বহাল তবিয়তে প্রতারক

চট্টগ্রামে একই জমি বারবার বিক্রির প্রতারনা

প্রকাশিত: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ৩, ২০২০

নিজের মালিকানা জমিতে ঘর বেধে নিরাপদে ঘরসংসার করার কার না ইচ্ছা। এই ইচ্ছা থেকেই মানুষ একখন্ড জায়গা কিনার চেষ্টা করে যায়। এরই সুযোগ নেয় কতিপয় ধূর্ত জমির মালিক ও তাদের সহযোগী দালাল চক্র। চট্টগ্রামের চান্দগাও থানাধীন এলাকায় একই জায়গা বারবার বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এক সচতুর ভুমি ব্যবসায়ী।জানা যায়, চান্দগাঁও থানার সাধুপাড়ার মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র আব্দুস শুক্কর জাল দলিল সৃজন ও তার দেয়া কবলাকে অস্বিকার করে পৈত্রিক ও খরিদা সুত্রে পাওয়া একই জায়গা বারবার বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়া যেন তার এক নেশা। তার এই নেশার ছোবলে অনেক ভুক্তভোগী নিঃস্ব হয়ে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, একই জমি বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করে আব্দুস শুক্কর মানুষের মাঝে বিভেদ ও মামলা-মোকাদ্দমায় জড়িযে দেয় এবং সেই সাথে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। আব্দুস শুক্কর ধরাকে সরা জ্ঞান করে কৌশলে এই ধরনের ঘৃন্য জাল জালিয়াতি চালিয়ে পার পেয়ে যায়। জাল জালিয়াতি করে আব্দুস শুক্কর লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেলেও যারা তার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে তারা হয় দখলে যেতে পারেনি অথবা দখলে গেলেও মামলা মোকাদ্দমা ও পুলিশী হয়রানির স্বীকার হতে হয়।
জানা যায়, আর, এস দাগ নং ৯৩৩০, ৯৩৩১,৯৩৩২, ৯৩৩৩ বি,এস দাগ নং ১১৪৩৩, ১১৪৩৪, ১১৪৩৫ দাগের জায়গার ৪ গন্ডা ৩ কড়া দুই কন্ট গত ২৯/০১/১৯৮৭ ইং তারিখ ১৮৫ নং কবলা মুলে প্রথমে হারুন সওদাগরের কাছে বিক্রি করেন আব্দুস শুক্কর। বিক্রির বিষয়টি গোপন রেখে একই জায়গা রুপালী ব্যাংক কালূরঘাট শাখায় গত ১৪/১১/১৯৮৭ইং তারিখে রেজিষ্টিকৃত ১৭০৬ নং দলিল মুলে বন্ধক দিয়ে টাকা গ্রহন করেন। পরবর্তীতে একই জায়গার দালাল সেজে হারুন সওদাগরের সাথে আতাত করে নিজে ১নং স্বাক্ষী হয়ে ১০/১০/১৯৯৫ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ২০০৩নং দলিলমুলে পুনরায় ছিদ্দিক গংদের নিকট তার বিক্রিত ২ গন্ডাসহ জনৈক ইছহার চৌধুরীর ৩ গন্ডাসহ সর্বমোট ৫ গন্ডা সম্পত্তি বিক্রি করেন। এই প্রতারক আব্দুস শুক্কর উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় ও ব্যাংকে বন্ধকের বিষয়টি গোপন করে উক্ত ২ গন্ডা সম্পত্তি পুনরায় বিক্রির উদ্দেশ্যে রাউজান থানার আবদুস ছাত্তার ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তারের সহিত বিগত ০২/১১/২০০৫ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ৩৪০৯নং বায়না করেন।
এদিকে ব্যাংকের ঋন পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক বিজ্ঞ অর্থঋণ আদালতে মানি স্যুট মামলা করে ডিক্রি প্রাাপ্তে ১১০০/০৩ নং জারী মামলা করে বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম ও বিজ্ঞ আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করার পর আব্দসু শুক্কর মহামান্য হাইকোর্টের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধের নিমিত্রে তপশীলোক্ত বন্ধকী সম্পত্তি পুনরায় হান্নান মিয়ার কাছে পনের লক্ষ টাকা গ্রহন করে প্রথমে বায়না মুলে এবং পরে কবলামুলে বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা ও বায়নাকৃত ছাত্তারের টাকা পরিশোধ করেন। প্রতারক শুক্কর থেকে উপরোক্ত দাগের সম্পত্তি ক্রয় করে হান্নান মিয়া তার ক্রয়কৃত জায়গায় বসবাসের জন্য গৃহ নির্মান করতে গেলে ছিদ্দিক আহম্মদ গং এই জায়গা তার খরিদা সম্পত্তি দাবী করে হান্নান মিয়াকে ঘর নির্মানে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে হান্নান মিয়া শুক্করের কাছে ছিদ্দিক আহমেদের খরিদকৃত বিষয়টি জানতে চাইলে শুক্কর অস্বিকার করে। এতে ছিদ্দিক গং আব্দুস শুক্কর সহ তার সহযোগীদেও আসামী কওে বিজ্ঞ আদালতে প্রতারণা ও চাদাবাজীর মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বিভাগ মামলা নং ৩৯/২০০৭ দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আব্দুস শুক্কর সহ অপরাপর ৬৯ জনকে বিভাদি করিলেও একমাত্র হান্নান মিয়া ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কনট্রেষ্ট করে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করার পর হান্নান মিয়া একজন প্রবাসী বিধায় কাজী মোহাম্মদ মনির উদ্দিনকে আমমোক্তার নামা মুলে এটর্নি নিযুক্ত করেন। কাজী মুনির উদ্দিন ক্ষমতা পেয়ে হান্নানের মালিকানাধীন কলোনী সংস্কার করার উদ্যগ গ্রহন করিলে পুনরায় প্রতারক আব্দুস শুক্করের প্রতারণার নেশা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। সুচতুর আব্দুস শুক্কর হান্নান মিয়া থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করার পর হান্নান মিয়ার ক্রয়কে আবারো প্রতারনার বেড়াজালে ফেলে দিয়ে হান্নান মিয়াকে শুক্করের দেয়া কবলা দলিলকে অস্বিকার করে মামলা দায়ের করেন। মামলার বেড়াজালে ফেলে দেন হান্নান মিয়ার কবলাকে। হান্নান মিয়ার দখল পাওয়া জমিতে ভাড়ায় লগিয়তের উদ্দেশ্যে হান্নান মিয়া ঘর নির্মান করে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ নিয়ে ভাড়াটিয়া বসিয়ে দেয়ার পরও কুটচাল চালিয়ে যাচ্ছেন আব্দুস শুক্কর। শুক্কর হান্নান মিয়াকে দেয়া কবলা অস্বিকার করলে হান্নানের এটর্নি মনির উদ্দিন বাদী হয়ে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সি. আর মামলা ৩০৮/২০২০ইং দায়ের করেন। যা এখনো তদন্তানাধীন আছে। প্রতারনার নতুন কুটকৌশল করে হান্নান মিয়ার ভাড়াটিয়া খোকনশীল ও শাবলশীলকে বিভিন্ন ছল চাতুরীতে ভাড়া অনাদায়ী রাখতে বলে এতে কাজী মুনিরুদ্দিন ভাড়াটিয়া খোকন ও শাবলকে বিবাদী করে সিএমপি চান্দগাও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মফিজ উদ্দিন বলেন, অভিযোগের সত্যতা স্বিকার করে বলেন, ভাড়াটিয়াদেরকে নোটিশ দেই। ওসি সাবের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।
এই ব্যাপারে আব্দুস শুক্করের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, আমি কোন প্রতারণা করছি না। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ উঠানো হচ্ছে।

Loading