মানিকগঞ্জের হালিম খান হত্যা মামলার আসামী ধামরাইয়ে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১৯, ২০২২

ঢাকা জেলার ধামরাই এলাকা হতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর হালিম খান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মবজেল (৩৩)কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। র‌্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতার যেমনঃ সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা রহস্য উদঘাটনসহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে যার প্রেক্ষিতে সার্বিক মূল্যায়নে ২০২১ সালে র‌্যাব-৪ ক্লুলেস অপরাধ রহস্য উদঘাটনে প্রথম স্থান লাভ করে। এছাড়াও র‌্যাব-৪ কর্তৃক ২০-৩০ বছর যাবত বিভিন্ন মামলার পলাতক যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুদ্ধর্ষ খুনী, ডাকাত ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’কে ১৯ বছর পর, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)’কে ০৭ বছর পর, ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯)’কে, চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতি’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)’কে, চাঞ্চল্যকর সাইদুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী নান্নু শেখ @ নূরনবীকে গ্রেফতার করা হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার দীর্ঘ ২১ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আলম (৪০) কে ঢাকার বংশাল এলাকা হতে থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গত ১৮ আগস্ট ২০২২ তারিখ রাত ০৮.৩০ ঘটিকায় ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন ইসলামপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর হালিম খান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মবজেল (৩৩)’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মবজেল এবং মামলার অন্য তিনজন আসামী সবাই এলাকার বখাটে স্বভাবের ছিল। ভিকটিম হালিম খান (৩০) মানিকগঞ্জ সদর ও হরিরামপুর এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতো। ঘটনার অনুমান ৭/৮ দিন পূর্বে আসামী মবজেলসহ অন্যান্য আসামীদের সাথে মোটরসাইকেলের ভাড়া নিয়ে ভিকটিম হালিমের কথাকাটাকাটি ও মারামারি হয়। ফলে ভিকটিম হালিম এর উপর মবজেলসহ আসামীরা ক্ষিপ্ত হয় এবং হালিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪/০৩/২০১৪ তারিখ আসামী মবজেল ও ছমির মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন বলড়া এলাকা হতে হরিরামপুর উপজেলায় ওয়াজ-মাহ্ফিলে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম হালিম এর মোটরসাইকেল ভাড়া করে। এরপর ওয়াজ মাহফিল শুনে হালিমের মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলে হালিমকে অপেক্ষা করাতে থাকে। গভীর রাতে মবজেল ও ছমির হালিমের মোটরসাইকেলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। হরিরামপুর সদর থানা থেকে কিছুদূর আসার পর পূর্ব থেকে অপেক্ষারত অন্যান্য আসামীরা পথ রোধ করে হালিমের গাড়ি থামায়। এরপর হালিমের মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক মবজেলসহ আসামীরা ধরে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে যায় এবং হালিমের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। হালিমের হত্যা নিশ্চিত করার জন্য তারা হালিমের হাতের ও পায়ের রগ কেটে ফেলে। এরপর হালিমকে পদ্মার চরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রেখে হালিমের মোটরসাইকেল নিয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। ঘটনার দিন রাতে হালিম বাড়িতে ফিরে না গেলে তার পরিবারের লোকজন হালিমকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরের দিন ইং ১৫/০৩/২০১৪ ভিকটিমের স্ত্রী ফরিদা হরিরামপুর থানায় হাজির হয়ে একটি সাধারণ ডায়রী করে। উক্ত সাধারন ডায়রীর ভিত্তিতে হরিরামপুর থানা পুলিশ ১৮/০৩/২০২২ তারিখ অন্য আসামী ছমিরকে হালিমের মোটরসাইকেলসহ আটক করে এবং ছমিরের স্বীকারোক্তি মোতাবেক হরিরামপুর থানার অদূরে পদ্মা নদীর চরে ঝোপের মধ্য হতে হালিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। হরিরামপুর থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী ছমির ঘটনার সাথে সে সহ মবজেল জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। উক্ত ঘটনায় হালিমের স্ত্রী ফরিদা বাদী হয়ে আসামী মবজেল ও তিনজন আসামীর বিরুদ্ধে হরিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে; যার মামলা নং-০২ তারিখঃ ১৮/০৩/ ২০১৪ ধারা-৩৬৪/৩০২/৩৭৯/৪১১/১০৯ পেনাল কোড এবং উক্ত মামলার আসামী হিসেবে হরিরামপুর থানা পুলিশ ছমিরকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ঘটনার কিছুদিন পর বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় পলাতক থাকা অবস্থায় আসামি বাতেনের মৃত্যু হয় এবং হরিরামপুর থানা পুলিশ রাজ্জাক কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু ঘটনার পর হতে অদ্যবধি আসামী মবজেল পলাতক ছিল। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী মবজেলসহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট প্রদান করে। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে দায়রা জজ আদালত, মানিকগঞ্জ এর বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম হালিমকে হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে এপ্রিল ২০১৭ সালের দিকে চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামী মবজেলকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামী মবজলে দীর্ঘ ০৮ বছর যাবত পলাতক ছিলো।

৪। আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৮৯ সালে মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন বুদুটি বানীবন এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। সে প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগত জীবনে আসামী ০১ টি বিয়ে করেছে। বর্তমানে আসামী মবজেল (৩৩) ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন ইসলামপুর এলাকায় সস্ত্রীক বসবাস করে আসছিলো। ২০১৪ সালের পর থেকে আসামী আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যায়নি।

৫। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে সে নিজেকে আত্মগোপন করে। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘটনার পর (২০১৪ সালে) ঢাকায় চলে আসে। গত ০৮ বছর ধরে আসামী মবজেল ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলো। প্রথমদিকে সে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতো। গত কিছুদিন যাবৎ সে ধামরাই থানাধীন ইসলামপুরের একটি গার্মেন্টসে পোষাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলো।

৬। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।

Loading