রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে অবৈধ গাড়ির রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি

প্রকাশিত: ৩:১৩ অপরাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১

বাদুলা ত্রিপুরা (জ্যেষ্ঠ চিত্রসাংবাদিক একাত্তর টিভি) রাঙ্গামাটির রাজস্থলী থেকে ফিরে:- বাংলাদেশে সব জায়গায় অবৈধ গাড়ি চালানো দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইন ভঙ্গ হলে শাস্তি স্বরূপ নগদ অর্থদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলায় সড়ক পরিবহন আইনের কোন তোয়াক্কাই নেই। অধিকাংশই জীপ ও তিন চাকার (সিএনজি) যানবাহনের নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। কোনরকম নীতিমালা ছাড়াই এসব গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। শুধু তাই নয় সেসব অবৈধ গাড়ির মালিকরা আবার গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছে অদক্ষ লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে। ফলে প্রায় সময় দূর্ঘটনার মত ঘটনাও ঘটছে। এসব অবৈধ গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন বেপরোয়া গাড়ীর চালকদের ভুলের খেসারত দিচ্ছে অসাচন্দ্র ত্রিপুরা (৩৮) নামে রাজস্থলীর মিটিঙ্গ্যাছড়ির এক পাড়া বাসিন্দার। গত ১৮ আগস্ট রাজস্থলী সদর হতে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় দূর্ঘটনা ঘটে। সেসময় গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ও দু’পায়ের গোড়ালির হাড় ফেটে যায়। পরে খবর নিয়ে জানা যায়, যে গাড়িটা চালাচ্ছিলেন তার কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিলনা। এখন তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে বেকার হয়ে বসে আছে। অথচ তার পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জমক্ষম ব্যক্তি। যার উপর বাকি পরিবারের সদস্যরা নির্ভরশীল।

শারিরীক অবস্থা খোঁজ নিতেই অসাচন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, কারও সাহায্য ছাড়া নড়তে চড়তে পারিনা, পায়ে প্রচুর ব্যাথা খুবই কষ্টে আছি। কতদিন যে এভাবে বেকার বসে থাকতে হবে জানিনা। জুমে আগাছা পরিস্কারের কাজ অনেক বাকি রয়েছে। সঠিক সময়ে পরিস্কার করতে না পারলে ধানও হবেনা তখন না খেয়ে দিন পার করতে হবে। দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় সেসব বিষয় জানেন না তিনি।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, দূর্ঘটনায় কবলিত গাড়ির মালিকের নাম লিটন বণিক। তাঁর রাজস্থলী সদরে ঔষধের (ফার্মেসি) দোকান রয়েছে। অতি লাভের আশায় পুরাতন গাড়ি কিনে এনে ব্যবসায় নামিয়েছেন। তাঁর জীপ গাড়িগুলো রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি সড়কে যাত্রী পরিবহন করে।

গাড়ির মালিক লিটন বণিক বলেন, তাঁর গাড়ির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। পাহাড়ে কোনরকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এসব গাড়ি চলাচল করতে পারে। ড্রাইভারের কোনো বৈধ লাইসেন্স ছিল কিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন বাবু খান (ড্রাইভার) তার কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। তাহলে বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানোর জন্য কিভাবে ড্রাইভার হিসেবে দিলেন তার প্রশ্নের সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেন নি।

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলেন, কিছু অসাধু চক্র বেশী লাভের আশায় কোন প্রতিষ্ঠান বা মালিকের কাছ থেকে অচল ও পুরাতন গাড়ি কম দামে কিনে নেয়। এরপর সেই মেয়াদহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোকে কোন রকম ঘষামাজা করে তার উপরে রঙ লাগিয়ে নতুনের মত চকচকে বানিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সড়কে যাত্রী পরিবহনের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়িকে শুধুমাত্র রঙ করিয়ে যাত্রী পরিবহনের জন্য সড়কে ছেড়ে দিলে বড় রকমের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাঙ্গামাটি সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মো. শফিক উল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি সদর হতে রাজস্থলী উপজেলা অনেক দূরে হওয়ায় এসব অবৈধ গাড়ি চলাচল অনেকটা তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে, বিষয়টি জানার পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এসব অবৈধ গাড়ি চলাচলের অভিযান চালাবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

Loading