দেয়ালে-সিঁড়িতে রক্তে লেখা স্বাধীনতা – অনিন্দ্য টিটো

প্রকাশিত: ৮:০৮ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১৬, ২০২১
জীবন মানেই কেবলি হেরে যাওয়া!
শৃঙ্খলিত স্বপ্ন, দাসত্বের হাজার বছর;
মেঘের আড়ালে মুক্তির সূর্য
হাসফাস করে, বায়ান্ন থেকে একাত্তর।
অতঃপর— স্বর্গীয় দ্যুতি ছড়িয়ে
আকাশের ওপারের আকাশ থেকে
মৃত্তিকায় নেমে আসে একটি জোর্তিময়ী মুখ
সতেরো মার্চ উনিশ’ বিশ
টুঙ্গিপাড়া হয়ে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর।
তাঁর কবিজনোচিত অবয়ব
দীর্ঘদেহী গায়ে সাদা পাঞ্জাবি
কাঁচা-পাকা চুল, হাতে পাইপ
চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা
তর্জনীতে মুক্তির আড়ম্বর!
জনসমুদ্রে এসে দাঁড়ালেন ত্রাতা
উচ্ছ্বসিত লাখো বিদ্রোহী স্রোতা;
আগুন তর্জনী উচিঁয়ে আকাশে
ডাক দিলেন বজ্রকণ্ঠে—
‘এবারের সংগ্রাম-আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম-স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
একটি তর্জনী থেকে
একটি বজ্রকণ্ঠ থেকে
ছড়িয়ে গেল সেই ডাক, মুক্তির আগুন হয়ে
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের নদী-জলাশয়ে, পাহাড়-অরণ্যে
সংগ্রামী তরঙ্গে উঠল জেগে শহর-বন্দর-গ্রাম।
কী অদ্ভূত, অবিশ্বাস্য, পনেরো আগস্টে ঘাতকেরা
সেই তর্জনী থেকে
সেই বজ্রকণ্ঠ থেকে
সেই কবিজনোচিত অবয়ব থেকে
রক্ত ঝরাল একে একে আঠারো গুলিতে।
সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে রক্তের স্রোতধারা
মিশে গেল স্বদেশের মানচিত্রে
মিশে গেল শ্রাবণের শস্যক্ষেতে
মিশে গেল ভোরের রক্ত-রঙা আকাশে
মিশে গেল স্বাধীন ভূখণ্ডে, মেঠোপথের ধূলিতে।
বত্রিশ নম্বর বাড়ির গম্বুজে, দেয়ালে-সিঁড়িতে
রক্তে লিখে গেলেন স্বাধীনতা;
শোকের পোশাকে ঢেকে থাকা দিনগুলিতে
জ্বেলে গেলেন শক্তির ঐশ্বরিক আগুন!
বঞ্চিতের বুকে এখন সংগ্রামী সাহস
নেই ডর-ভয়, নেই দীনতা;
বিশ্বসভায় উন্নত বাঙালের শির
দু’চোখে ঝিকমিক করে মুক্ত ফাগুন!
• আগস্ট ১৫, ২০২১।
ছবিঋণ– রাজেশ চক্রবর্তী
সিনিয়র ফটোসাংবাদিক, যুগান্তর।

Loading