সচিব আগে না এমপি আগে

প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ , জুন ২৯, ২০২১

সরকার আমলারা চালান নাকি মন্ত্রী-এমপিরা? শেষ নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে বেতনে যতনে দায়িত্বে বা কতৃর্ত্বে মাঠ যে আমলাদের দখলে সেকথা সরকারবিরোধীরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন৷

এবার তাতে গলা মেলালেন খোদ সরকারি দলের এমপিরাও৷ সোমবার জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যরা স্পষ্ট করেই বলেছেন,” সব কাজে কেন আমলারা!” আমলাদের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদেরও।

সংসদ সদস্যদের বড় ক্ষোভের জায়গা হলো ত্রাণ কাজে তাদের অংশগ্রহণ সরকারিভাবে না থাকায়। প্রতিটি জেলায় এই করোনার সময় ত্রাণ বিতরণের সমন্বয় করছেন একজন করে সচিব। গত বছরের এপ্রিলে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। আর সরাসরি দায়িত্বে আছেন জেলা প্রশাসকেরা আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে জেলায় জেলায় যেসব ভার্চুয়াল সভা করেন সেখানে জেলা প্রশাসকেরাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেন । সংসদ সদস্যরা পাশে বসে থাকেন মাত্র।

সংসদ সদস্য ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ সোমবার সংসদে বলেছেন,” সংসদ সদস্যদের অবস্থান সচিবদের ওপরে। এটা খেয়াল রাখতে হবে।” তিনি আরো বলেন,” এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা । মানুষ মনে করে আমরা যা দেই(ত্রাণ) এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দেন।

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কিন্তু এলাকায় যানই নাই।” জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “প্রত্যেকটা জেলার রাজনীতি দেয়া হয়েছে সচিবদের হাতে। প্রধানমন্ত্রী ডিসি সাহেবদের সাথে কথা বলেন । আর এমপিরা পাশে বসে থাকেন।”

কাজী ফিরোজ রশীদ মঙ্গলবার বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন,”অতীতে এরকম ছিল না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রাধান্য ছিলো। আর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী এমপিরা সচিবদের ওপরে। কিন্তু এখন এর অন্যথা হচ্ছে।” এর কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,” কারণ কী তা বুঝতে পারছি না।”

হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন,” দেশের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত ও কাজ হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে। প্রশাসনের অনির্বাচিত কর্মচারীরা সেটা বাস্তবায়ন করবেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের আশা আকাঙ্খা বোঝেন। এটা না হলে পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়না হবে না।”

তিনি আরো বলেন,” লকডাউন- শাটডাউনের সিদ্ধান্ত যদি প্রশাসনের লোকজন নিজেরাই নেন তাহলে গত কয়েকদিন ধরে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তাই হবে।”

” রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জনগণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়েছে। আমলাদের নয়। তারা সেতু। সেতু তো আর সিদ্ধান্ত নেবে না,” বলেন তিনি।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ বলেন,” এটা অনির্বাচিত সরকার। প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই আমলাদের দায়িত্ব দিচেছন। আর এই সরকার টিকে আছে প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। তাই আমলাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন।”

উপজেলা পর্যায়ে প্রধান নির্বাহীর(সিইও) দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এখনেও সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভূমিকা গৌণ। আর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার যা অস্বস্তি তৈরি করেছে পৌর মেয়রদের মধ্যে। ঢাকার দুই সিটিসহ ১২টি সিটি কর্পোরেশনের সিইও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এখন ১৯৪টি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার সিইও নিয়োগ দেয়া হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন,” আইন ও সংবিধানে আছে উপজেলা চেয়ারম্যানেরা উপজেলার প্রধান নির্বাহী। কিন্তু পরিপত্র জারি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান নির্বাহী করা হয়েছে। আর এর প্রতিবাদ করলে , রাজপথে নামলে আমাদের বলা হয় আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছি।”

উপজেলা পরিষদ বাদ দিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তারা বলছেন এখন উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসন হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অধীন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন,” এটা করোনার চেয়েও ভযাবহ।”

আর পৌর মেয়রদের সংগঠন পৌর মেয়র অ্যাসোসিশেনের মহাসচিব খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন,” পৌরসভা আইনে প্রধান নির্বাহীর পদ আছে। এখন সরকার প্রশাসন থেকে তাদের নিয়োগ দেবে । তাদের কী ভূমিকা হবে, ক্ষমতা কী হবে তা আমরা দেখতে চাই। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে। প্রধান নির্বাহী এবং সব কর্মকর্তা কর্মচারী মেয়রের অধীনে থাকবেন। তাদের চাকরির এসিআর মেয়র লিখবেন। কিন্তু কী হয় তা দেখার আগে মন্তব্য করা কঠিন।” ## ডয়েচে ভেলে

Loading