এ হাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নেবে কত দূরে?

প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ণ , আগস্ট ২৬, ২০২২

সময়টা বড্ড বেশি নোংরাজলে মাখামাখি৷ দোষারোপের খেলায় আর ব্যর্থতার তীব্রতায়৷ সব তাড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কি বাজবে আবার আনন্দময় বর্ষার গান? এই এশিয়া কাপে?

নতুন অধিনায়ক৷ নতুন কোচ৷ নতুন পথচলার প্রতিশ্রুতি৷ নতুন স্বপ্নের সাহস কি করা যায় তাই?

নাকি চোরাবালিতে আরো তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট? দুঃখের সাগরে ঢুকবে আরো লবণপানি? কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে আবারও?

এটা ঠিক যে, এই ফরম্যাটে লাল-সবুজের পতাকাটা গর্বের সঙ্গে উড়েছে খুব কম৷ কারণ, এত বছর পেরিয়েও টি-টোয়েন্টিতে বড্ড আনাড়ি বাংলাদেশ৷ সাম্প্রতিক সময়ে যেন আরো নবিশ৷ সর্বশেষ ১৫ ম্যাচে মাত্র ২ জয় তো সে সাক্ষ্যই দেয়!

অতএব সব ভেঙেচুরে নতুন শুরুর চেষ্টা৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষমতার যে কেন্দ্রবিন্দু, সেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গর্জে ওঠা৷ দিনবদলের ডাকে সাকিব আল হাসানের কাঁধে অধিনায়কত্ব সঁপা৷ টি-টোয়েন্টি কোচের দায়িত্ব থেকে রাসেল ডমিঙ্গোকে সরিয়ে দেয়া৷ ‘টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট’ পদবিতে শ্রীধরন শ্রীরামকে বকলমে হেড কোচ করা৷

এরপরও কিছু না হলে তো ‘অসারের তর্জন-গর্জন সার’ প্রবাদের প্রতিষ্ঠা আরো বেশি করে পাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে৷

টি-টোয়েন্টিতে লাল-সবুজের এই যে প্রচণ্ড দুঃসময়, এই যে প্রলম্বিত দুঃস্বপ্ন, তার শুরু সর্বশেষ বিশ্বকাপে৷ প্রথমেই স্কটল্যান্ডের কাছে হার৷ হাঁচড়েপাচড়ে মূল পর্বে উঠলেও সেখানে কোনো ম্যাচ জিততে না পারা৷ এরপর ৪ সিরিজের ১০ ম্যাচের ৮টিতেই পরাজয়৷ এমনকি সর্বশেষ জিম্বাবোয়ের বিপক্ষেও কিনা সিরিজ হার!

বাংলাদেশের ক্রিকেট অহংয়ে সেটি লেগেছে খুব৷ তাই তো এত এত পরিবর্তন৷ খোলনলচে পাল্টে দেবার মরিয়া চেষ্টা৷

যার শুরুটা এশিয়া কাপ দিয়ে৷ সেখানে প্রত্যাশার আকাশ আসলে কত বড়? টুর্নামেন্টের সর্বশেষ চার আসরে তিনবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ৷ শিরোপা যেহেতু জিততে পারেনি কখনও, তাই এবার সূর্য ছোঁয়ার মতো ট্রফি স্পর্শ করাই তো লক্ষ্য হওয়া উচিত, নাকি?

অথচ এবার কিনা গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপার ফোরে ওঠা নিয়েই রাজ্যের সংশয়! শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘বি’ গ্রুপে সাকিবের দল৷ এ তিনের মধ্যে শেষ দলটি হলদে পাতার মতো ঝরে যাবে এখানেই৷

দুই ম্যাচের মধ্যে একটিতে জিতেও রানরেটের প্যাঁচে ছিটকে যেতে পারে বাংলাদেশ৷ সে পরের কথা৷ কিন্তু লঙ্কান সিংহ কিংবা আফগান যোদ্ধাদের বিপক্ষে ওই এক জয়ের নিশ্চয়তাও-বা কোথায়!

বাংলাদেশ তাই অনিশ্চিত যাত্রার অভিযাত্রী৷ যে অভিযানে পিছু টেনে ধরছে ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাস৷ প্রথমত এই ফরম্যাটে সাফল্যখরায়৷ সবচেয়ে বেশি করে বোধ করি, পালাবদলের পর্যায়ে পারষ্পরিক দোষারোপে৷

এই যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড৷ ডমিঙ্গোর উপরে দায় চাপিয়ে টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে তাকে৷ রুষ্ট ডমিঙ্গো বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিসিবির ওপর৷ এরপর তাঁর পদত্যাগ নিয়েও নাটক হয়ে গেল দফায় দফায়৷ এই দোষারোপের খেলায় বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই দফারফা৷
আরেক ‘খেলা’ সাকিবকে নিয়ে৷ বেটিং ওয়েব সাইট ‘বেটউইনার নিউজ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে বিসিবিকে টেনশনে রেখেছিলেন বেশ কয়েক দিন৷ এ খেলায় শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ জিতেছে, বলা মুশকিল৷ তবে সাকিব চুক্তি বাতিল করেছেন, তাকে টি-টোয়েন্টির ক্যাপ্টেন্সি দেয়া হয়েছে- এটা বিসিবির জন্য স্বস্তির নিঃসন্দেহে৷

মাঠের ক্রিকেটের কথা বললে স্বস্তি সামান্য৷ তার উপর ইনজুরিতে জেরবার দল৷ এ কারণে ফর্মে থাকা লিটন দাস নেই৷ সর্বশেষ সিরিজের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান নেই৷ ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বী, পেসার হাসান মাহমুদরাও নেই৷ এত সব ‘নেই’-এর সুযোগে সুযোগ পেয়ে যান সাব্বির রহমান, নাঈম শেখরা৷ অভিজ্ঞতার দোহাইয়ে টিকে যান মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরা৷

তাদের নিয়েই টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক সাকিবের প্রত্যাবর্তন পর্ব৷ প্রথম অভিযান টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীরামের৷ মিশনে অলিখিত ‘নেতৃত্ব’ দিতে স্বয়ং নাজমুল হাসান পাপন আছেন দলের সঙ্গে৷ সঙ্গে বোর্ড পরিচালকদের লম্বা বহরও৷ ‘আর কী চাই?’ – সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তো চড়া গলায়ই বলেছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট!

চাওয়াটা অবশ্য লম্বা-চওড়া কিছু নয়৷ শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তানের কোনো এক দলকে পিছু ফেলে অন্তত সুপার ফোরে ওঠা আপাতত৷ তাহলেই এশিয়া কাপে ব্যর্থ বলা যাবে না বাংলাদেশকে৷ সাম্প্রতিক ফর্ম এবং পরিবর্তনের হাওয়ার বিবেচনায়৷

‘এ হাওয়া আমার নেবে কত দূরে’ – জনপ্রিয় এ চলতি সুরটাই যেন বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযানের আবহ সংগীত৷ টি-টোয়েন্টিতে পরিবর্তনের হাওয়া আসলেই কত দূরে নেবে তাদের? অথই সমুদ্র পেরিয়ে সাফল্যের সুবর্ণবন্দরে? নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঘুরপাক খাবে সেই উত্তাল সাগরের অবাধ্য ঘূর্ণিজলেই? – ডয়চে ভেলে

Loading