গাজায় কী চায় ইসরায়েল?

প্রকাশিত: ১:৩৮ অপরাহ্ণ , মে ১৭, ২০২১

ফিলিস্তিনের গাজায় গত এক সপ্তাহ ইসরায়েল যে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তা অনেকটাই বিরল ঘটনা। এর আগে হামলা চালালেও সে হামলা এতটা তীব্রতর ছিল না। পালটা জবাবও দিয়ে যাচ্ছে হামাস। গত সাত দিন ধরে চলা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের এই লড়াইয়ে তিন হাজার রকেট ছুড়েছে প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। একজন শীর্ষস্থানীয় ইসরায়েলি জেনারেল হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে ইরানের গণমাধ্যম পার্সটুডে। তিনি বলেছেন, চলমান সংঘর্ষে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক রকেট হামলার শিকার হয়েছে ইসরায়েল।

এ প্রসঙ্গে বিবিসির সাংবাদিক রুশদি আবুলাউফ টুইটারে লিখেছেন, গাজায় শুধু বিস্ফোরণ আর বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে আর যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গত ৬ দিনে গাজার প্রায় ৬৫০টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন বিমান হামলা হচ্ছে গড়ে একশ’ থেকে দেড়শ’ বার সেই সঙ্গে সীমান্ত থেকে কামানের গোলা তো রয়েছেই। স্থল অভিযানের জন্যেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

আল-জাজিরার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯২ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৫৮টি শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন এক হাজার ২০০ জনের বেশি।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলছেন, যত দিন প্রয়োজন গাজায় বিমান হামলা চলবে। এমনকি গাজায় স্থলবাহিনী ঢোকানোর সম্ভাবনাও নাকচ করছে না ইসরায়েল।

প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কোন প্রয়োজনের কথা বলছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী? গাজায় এ দফার এই সামরিক অভিযান থেকে কোন উদ্দেশ্য তারা হাসিল করতে চাইছে ইসরায়েল?

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেরুজালেম ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটির (জেআইএসএস) গবেষক ড. জনাথন স্পায়ার বলেন, হামাসের ছোড়া রকেটের জবাব দিচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েল এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে যাতে হামাস ভবিষ্যতে আর সাহস না দেখায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দেওয়া হিসেবে হামাস গত সাত দিনে গাজা থেকে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে প্রায় তিন হাজারের মতো রকেট ছোড়া হয়েছে। যার আঘাতে মারা গেছে দশজন। রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে তারা গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে টার্গেট করে এবং তার বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। দাবি করা হয়েছে গত কদিনে হামাসের হামাসের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কজন নেতা মারা গেছেন। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ইসরায়েল কি তবে গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করতে চাইছে?

এ প্রসঙ্গে ড. স্পায়ার বলেন, মনে হয় না ইসরায়েলের তেমন কোনো লক্ষ্য আছে। হামাসকে গাজা থেকে সরাতে ইসরায়েলকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাপক মাত্রায় স্থল অভিযান চালাতে হতে পারে। তার অর্থ বহু প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া হামাসকে সরিয়ে দিলে গাজার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে তা নিয়ে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন। ইসরায়েল নিজে সরাসরি গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় না।

এদিকে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর জরুরি বৈঠক ফিলিস্তিনকে ইসরায়েলের বর্বর হামলা থেকে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ বা কার্যকরী সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানায়, রোববার (১৬ মে) সৌদি আরবের বিশেষ অনুরোধে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওই ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করেছেন বক্তারা। তারা আরও বলেন, ইসরায়েল ৫৫ শিশু, ৩৪ নারীসহ দুই শতাধিক বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিককে বোমা মেরে হত্যা করেছে। অথচ জাতিসংঘ ফিলিস্তিনিদের এ চরম দুর্দিনে মুখে কোনো কথায় বলছে না।

এদিকে চলমান সংঘাত কতদিন চলবে সে বিষয়েও বিবিসিকে নিজের মন্তব্য জানিয়েছেন ড স্পায়ার। তিনি বলেন, এই দফার এই সংঘাতে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো হামাস এই প্রথম ইসরায়েলের ভেতর আরব জনগোষ্ঠীকে খেপিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এটি হামাসের বড় একটি কৌশলগত অর্জন যা ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতেই ইসরায়েল হয়তো এখন যত দ্রুত সম্ভব গাজায় অভিযান বন্ধের তাড়না অনুভব করছে।

Loading