ডলারের বিপরীতে এখনও শক্তিশালী বাংলাদেশী মুদ্রা

প্রকাশিত: ১২:২৭ অপরাহ্ণ , মে ২৩, ২০২২

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম মূল্য হারিয়েছে বাংলাদেশি টাকা। তবুও ডলার নিয়ে চলছে শোরগোল। রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বাড়ানোর পাশাপাশি বৈধপথে রেমিট্যান্স উৎসাহিত করতে টাকার যৌক্তিক অবমূল্যায়নের পক্ষে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী বাংলাদেশী মুদ্রা। এক বছরে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম মূল্যমান হারিয়েছে টাকা। তবুও দেশে ডলার ও রিজার্ভ নিয়ে চলছে শোরগোল।

মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে চিকিৎসা ও পর্যটন ভিসায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন, এতে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। তবে খোলাবাজারে কোনো কারসাজি হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখার পরামর্শ তাদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, “একদিনে চার-পাঁচ টাকা বাড়ে, এই হারে মূল্যবৃদ্ধিতে অবশ্যই সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে।”

এদিকে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উর্ধ্বমুখী বিশ্ববাজার। জ্বালানি, শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যের আমদানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা ও দাম বেড়েছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবিবি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ক্যাপল মেশিনের ইম্পোর্ট বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের মতো, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাঁচামালেরও আমদানি বেড়েছে। যে লেবেলে ইম্পোর্টটা বাড়ছে এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড কমিউনিটি প্রাইজ বেড়ে গেছে।”

সিপিডি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ ক্যাশ ইন্সেনটিভ দেওয়া হচ্ছে। যদি ফর্মাল চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা উৎসাহিত করতে চাই তাহলে একটা অপশন হতে পারে যে, এই ক্যাশ ইন্সেনটিভের পরিমাণ যদি কিছুটা বাড়ান যায়।”

কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার সরকারি পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে টাকার যৌক্তিক অবমূল্যায়নের পক্ষে তারা। পাশাপাশি বিদেশগামীদের ডলার বহনের সীমা কমিয়ে দেয়ারও পরামর্শ তাদের।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “কোন ধরনের ডিক্লারেশন ছাড়াই ১০ হাজার ডলার নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সেটাকেও কমিয়ে যদি আগের মত ৫ হাজার ডলার বা তার নীচে রাখা যায় তাহলে সেটার মাধ্যমেও ডলার ব্যবহারে স্থিতিশীল ভূমিকা রাখা যেতে পারে।”

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “কার্ব মার্কেট ও ফর্মাল মার্কেটের পার্থক্যটা যে পর্যায়ে আছে তাতে করে রেমিট্যান্সটা ইনফর্মালী চলে যাওয়ার দিকটা দেখতে পাচ্ছি।”

সিপিডি গবেষণা পরিচালক বলেন, “এখন যে জায়গায় এক্সচেঞ্জটা ধরে রাখা আছে, এটিকে আরও কিছু অবমূল্যায়িত করে ৯০ টাকার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায় কিনা সেটাও কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিন্তা করে দেখতে পারে।”

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমেছে ৩.৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ভারতীয় রূপীর মান কমেছে ৬.১১ শতাংশ, পাকিস্তানের ২০.৭৪ শতাংশ এবং নেপালি রূপী দর হারায় ৫.৮৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কা নেই। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজশর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণগ্রহণের পরামর্শ তাদের।- ই-টিভি

Loading