এই দুর্নীতির শেষ কোথায়!

প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ , জুলাই ২৫, ২০২০

মো. আলী আশরাফ মোল্লা

বিশ্বে যখন করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য সারা বিশ্বের সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে সরকার বাহাদুর পর্যন্ত বেশ আন্তরিক সেখানে আমাদের দেশে কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তির কারনে সরকারের এই কঠিন চ্যালেঞ্জ প্রশ্নের সম্মুখীন! আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলা করার জন্য এবং দুর্নীতি কে নিমূর্ল করার জন্য যতটুকু আন্তরিক তার শতভাগের এক ভাগ ও যদি আজকে আমাদের মধ্যে থাকতো তাহলে এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে আমাদের এতো দুর্নাম হতো না। এতো কেলেংকারী হতো না। স্বাস্থ্য খাতের এই অনিয়ম তো একদিনেই হয় নি। দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধরে সময় নিয়েই অত্যন্ত সুচারু ভাবে এই অনিয়মগুলো চালিয়ে গেছে। শুধু স্বাস্থ্য খাত নয় এমন অনেক খাতেই রয়েছে যেখানে অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোন অনিয়ম চলতে থাকলে একসময় সেটিই নিয়মে পরিণত হয়ে যায়!
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো স্বাস্থ্য খাতের এই ভগ্ন দশা নিয়েই। আমাদের বাংলাদেশে মার্চে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর দিকেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বহু গুনেই বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই সাম্প্রতিক সময়ের বহুল কেলেংকারীর মাধ্যমেই তা প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রতারক শাহেদ তো আর একদিনেই এতো কিছু বনে যায় নি!তার এই উত্থানের পেছনে যারা রয়েছেন রাজনীতিবীদ, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার মানুষ তাদেরকে ও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরী। তাকে যারা বিভিন্ন অপকর্মে সাহায্য সহযোগীতা করেছে তাদেরকে যদি ধরা যায় তবেই কেবল এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিব্রতকর পরিবেশ ভবিষ্যতে আর দেখতে হবে না! এই বিশ্ব প্রতারক সাহেদ থেকে কারা কি ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন তাও খতিয়ে দেখতে হবে। ভণ্ড,মুখোশধারী, লেবাসধারী, প্রতারক সাহেদের মতো ব্যক্তিদের কারনে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হোক, সেটা আমরা কেউই চাই না। সরকার বিব্রত হোক সেটাও চাই না। শুধু চাই তার এবং তার মদদ দাতা ব্যকিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যারা এই মহামারীর সময়ে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে অন্তত তারা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। শুধু টাকা কামানের মেশিন হিসেবে তারা সরকারের এবং দলের বিভিন্ন ভি আই পি ব্যাক্তির সাথে ছবি তুলেছে এবং সামাজিক ভাবে অপপ্রচার করেছে। আর তা দেখিয়েই সাধারণ জনগন কে তারা বিভিন্ন কলাকৌশলে ফাকিঁ দিয়ে কাড়িঁকাড়িঁ টাকা কামিয়েছে। জনগনকে ধোকা দিয়েছে, বোকা বানিয়েছে। তবে, আশার বানী প্রতারক সাহেদের শেষ রক্ষা আর হয়নি ধরা খেয়েছে। বোরকা পড়ে ভারতে পালিয়ে যাবার সময়েই র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে রিমান্ডে আছে।

ডাক্তার সাবরিনা, যিনি তার রুপে গুনে যৌবনের বিভিন্ন কলা কৌশলে স্বাস্থ্য খাতের সহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের ম্যানেজ করার দুর্দান্ত অপকৌশল আয়ত্ব করে তার জালে আবদ্ধ করে ফেলেছিলেন। দুর্নীতি আর অনিয়ম করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভাগিয়ে নিয়েছিলেন করোনা টেস্ট করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি। জেকেজি নামে গড়া লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল। এই হাসপাতালেই করা হতো হাজারও করোনার ভুয়া টেস্ট। দেওয়া হতো মনগড়া রিপোর্ট। করোনার পজেটিভ নেগেটিভ হাজার হাজার মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে মানুষের জীবন নিয়েই ছিনিমিনি খেলতে তিনি বেশ পছন্দ করতেন! আর তার উদ্দাম দেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তার জন্যই নিজেই ছেড়ে দিতেন। আর এই সব অপকর্মে সাহায্য করতেন তার কথিত স্বামী জেকেজি হাসপাতালের পরিচালক আরিফ চৌধুরী। ডাক্তার সাবরিনা এবং আরিফ চৌধুরী মিলে করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন বাড়ি লোক পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতো আর সেগুলো রাস্তায় ফেলে দিয়ে মনের মতো ভুয়া রিপোর্ট ধরিয়ে দেওয়া হতো। তাদের এই অপকর্মে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে আন্তর্জাতিক ভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। যার ফল স্বরুপ ইতালি তে যাওয়া বাংলাদেশের প্রায় পৌনে দুইশত লোককে ফেরত পাঠিয়েছে। ভুয়া করোনার রিপোর্ট এর কারনে।

শারমিন জাহান, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেত্রী। তিনি নকল এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহ দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইউনিটে। যার কারনে অনেক ডাক্তারের জীবন হয়েছে দুর্বিষহ। ডাক্তাররাই নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছেন এই নকল মাস্ক ব্যবহার করার কারনে। যিনি নকল এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার করার জন্য সাপ্লাই করেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে টাকা কামানোর নেশা জাতির জন্যই বিপদজনক। এই মহামারীতে এভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া কতটা নির্লজ্জতার! একবার ভেবে দেখুন।

রাজধানী সহ সারা দেশে লাইসেন্স বিহীন হাসপাতালের ছড়াছড়ি। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রায় বেসরকারি হাসপাতালের কোন লাইসেন্স নেই। র‍্যাবে ইতিমধ্যে অনেক গুলো হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমার প্রশ্ন, স্বাস্থ্য মমন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তি গন তো অবশ্যই এই বিষয় গুলো জানেন। তাহলে তারা জেনে শুনে কীভাবে লাইসেন্স বিহীন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়? এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠিন এবং কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতির এবং অনিয়মের ব্যথর্তার অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদত্যাগ করেছেন।

আরও যারা অনিয়মের সাথে সরকারি কেনাকাটার সাথে জড়িত, যারা সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম করেছে,দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের সকল মালামাল কেনাকাটায় স্বচ্ছতার সাথেই করতে হবে। যারা এর ব্যত্যয় ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু এই কেনাকাটায় দুর্নীতি কমলে জনগন এর সুফল পাবে আর রাষ্ট্রের অর্থও অনেক বেচেঁ যাবে।

এই সাহেদ, সাবরিনা, আরিফ চৌধুরী দের মতো লোকদের কে যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে এর মূলোৎপাটন করতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদের প্রত্যেক কে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। এই মহামারীর সময়েও যারা দু

Loading