ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়ার দাবি

প্রকাশিত: ৩:১৪ অপরাহ্ণ , মে ৩০, ২০২২

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে বাজার-ফেরিঘাটসহ ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা ও অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সব বরাদ্দ মন্ত্রণালয় হতে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে দেওয়াসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতি।

সোমবার (৩০ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন বিল্লাল।

তিনি বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিরলসভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দিয়ে আসছে। কখনো কখনো সেবা দিতে গিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, মহামারিসহ বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেবা অব্যাহত রাখতে হয় তাদের। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখার কারণে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ের সরকারপ্রধানরা ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু বলে আসছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কোনো সরকারই স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেনি ও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বিল্লাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রান্তিক পর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ও বাস্তবায়ন করেছেন। সরকারের গৃহীত এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদকেই ভূমিকা রাখতে হয়। স্থানীয়ভাবে আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত সব উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। সুতরাং ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতাকে দুর্বল রেখে কোনোভাবেই স্থানীয় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে লক্ষে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করছি।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির অন্যান্য দাবিগুলো হলো-

১. প্রশাসনিক ইউনিট আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।

২. চেয়ারম্যানদের সম্মানী বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা ও মেম্বারদের ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা।

৩. ইউনিয়ন পরিষদগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে ওই এলাকার সব ধরনের হাট-বাজার, জলমহল, বালুমহল, সাইরাতমহল, ফেরিঘাটসমূহ ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা ও ইজারা লব্ধ আয় ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় হিসাবে দিতে হবে।

৪. ভূমি উন্নয়ন কর এক শতাংশ থেকে দুই শতাংশে উন্নীত করে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলের জমা দেওয়া।

৫. জন্ম নিবন্ধনের আয় ও বিবাহ নিবন্ধনের ফি ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করা।

৬. ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সব বরাদ্দ মন্ত্রণালয় হতে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে দেওয়া।

৭. চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হলে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানদের গ্রেফতার ও সাময়িক বরখাস্ত না করা।

৮. গ্রাম আদালতের বিচারিক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় মোকদ্দমায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ আদায়ে ক্ষমতা দেওয়া এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে একজন বেঞ্চ সহকারী ও একজন পিয়ন নিয়োগ দেওয়া।

৯. ইউনিয়ন আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে একজন সহকারী পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া।

১০. ইউনিয়ন পরিষদের ওপর ঊর্ধ্বতন মহলের সব ধরনের অ্যাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।

১১. ইউনিয়ন পরিষদকে গ্রাম পুলিশ নিয়োগের ও অপসারণের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া।

১২. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে একটি অত্যাধুনিক পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Loading