বাজারে ভালো দাম পেয়ে খুশি পাটচাষীরা

প্রকাশিত: ৫:০৯ অপরাহ্ণ , আগস্ট ৮, ২০২১

বাজারে ভালো দাম পেয়ে খুশি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাটচাষীরা। পানি না থাকায় পাট গাছ জাগ দিতে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তারা।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ঝালুরচর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ঝালুরচর বাজারটি যমুনার একটি শাখা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। পাট বাজারের পূর্ব পাশে দেওয়ানগঞ্জ সানন্দবাড়ী সড়ক। দেওয়ানগঞ্জ শহর থেকে ঝালুরচর বাজারের পাট হাটে যেতে সড়কের দুই পাশে ডোবা নালায় চোখে পড়ে পাট গাছের জাগ। আবার অনেক জায়গায় সড়কের দুই পাশে নারী ও পুরুষ মানুষকে পাট শুকানোর কাজ করতেও দেখা যায়। এ অঞ্চলের পাট চাষীরা পাট বিক্রি করতে আসে ঝালুরচর বাজারে। এ বাজারে আসা সোনালী রঙের পাট দেখে মনে হয় পাট সত্যি সোনালী আঁশ।

ঝালুরচর বাজারটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় অনেক পাটচাষী নৌকায় করে সোনালী রঙের পাট নিয়ে আসে। আবার অনেকে অটোরিকশা, ভ্যান, ভটভটি দিয়ে পাট নিয়ে আসে। নদীতে যেমন সারি সারি পাটের নৌকা, তেমন সড়কে সারি সারি পাটের অটোরিকশা, ভ্যান, ভটভটি। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। পাট চাষে পরিশ্রম কম। খরচ কম। এবার বাজারে ভালো দামও পেয়েছে পাট চাষীরা। বাজারে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। তবে বন্যা ও বৃষ্টি কম থাকায় পাট গাছ জাগ দিতে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন পাটচাষীরা।

পাটচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাট চাষ করে তিন মাসের মধ্য পাট ঘরে তোলা যায়। কম সময়ে, কম পরিশ্রমের ফসল পাট। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। অপরদিকে প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়। এবার বাজারে পাট মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার বন্যা না হওয়ায় পাটচাষীদের পাটের কোন ক্ষতি হয়নি। পাট চাষের খরচ বাদ দিলে ভালো লাভ পেয়েছে পাটচাষীরা। পাটের ভালো ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি ঝালুরচর বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা পাটচাষীরা।

হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে দুই দিন ঝালুরচর বাজারে হাট বসে। এ হাটে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকার পাটচাষীরা পাট বিক্রি করতে আসেন। পাটের মান ভালো হওয়ায় বিভিন্ন জেলার পাট ব্যবসায়ীরা এ হাটে পাট কিনতে আসেন। হাটে প্রায় ৫ শতাধিক পাটচাষী পাট বিক্রি করতে আসেন। প্রতি হাটে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মণ পাট বিক্রি হয়ে থাকে। মান ভেদে ২ হাজার ৬শ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাট বিক্রি হচ্ছে। কম পরিশ্রম, কম খরচে বেশি লাভের ফসল পাট। অন্য ফসলের তুলনায় পাট চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে পাটচাষীরা।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার হরিচন্ডী এলাকার পাটচাষী হাফেজ মিজানুর রহমান জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ২ বিঘা জমিতে প্রায় ২৪ মণ পাট হয়েছে। তিনি সেই পাট নৌকায় করে বাজারে নিয়ে এসেছেন। প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮শ টাকা দরে বিক্রি করেছে। এতে তার অনেক লাভ হয়েছে। কম খরচে, কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় খুব খুশি তিনি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের দপরপাড়া এলাকার পাটচাষী আবুল কাশেম জানান, সোয়া ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ওই জমিতে ১৮ মন পাট হয়েছে। প্রতি মন ২৯০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ বাদে ৩৭ হাজার ২শ টাকা লাভ হয়েছে। পাট বিক্রি করে খুব খুশি তিনি।

একই ইউনিয়নের কান্দিরগ্রাম এলাকার পাটচাষী মো. আব্দুল করিম জানান, এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে পাটের দামও ভাল। তবে পানি না থাকায় পাট গাছ জাগ দিতে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন পাটচাষীরা। পানি থাকলে পাটের মান আরো ভালো হতো। বাজারে পাটের আমদানিও বাড়তো।

উপজেলার ঝালুরচর বাজারের পাট ব্যবসায়ী শহির আলী জানান, এ অঞ্চলের পাটের মান ভালো। আমদানিও ভালো। বাজারে পারিপার্শ্বিক কোনো ঝামেলা নেই। তবে নদী ভাঙনের কারণে পাটের হাটের অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। জায়গা সঙ্কটের কারণে চাটি বসিয়ে পাট কেনা-বেচায় সমস্যা হচ্ছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিলে এ সঙ্কট কেটে যাবে। নদীর ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।

ঝালুরচর বাজারের পাট ব্যবসায়ী লিটন জানান, গত বছর পাট কিনে রাখছিলাম। ভালো লাভ পেয়েছি। এবারো পাট কিনে রাখতেছি। ভালো হবে বলে আশা করছি।

রাজীবপুরের পাট ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া জানান, পাটের বাজার বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান। তবে ব্যবসায়ীদের পাট মিল কারখানায় বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক পাটের মিল বন্ধ রয়েছে। মিল কারখানা খুললে সমস্যা কেটে যাবে। এ অঞ্চলের পাট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশে বিভিন্ন মিল-কারখানায় বিক্রি হয়ে থাকে।

ঝালুরচর বাজারের সাব ইজারাদার মো. উজ্জল মিয়া জানান, পাটের হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ভালোই আসে। এ অঞ্চলের পাটের মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পাট কিনতে আসে। প্রতি হাটে প্রায় ১ কোটি টাকার পাট কেনা-বেচা হয়ে থাকে। পাটের হাটে জায়গার সঙ্কটের কারণে পাট কেনা-বেচায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে।## আরটিভি

Loading