ফরিদা ইয়াসমিন সুমি’র একগুচ্ছ কবিতা নিউজ৭১অনলাইন নিউজ৭১অনলাইন প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ , জুলাই ২০, ২০২০ ১.ঘরহীন কোকিলা শয্যা ছেড়ে গেলে দেবে যাওয়া সিথানে উষ্ণতা ছড়ায় স্বেদ-গন্ধ। অনুযোগের ভঙ্গিতে পড়ে থাকে দু’চারটা ঝরে পড়া চুল। একটাই মাত্র জীবন তবু কতো কতো পরাভূত অভিযোগে চোরাবালি শুষে নেয় বর্ণালি অনুসঙ্গ। নির্বোধ মানুষ হাত পেতে নেয় শাস্তিযোগ্য কষ্ট আনন্দ বদলে!কী করি, কেন করিভেবে ভেবে অনির্দিষ্ট প্রজন্ম করে পার।অনিশ্চিত সঙ্গমেনিশ্চিত গর্ভবতী কোকিলারাও ঘরহীন। ২.ব্যর্থ প্রেমিকা ধরো,আসবার কথা না থাকলেও হঠাৎ এসে গেলে! এদিকে,বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতেপ্রতিদিনের মতো নাকেমুখে দুটো গুঁজেসকাল সকাল ছুটেছি অফিসে।পরীক্ষার হলের ডিউটিতে দিয়েছি গভীর মনোযোগ। যখন যেটা করবো তাতেই নিমজ্জন জরুরি বলে মানি।ফোন সাইলেন্ট মোডে,ফেসবুক থেকেও লগ-আউট।ওদিকে,ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছআকুতিতে ভরে যাচ্ছে ম্যাসেঞ্জার আর এসএমএসের ইনবক্স!তাতে শুধু, একটিবার দেখতে চাওয়ার,অল্পকিছু কথা বলবার কাকুতি-মিনতিতে হাহাকার।পরীক্ষা শেষের ঘণ্টা পড়লেখাতাপত্র গোছগাছ করতে করতে সময়ের কাঁটা দুইটা ছুঁইছুঁই।আড়াইটা বাজতেই দৌড়ুবো-অফিস ছাড়ার ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে!খোলা প্রাঙ্গণে নেমে বুক ভরাবো অক্সিজেনে,কবিতার একটা লাইন ছিল মাথায়,লিখে রাখব বলেব্যাগ হাতড়ে মোবাইলটা খুঁজব।আলো জ্বালতেই দেখব, একি!ফোনটা পড়ে যাবে মাটিতেপ্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে,কী করব আমি তখন!আমি তখন কী করব?কাঁপা কাঁপা হাতে কল দিব,নাহ! কিছুতেই তুলবে না তুমি,রিসিভ হবে না কোনো কল,যেমনটা তোমার কলগুলোরিসিভ হয় নি,সেই হাজিরা দেবার সময় হতেপ্রস্থানের সময় পর্যন্ত! সারপ্রাইজ দিতে হুট করে চলে এসেছিলেএখন তুমি ফিরে যেতে গাড়িতে চড়েছ,এটাই তোমার সর্বশেষ ম্যাসেজ।কতো কতো দিন বলেছিপ্রেমময় সব কাণ্ডকারখানা দিয়েবিস্মিত করতে হয় প্রেমিকাকে।কতো অভিমান, অভিযোগ,অনুযোগ করেছি-প্রেমিক হয়ে উঠতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে!আজ যখন প্রেমিক হলেপ্রেমিকা আর হতে পারলাম কই? ৩.এইবেলা চলো ঘুমিয়ে পড়ি বৃথাই ছুটোছুটিলম্ফঝম্প- হায় প্রেম,কোথা প্রেম, কোথায় বা কবিতা!বৃথা চেষ্টা আস্ফালন, নাচন-কুঁদন প্রেম ছোঁবারকাব্য করবার।আকাশে শীতল পাটিবাতাসে তামার বালানদীতে রূপোর নূপুর অরণ্যে পিতলের মাদুলি পাহাড়ে সোনার কানপাশা-আরও কতো কতো সাজসজ্জা! হায় কাব্য হায় প্রেম প্রেমময় কাব্য,কোথা সে কাব্যকোথা সে প্রেম,অধরা মাধুরি বুঝি!রেখে দাও বৃথা অনুসন্ধান-এইবেলা চলো দু’জনে মিলে ঘুমিয়ে পড়ি,লম্বা ঘুম-কাব্য হবে!………মহাকাব্য হয়েছে! ৪.জ্বর ক’দিন পরপরই জ্বর আসে কাঁপিয়ে তুমিই প্রশ্রয় দাও,উত্তাপ ভালোবাসো বলে!আর বার জ্বর এলে ছেড়ে চলে যাবো-আমি ছাড়া সে-ই শুধু উষ্ণ উত্তপ্ত করে,এক বনে চলে নাদুই রাজার শাসন! জ্বরের চেয়েও বেশি দেবো উত্তাপ-জ্বর না আমি,আমি না জ্বর নিষ্পত্তির ভার তোমার হাতে,কে থাকবো! ৫.বললেও সব কথা শুনতে নেই আমি তো বলবোই,এতো বেশি ফোন কোরো না,ম্যাসেঞ্জারে কিছু লিখো না।বলতেই থাকব,বারবার দেখা করতে সেধো নাঘনঘন যখনতখন এসো না।আরও বলবো, পাগলামি কোরো না হুটহাট চুমু খেয়ো নাকাছে পেতে চেয়ো না।তবে বলবো না,কিন্তু চাইবো,তুমি এসবের একটি কথাও শুনবে না, মানবে না, রাখবে না! ৬.কুচুটে ভালোবাসা অপহরণ করে গুম করতে হবে না,এমন ভালোবাসবো যে সমস্তকিছু থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গুম হয়ে যাবে-অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না জনগণ চারিদিকে খোঁজ খোঁজ পড়বেজোর তলব চলবেহারিয়ে গেছ বলেজনরবও উঠবে।কিন্তু, মজার ব্যাপার কী জানো-তুমি নিজেই বেরুবে না,বেরুতে চাইবে নাভালোবাসার গুহা থেকে! এমন ভালোবাসা দেবো যেমাটির নিচে অনেক দূরতকগজিয়ে যাবে শেকড়বাকড় নিজেই উপড়ে ফেলতে চাইবে না,উপড়াবেও নাগভীরে যাওয়া শেকড়! এমনভাবে ভালোবাসবো যেআমাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না,কিছুই চাইবে না!তোমাকে তো বলেইছিআমার ভালোবাসা ভীষণ কুচুটে ভারী হিংসুটে! ৭.ছাই-রঙা সুরমা বেলাভূমির সুরমারঙে সমুদ্র আছড়ে পড়লে শুকনো পাটকাঠির মতো মুচমুচে হয়ে যায় অনতিক্রম্য দূরত্ব! দিয়াশলাই-কাঠির ক্ষুদ্র বারুদ জ্বলে ওঠে দপ করে,খাক হয়ে যায় পরিপাটি তিলোত্তমা-নগর! আগুন ধরবার আগে-পরে হলেওছাই আর সুরমার রঙে পার্থক্য করতে পারি না বিশেষ! ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নগরীর জন্যে কাঁদি,গলে গলে পড়ে স্বপ্নচোখে মাখা সুরমার নীলাভ-ছাই রঙ। সুশ্রী-সুখী হতে আবারও এগিয়ে যাই ধ্বংসস্তুপে, হাঁটুমুড়ে, অবিশ্বাসী-ছাই মেখে নিই বিশ্বাসী-দুচোখে! ৮.আত্মপ্রেম আজ নাহয় থাকঅন্য কোনো দিন শোনাব, আমার জন্যে কতটুকু রেখেছে জীবন তার নিজস্ব বরাদ্দ! বহুদিন হলো,প্রেম-ঘৃণা, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ এইসব কাজ করে না আর,তবু সরে এসেছি আত্মহননের মতো অভ্যস্ত চেতনা হতে,যাকে তোমরা কাপুরুষোচিত ঘৃণ্য নীতি বলো!আজ নাহয় থাক অন্য কোনো দিন শোনাব,উজাড় করে কতটুকু দিয়েছে নারী সঞ্চয়ের ঐশ্বর্য থেকে! বহুকাল গেলদিন-রাত্রি, ভাঙা-গড়া, জোয়ার-ভাটা এইসব বিচলিত করে না আর,তবু মগ্ন হয়েছি আত্মপ্রেমের মতো অনভ্যস্ত প্রেরণাতে যাকে তোমরা আত্মকেন্দ্রিক ঘৃণ্য রীতি বলো! ৯.ক্লান্তি হাসতে হাসতে ভীষণ ক্লান্ত এবার একটু কাঁদতে চাই।ভাবতে ভাবতে ভীষণ ক্লান্ত ভাবনা ছাড়া বাঁচতে চাই। চলতে চলতে ভীষণ ক্লান্ত অল্প সময় থামতে চাই।প্রেম-কবিতায় ভীষণ ক্লান্ত বিরহগাথা লিখতে চাই। জমতে জমতে ভীষণ ক্লান্ত নিজের কিছু খরচ চাই।ভালোবাসায় ভীষণ ক্লান্ত সত্যিকারের ঘৃণা চাই। মিথ্যা মিথ্যায় জর্জরিত এবার কিছু সত্যি চাই।বাঁচতে বাঁচতে ভীষণ ক্লান্ত জীবন থেকে মুক্তি চাই। ১০.জীবন এমনই জীবনের নগদ যাপনেঅশুদ্ধতা কিছু থাকেকিছু নিতে হয়-আলিঙ্গনে,আহবানে।শুদ্ধতা আগলাতেআলগাতে হয় পৃথুলা গুরুভার,অবলম্বনেঅন্তর্ভুক্তিতে! ধরনধারণে যাই বুঝে, ফায়দা নেই কিছুতে কি’বা অভিমানে, কি’বা অভিযোগে!যাপিত জীবনেশুধু জীবন ধারণঅবশেষেকায়ক্লেশে!জীবন এমনইএমনই জীবন!ফরিদা ইয়াসমিন সুমি শেয়ার শিল্প-সাহিত্যবিষয়:https://news71online.com/archives/9200