ফুটবলের কিংবদন্তি সামাদের ৫৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ বুধবার

মনজুরুল হক মঞ্জু মনজুরুল হক মঞ্জু

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১:৪৩ অপরাহ্ণ , ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ফুটবল যাদুকর এম এ সামাদের স্মৃতি চিহ্ন । ইতিমধ্যেই দখল হয়ে গেছে সামাদের স্মৃতি বিজড়িত বসত বাড়ী । ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে সেই সামাদ মিলনায়তন। তার অরক্ষিত কবরের ওপর রাতের বেলা চলে মাদক সেবীদের অসামাজিক কার্যকলাপ । উন-বিংশ সতাব্দীর গোড়ার দিকে অপূর্ব ক্রীড়া শৈলী প্রদর্শনকারী এই ফুটবলার ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারী পার্বতীপুরে মৃত্যু বরন করেন। সেই ফুটবল জাদুকর সামাদের ৫৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ বুধবার। এবারে তার মৃত্যু বাষিকী উপলক্ষে পার্বতীপুরে কোন রকম কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়নি।
সামাদ জাদুকর উপাধী পেয়েছিলেন জাদু বিদ্যা জানার জন্য নয়। ফুটবল খেলার অপূর্ব দক্ষতা এবং উন্নত মানের ক্রীড়া কৌশল প্রদর্শনের জন্যই জুটেছিল তার জাদুকর উপাধী। জাদুকরী ফুটবল খেলার জন্য সামাদকে বলা হত কিংবদন্তির মহানায়ক।
১৯১৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ২৩ বছর ছিল সামাদের খেলোয়াড়ী জীবন। তিনি ছিলেন একজন রেল কর্মচারী। সে সময় ইবিআর নামে যে রেলওয়ের ফুটবল দল ছিল, সামাদ সেই দলে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। সামদের ২৩ বছর খেলোয়াড়ী জীবনে এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যা খেলার জগতে আজও দৃষ্টন্ত হয়ে আছে। দেশে এবং দেশের বাইরে তার অভিনব খেলা দেখে মানুষ হয়েছিল হতবাক।
জানা যায়, কোন এক মাঠে একবার খেলা শুরুর আগ মুহুর্তে মাঠে চার দিকে পায়েচারী করে এসে সামাদ ক্রীড়া কমিটির কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, এ মাঠ আর্ন্তজাতিক মাঠ অনুযায়ী ছোট বিধায় তার দল এ মাঠে খেলতে পারেন না। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ কমিটি তার অভিযোগ আমলে নিয়ে মাঠ মাপযোগ করলে তার অভিযোগে সত্যতা পেয়েছিল। আর একবার মাঠের মধ্যস্থল থেকে সামাদ কয়েকজন খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে বল ড্রিবলিং করে বল গোলে নিক্ষেপ করেন । কিন্তু বল গোলে প্রবেশ না করে গোলবারের লেগে ফিরে আসে। তখন সামাদ চ্যালেঞ্চ করে বসেন সামদের শটের মেরাজমেন্ট কোন দিন ভূল হয়নি। গোলপোস্ট নিশ্চয়ই ছোট আছে। কমিটি উচ্চতা মেপে তার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছিল। তার খেলোয়াড়ী জীবনে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা এখনও মানুষের মুখে মুখে । ১৯১২ সালে কোলকাতা মেইন টাউন কাবে ১২ বছর বয়সে তিনি ফুটবল খেলা শুরু করেন। ১৯১৮ সালে ত্ররিয়িন্স কাবের সদস্য হন। ১৯১৯-২০ সালের মধ্যে তাজ হাট কাবের পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯২৪ সালে প্রথম ভারতীয় দলের হয়ে জাভায় যান। ১৯৩২ সালে অল ইন্ডিয়া দলের হয়ে শ্রীলংকা যান তিনি। ১৯৩৩ সালে মোহামেডান স্পোটিং কাবে যোগদেন। সে বছর উন্নত মানের খেলার জন্য তিনি হিরোস অব দি গেমস সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানে চলে আসেন সামাদ। বসবাস শুরু করেন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। থাকতেন সাহেব পাড়া মহল্লার ১৪৭নং বাসায়। এই বাড়ীতেই তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। রেলওয়েতে কোন প্লাটফর্ম ইন্সপেক্টর পদ না থাকলেও সামাদের সৌজন্যে রেল কর্তৃপক্ষ এ পদ সৃষ্টি করেছিলেন। শোনা যায় সামাদের সোনার মূর্তি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আজও সংরক্ষিত আছে। ভারতের পশ্চিম বাংলায় পূর্নিমা জেলার বিহারে ১৮৯৫ সালে সামাদের জন্ম হয়। তার পুরো নাম সৈয়দ আব্দুস সামাদ। পার্বতীপুরের কালিবাড়ী ইসলামপুর কবরস্থানে শায়িত আছেন ফুটবলের এই মহাপুরুষ। তার নামে পার্বতীপুরে একটি মিলনায়তন আছে যার নাম ফুটবল জাদুকর সামাদ মিলনায়তন। সামাদের মৃত্যুর ২৫ বছর পর ১৯৮৯ সালে ৫২ হাজার টাকা ব্যায়ে তার সমাধিস্থল নির্মান করে সরকার। এর পরেও আরো ২৭ বছর অতিক্রম হলেও সরকারী কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় নষ্ট হতে বসেছে তার স্মৃতি সৌধ, মিলনায়তন। দখল হয়ে গেছে তার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। সামাদ স্মৃতি ক্রীড়া সংঘের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, কোন রকম সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই কাবটি সামাদের জীবনী নির্ভর বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। আজ পর্যন্ত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় অথবা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি সামাদের কর্মসূচী পালন করতে। সরকারী পৃষ্টপোষকতা আর প্রচারের ব্যবস্থা না থাকায় নতুন প্রজন্মের শিশুরা ভূলে যেতে বসেছে সামাদের ইতিহাস। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে সামাদের জীবনী তুলে ধরার আহ্বান জানান।

Loading