পাঁচগুণ আগ্রহ বেড়েছে করোনা টিকা গ্রহণে

প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ , ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১

বাংলাদেশে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী করোনাভাইরাস প্রতিরোধী গণটিকা কর্মসূচী শুরুর পর নানা ধরনের আশঙ্কার কারণে টিকায় গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন না অনেকে।

করোনাভাইরাসের গণটিকাদান শুরু হলে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্ধে ছিল সাধারণ মানুষ। তবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। টিকা গ্রহণে বেড়েছে আগ্রহ। ওয়েবসাইটে নিবন্ধন শুরুর দুই দিন যত নিবন্ধন হয়েছিল-তা এখন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক এবং ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড যৌথভাবে বিশ্বজুড়ে এক জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশের মতো মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে আগ্রহী।

গণ-টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয় দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেয়ার মাধ্যমে। তারপর বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধান, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনীর উদ্ধর্তন কর্মকর্তা, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বেশ কিছু কূটনীতিক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, গায়ক, অভিনেত্রী এরকম অনেকে টিকা নিয়েছেন এবং তা সম্পর্কে গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।

ঢাকায় ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বেরোনা ডি কস্তাকে প্রথম টিকা দিয়ে দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমে সংযুক্ত থেকে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওই সময় পর্যবেক্ষণের জন্য দু’দিনে প্রায় ছয়শ’ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়। সেদিন থেকেই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ওই দিন থেকে ৭ ফেব্রয়ারি দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচি শুরুর পর ১২ দিনে নিবন্ধন হয়েছিল পাঁচ লাখের মতো। কিন্তু এরপর গত সাত দিনে নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচগুণ। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫৮৪ জন ভ্যাকসিনের জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন।

১৭ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২০৩ জন পুরুষ এবং ৮১ হাজার ৫৫২ জন নারী রয়েছেন। এ পর্যন্ত সারাদেশে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ জন করোনা টিকা গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৬৮ হাজার ৭১৯ জন এবং নারী ৫ লাখ হাজার ৬৪৯ জন রয়েছেন।

এ পর্যন্ত টিকা গ্রহিতাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৯ জন। যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭১ হাজার ৩৭৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪২, রাজশাহী বিভাগে ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৪২ জন, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২০৪, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৮১ হাজার ৬২১, বরিশাল বিভাগে ৭৬ হাজার ৮০৫ এবং সিলেট বিভাগে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৬১ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা নিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। টিকা নেয়ার পর ড.হাছান বিএনপি’র যেসব নেতারা টিকা নিয়েছেন বা নেয়ার পক্ষে কথা বলছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। তথ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিৎ চৌধুরী টিকা নেয়ার পর বাসস’কে জানান, টিকা নিয়ে নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে, অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেছে। গুজবে নয়, বিজ্ঞানে আস্থা রাখুন। ভ্যাকসিন নেয়ার পর আমার কোনো প্রতিক্রিয়া অনুভূত হয়নি। মাত্র ৭-৮ সেকেন্ড সময় লাগে। ভয় পাওয়ার কোনা কারণই দেখছি না।

সবাইকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সরকার ‘অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থাপনায়’ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য টিকার বিকল্প নেই। টিকা নিতে হবে সবাইকেই। আমরা টিকা নিলাম, আর আপনি নিলেন না, তাতে কিন্তু আমরা নিরাপদ ভাবতে পারি না।

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে টিকা নিয়ে সাজু খায়ের বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সম্পর্কে শুরুতে আমি সন্দিহান ছিলাম। পাশের দেশ ভারতে টিকা নেবার পর কারো কারো মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, এমন খবর শোনার পর আমি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু দেশের সকল মন্ত্রী,এমপিরা যখন এই টিকা নিচ্ছেন তখন আমার নিতে আরা কোন দ্বিধা নেই। তাই টিকা নিলাম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নিতে দেখে আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে। এটা অবশ্যই মোটিভেশন হিসেবে কাজ করেছে। লোকজন দেখেছে এদের কিছু হচ্ছে না। তারা উৎসাহ দিচ্ছে। এ কারণেই শুরুর দিকে মানুষ টিকা গ্রহণে কম আগ্রহ দেখালেও এখন টিকা গ্রহণে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সূত্র : বাসস

Loading