হঠাৎ জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে রোগীর ভিড়

প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ , মার্চ ২১, ২০২৪

জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নতুন নতুন রোগী। গেল ছয় দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু রোগী জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রোগির চাপে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বেডে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও করিডোরে শুয়ে বসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগিরা। রোগি এবং স্বজনদের পদচারণায় হাসপাতালে পা ফেলানোর জায়গা নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, শুধু জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেই গেল ছয় দিনে প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে এসেছে ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্ক রোগী রয়েছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ওইসব রোগীদের জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে ও বারান্দায় গাদাগাদি করে জায়গা নিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ থেকে থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই ৪৫ থেকে ৭০ জন রোগী আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। বুধবার পর্যন্ত আধুনিক জেলা হাসপাতালে প্রায় ২৫ জন শিশু ভর্তি ছিল।

গেল ছয় দিনে প্রায় চার শতাধিক রোগীকে হাসপাতালের বেডে, মেঝেতে ও বারান্দ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসব রোগীরা প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথা এবং শিশুরা সাধারণত বমি, পাতলা পায়খানা ও পেটের ব্যথায় ভুগছিল, পরে অবস্থা সংকটাপূর্ণ ভেবে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শহরের আরাফাত নগর মহল্লার ৪ বছরের শিশু আরজা, পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের মুরছালিনের অভিভাবকরা জানান, তারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের এলাকার অনেক শিশুরাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

সদর উপজেলার হানাইল গ্রামের স্কুল শিক্ষক জাকির হেসেন বলেন, হঠাৎ ইফতারের পর তার স্ত্রীর পেট ব্যথার পাশাপাশি বমি শুরু হয়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করান। মঙ্গলবার সকাল থেকে আমি নিজেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের পরিবেশ খুব খারাপ। মেঝেতে পা রাখার জায়গা নেই, রোগীদের অনেক চাপ বলে জানান তিনি।

জয়পুরহাট পৌর সভার মুসলিম নগরের গোলাম আজম জানান, প্রথমে পেট ব্যথা তারপর পাতলা পায়খানা শরু হয়। সেহরির সময় যখন পানি পান করি পানিটা ঘোলা ছিল। আমার ধারণা, পৌর পৌরসভার পানির কারণে এই ডায়রিয়া হতে পারে।

জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, পৌরসভার পানির কারণে এই ডায়রিয়ার প্রকোপ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পৌরসভার একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পানি সংগ্রহ করে বগুড়া ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে।

জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: রাশেদ মোবারক বলেন, শুষ্ক মৌসুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যেতে পাড়ে বলে আমরা ধারণা করছি। শহরে রাস্তার কাজ চলছে পানির লাইন ফেটে যাওয়ার কারণে সাপ্লাই পানি দুষিত হয়ে এই সমস্যা হতে পারে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের মাত্রাটা বেশি। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৪০০ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

Loading