিদা মানুষরূপী হায়নারা কেড়ে নিতে ছিলো,গণ মানুষের নেতা বাংলার পরম ভালবাসার স্ফুলিঙ্গ শহীদ শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলার মানুষকে তার চাহিদা, বেঁচে থাকার স্বাদ ঘরে ঘরে পৌছেঁ দিতে জীবনের সুবর্ণ সময় সংগ্রাম মুখর ছিলেন। বাংলার মানুষ যখন একপেশে শোষন আর বঞ্চনার স্বীকার হন।মানুষ যখন নিজ মাতৃভূমিতে অধিকারহীন,মত প্রকাশে যখন বাধার প্রাচীর, কর্ম সংস্থান,ব্যবসা-বাণিজ্য যখন বাংলার ন্যায্যতা তলানি গিয়ে টেকে।মানুষ যখন দিশেহারা পংকপালের মত দ্বিগবিদ্বিক ছুটে চলছে ঠিক তখনই মানুষে-মানুষে বিবেদ ভুলে ঐক্য করে একই সুতায় গেথেঁ ঘরে ঘরে দূর্গ করে দীর্ঘ সংগ্রামের শপথ নিয়ে ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫।বাংগালী জাতির ইতিহাসে রক্তাক্ত স্মৃতিময় একটি দিন।মর্মান্তিক শোকে মুহ্যমান একটি দিন।যারঁ দূরদর্শী নেতৃত্ব ও উদাত্ত আহ্বানে ১৯৭১ সালে সমস্ত বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল।একটি কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তে মানুষ পাগলের মতো নিজের জীবন উৎসর্গ করছিলেন।সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃংখল ভেঙে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিল। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।বাঙালি সেই প্রানের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এইদিন স্বপরিবারে শহীদ করে,সূচনা হয়েছিল ইতিহাস বিকৃতির। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট একটি তারিখ নয়। বঙ্গবন্ধুকে শহীদ করে যে নির্মমতা ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে তা দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন।সেদিন সেই ক্ষনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল পুরো দেশ ও জাতি এমনকি প্রাণিকুল পর্যন্ত। একই সাথে হতবাক হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব বিবেক।সেদিন কেদেঁছিলো বাংগালী, কেদেঁছিলো সারাবিশ্বের সভ্য মানুষ। বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন একজন রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধু। যে মহান নেতা বাংগালী জাতির স্বাধিকার ও অধিকার আদায়ের দীর্ঘ আন্দোলন আর সংগ্রামে,তাঁর ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ১৪ বছর কেটেছে জেলখানার অন্ধকার সেলে এবং তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈর শাসক গোষ্ঠীর অপরাজনীতি আর অত্যাচার নিপীড়নে কেটেছে বছরের পর বছর।কখনও এ ক্ষন জন্মা সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ বাংগালীর অহং কে গণ মানুষের কাতার থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন এদেশের প্রতিটি মানুষের অতি আপনজন।জাতি,ধর্ম-বর্ণ,শ্রেণী, সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রত্যেক বাংগালীর জন্যই ছিল তারঁ অকৃত্রিম দরদ। অর্থনীতিবিদ ও মানবতাবাদী দার্শনিক অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছেন,”বঙ্গবনধু থেকে পৃথিবীর সব মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে এবং তিনি পূর্বে যেমন প্রাসঙ্গিক ছিলেন,আজও তেমনই আছেন,ভবিষ্যতেও তা-ই থাকতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শহীদ করার মাধ্যমে এমন এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বকে বাংলাদেশের মানুষ হারালো যারঁ চিন্তা ও চেতনা জগৎ জুড়ে ছিলো এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, শৃংখল থেকে মুক্ত করে মানুষকে মানুষের আসনে বসানো দুর্নীতি ও অপসংস্কৃতির আর হীনমন্যতার বিষবাষ্প থেকে দেশের ভূ-খন্ডকে অন্যন্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা। বঙ্গবন্ধু জাতির উত্থান পতনের সুখ-দুঃখের নিজের জীবন একাকার করেছিলেন। তারঁ শহীদের রক্তে আমাদের লাল সবুজ পতাকার ছিটেঁ পড়েছে। আজকের দিনে আমরা বলতে পারি বঙ্গবন্ধু তখনও কোটি প্রাণের মণিকোঠায় জাগ্রত। তাঁর আদর্শ, রাজনৈতিক পরিকল্পনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে না পারি! তারঁ আত্মা আমাদের অভিশাপের চাদরে ঢেকে দিবে।

Loading