ধামরাইয়ে পঙ্গুত্বই কেড়ে নিচ্ছে জীবনের বাবলু

প্রকাশিত: ৯:৩৩ অপরাহ্ণ , জানুয়ারি ৩, ২০২১

 

 

দশ বছর বয়স থেকেই আশরাফুল ইসলাম বাবলু নামের এক মেধাবী ছাত্র দুটি পা’য়ে ভরদিয়ে হাঁটা বা চলাফেরা করতে পারে না। মনোবল না হারিয়ে নিজের ইচ্ছা ও অদম্য সাহস নিয়ে ৩ চাকার হুইল চেয়ারে বসে তা দু’হাতের সাহায্যে চালিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিয়েছে উচ্চত্বর ডিগ্রী।
জীবনে স্বপ্ন ছিল সুস্থ্য স্বাভাবিক অন্য দশজনের মতো উচ্চত্বর ডিগ্রী নিয়ে করবে ভালো চাকরি করে মানুশের সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবে।
ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের দেপাশাই গ্রামের মৃত নাসিরুদ্দিনের ছেলে মোঃ আশরাফুল ইসলাম বাবলু নামের এক যুবক। প্রায় ১০ বছর বয়স থেকেই নিয়তি তাকে বসিয়ে দিয়েছে হুইল চেয়ারে ।এভাবে কেটে গেল প্রায় ২০ বছর। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে না পারায় ( পঙ্গুত্বের কারণে ) খোঁজে পাচ্ছে না কোন চাকরি বা কর্মক্ষেত্র।
পরিবারের ভরণ পোষণে একটি চাকরির জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুফল পায়নি।অবশেষে কোন উপায় বা চাকরি না পেয়ে অবশেষে কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে মুদি দোকানদারী।বর্তমানে দোকানের জায়গা টুকুও চলে যাওয়ার পথে।
এ প্রতিবেদকের কাছে কান্না বিজরিত কষ্টে এমন কথা জানালেন আশরাফুল ইসলাম বাবলু। এসময় বাবলু বলেন, ১৯৯৫ সালে নিজ বাড়িতে গাছ থেকে পড়ে তার কোমড় থেকে দেহের নিচের অংশ অবস হয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। প্রথমে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
পরে সাভারের সিআরপিতে (প্রক্ষাঘাত পূর্নবাসন কেন্দ্র) চিকিৎসা নিয়ে কোন রকমে সুস্থ হয়।পরবর্তীতে যশোরের ‘আশার বাড়ি’ নামক খ্রিষ্টান মিশনারীদের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে চিকিৎসা নেন এবং সেখান থেকেই কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। এরপর মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিবিএস(অনার্স) ও যশোর সরকারি কলেজ থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রী শেষ করেন।
বাবলু আরো বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়।ছোট ভাই সরকারি চাকরি পেয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে।
বাবা মারা গেছে অনেক আগে।মা আবার অন্যত্র সংসার পেতেছে। আমি লেখা-পড়া করে মানুষের ধারে ধারে একটি ছোট খাট চাকরির জন্য ঘুরতেছি।পঙ্গুত্বের কারণে কেউ একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়নি। শুধু আশার বানিই শুনে যাচ্ছি। আর সেই সুযোগ আমার জীবনে এখনো আসেনি। কবে আসবে তাও জানি না।
এক প্রসঙ্গে বলেন, আমি বিবাহিত স্ত্রী একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করে।আমি বেকার। কি করবো জানি না।স্ত্রীর বেতনের টাকায় সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছে।
অবশেষে মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে রাস্তার পাশে একটি মুদি দোকান শুরু করে ছিলাম। এখন তাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জমির মালিক তার পুরো জমি ভরাট করে মার্কেট করবে।সেখানে দোকান নিতে অনেক টাকা সিকিউরিটি হিসেবে জমা দিতে হবে। তা আমার মতো ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়।
বাবলু আরো বলেন, এখন জানি না সৃষ্টিকর্তা আমার ভাগ্যে কি রেখেছে। জীবনে সর্বোচ্চ আশা নিয়ে লেখাপড়া করেছি কিন্তু একটি পিয়নের চাকরিও পেলাম না। কেউ কোন দিন সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিলো না।
প্রতিবন্ধী হিসেবে অন্তত একটি গার্মেন্টসে চাকরি পেলেও জীবনের সব কষ্ট ভুলে থাকতো বলে বাবলু জানিয়েছেন।

 

 

 

Loading