লুসাইলে হ্যাটট্রিক জয়ের প্রস্তুতি আর্জেন্টিনার

প্রকাশিত: ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ , ডিসেম্বর ১৫, ২০২২

ফাইনালে ওঠার আনন্দটা চলছে, কিন্তু মেসি একি কথা শোনালেন। আরো একবার বলে গেলেন তিনি নাকি ২০২৬ বিশ্বকাপে ফিরবেন না। ফেরা না ফেরা পরের ব্যাপার। কিন্তু এখনই কেন বিদায় পর্বে জোর দিতে হবে। আমরা মেসিকে চাই। মেসিকে চাই। আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকদের মুখে এটাই শোনা গেল কাতার বিশ্বকাপের শহর দোহায়।

আর্জেন্টিনা থেকে স্বামী-স্ত্রী এসেছিলেন খেলা দেখতে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালের জয়টা বুকে নিয়ে আর্জেন্টাইন দম্পতি ছুটছিলেন হোটেলের পথে। স্টেডিয়ামেই কথা হচ্ছিল। এরই মধ্যে ক্রোয়েশিয়ান এক সমর্থক এসে আর্জেন্টিনার দম্পতিকে জড়িয়ে ধরলেন। অভিনন্দন জানালেন। ভদ্রলোকের স্ত্রী আর্জেন্টিনার ভাষায় যা বলছিলেন তা না বুঝলেও মনে হলো ক্রোয়েটকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা হলেও তার নামটা বুঝতে গিয়ে সমস্যা হয়ে গেল। এত বেশি তাড়াহুড়া করছিলেন যে, উল্লাসের মধ্যে তার নামটা বুঝাই গেল না। এই আর্জেন্টাইন জানিয়ে গেলেন সেদিন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মেসিকে দেখেছ। সে বার বার মাঠে দাঁড়িয়ে আকাশে তাকাচ্ছিল। দুই হাত আকাশে তুলে তাকিয়েছিল কেন, সেটা জানো। ফুটবল ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলছে মেসি। মেসির ভেতরে ভর করেছে মারাদোনা। মারাদোনাই মেসির কোচ। মারাদোনার জন্যই খেলছে মেসি। মেসি খেলা ছাড়তে পারে না। কথা বলেই ছুটলেন। বললাম তোমার নামটা বলে যাও। বলেছে দুই বার। বুঝা গেল না।

মেসি খেলা ছাড়ুক সেটা চায় না আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু কিছু করার নেই। মেসি বিশ্বকাপের আগেই জানিয়েছিলেন, এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়েছে। পরে মিক্সড জোনে এলে সেখানে মেসির ঘনিষ্ঠ সাংবাদিককে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপে যাচ্ছেন না। সেটা অনেক দূর হলেও আপাতত ধরেই নেওয়া যায়, লুসাইল স্টেডিয়াম থেকেই বিদায় হতে যাচ্ছে মেসির। যদি আর্জেন্টিনা হেরেও যায় তাহলেও মেসি আর আসবেন না বিশ্বকাপের মঞ্চে। হেরে যাওয়ার প্রশ্ন কেনই বা ওঠছে। লুসাইল স্টেডিয়াম আর্জেন্টিনার লাকি গ্রাউন্ড। এই মাঠে শুরুটা হয়েছিল হার দিয়ে। সেই মাঠকেই সৌভাগ্যের মাঠে পরিণত করেছেন মেসি, আলভারেজ, মার্টিনেজ, রোমেরো, মলিনা, তাগলিফিকো, আকুনা, ওতামেন্দিরা। কোয়ার্টার ফাইনালের কঠিন লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েছে। এখন ফাইনালেও এই লুসাইল স্টেডিয়ামে নামবেন মেসিরা। আর্জেন্টাইনরা এক মাঠে হ্যাটট্রিক জয়ের স্বাদ নিতে প্রস্তুত হয়ে এসেছেন। জানিয়ে দিলেন আগেই কথা নয়। ষোলোকলা পূর্ণ করতেই রবিবার মাঠে নামার প্রস্তুতি স্কালোনির শিষ্যদের।

দোহা জুড়ে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের ভিড়ে টিকে থাকা কঠিন। নির্ধারিত কিছু স্থান রয়েছে সেখানে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা ভিড় করছেন আর এখনো আর্জেন্টিনার গানে সুর তুলছেন। কত যুদ্ধের পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের ফুটবল যুদ্ধে হারিয়ে গেছে নেইমারের ব্রাজিল, রোনালদোর পর্তুগাল, সুয়ারেজের উরুগুয়ে। কেবল সেই যুদ্ধে টিকে আছে মেসির আর্জেন্টিনা। বেঁচে আছে মারাদোনার স্বপ্ন। আরেকটি ফাইনালে উঠল। এর আগে পাঁচ বার ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা। এবার নিয়ে ছয় বার খেলছে। বিশ্বকাপের প্রথম ফাইনাল খেলেছিল সেই ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে বিশ্বকাপে। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন, ৮৬ তে দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ৯০তে ফাইনাল খেলেছিল। এছাড়া সবশেষ ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হেরে গিয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের পর মাঝে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলেছিল। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। মেসির সময়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দারুণ হয়েছে। দুইটা ফাইনালেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। বিশেষ করে, এবার কাতার বিশ্বকাপের সবুজ মঞ্চটা মেসি নিজের বানিয়ে ফেলেছে। নেইমার যে সুযোগটা নিতে পারেননি সেটা পায়ের জাদুবলে নিয়েছে মেসি।

দোহায় আর্জেন্টিনা হোক আর ব্রাজিল কিংবা অন্য কোনো দেশের সমর্থক। সাবার কণ্ঠে একটা কথা শোনা যায়, মেসি নাকি ম্যাজিক শো দেখাচ্ছে। নাইট শোতে মেসি ম্যাজিক দেখতে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেওয়া যায়।

আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালিনো অবশ্য ভাবছেন অন্য কিছু। তার ভাবনায় মেসি নেই। তার কথা হচ্ছে এখানো অনেক দূর যেতে হবে। একটা ম্যাচ বাকি রয়ে গেছে। আরো একধাপ এগিয়ে যেতে হবে। ১৮ মাস আগে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, ব্রাজিলকে হারিয়েছিল। কম সময়ের মধ্যে আরেকটি ফাইনালে আর্জেন্টিনা। আরেকটি ট্রফির দুয়ারে মেসির আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক ছিলেন বাতিস্তুতা। তার ১০ গোলের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেন মেসি। ১১ গোল করলেন ২৫ ম্যাচে। পেলে মারাদোনাকেও ছাড়িয়ে গেছেন মেসি। বিশ্বকাপে মেসির গোলের অ্যাসিস্ট হিসাব করলে ছাড়িয়ে গেছেন ব্রাজিলের কালো মানিক পেলেকে। এক বিশ্বকাপে পেলে চারটি গোল করিয়েছিলেন। এবার মেসির রয়েছে পাঁচটি অ্যাসিস্ট। রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ২৬ নম্বর ম্যাচ খেলবেন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২৫ নম্বর ম্যাচটি খেলেছেন। বিশ্বকাপের ম্যাচে মেসির অ্যাসিস্ট সংখ্যা সব মিলিয়ে ৯টি। মারাদোনাকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন মেসি।

Loading