‘আমরা না করলে প্রকৃতি আমাদের ‘ঘর’ পরিষ্কার করে দেবে’ নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ , জুন ১০, ২০২০ আমাদের এই গ্রহকে রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে? মার্কিন লেখক, পরিবেশবিদ, ডিপ গ্রিন রেজিসট্যান্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ডেরিক জেনসেন মনে করেন পৃথিবীকে পরিষ্কার করতে হবে এবং তা করতে প্রয়োজনে প্রস্তর যুগে ফিরে যেতে হবে৷ ?? : আপনি তো প্রচলিত ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান, তাহলে কি আপনি সভ্যতা-বিরোধী? ডেরিক জেনসেন : একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, আমি সভ্যতা-বিরোধী মানে কিন্তু এই নয় যে, আমি সংস্কৃতি-বিরোধী নই৷ এমন একটা ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, সব সংস্কৃতিই সভ্যতা, আসলে কিন্তু তা সত্যি নয়৷ বলতে চাইছি, আমাদের জীবনযাপন প্রণালীর ভিত্তি হলো এই গ্রহটিকে একটা মেশিনের মতো করে তুলতে প্রকৃতির ক্ষতি করে যাওয়া৷ তাতে কিছু টেকসই হয় না, শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোনোদিনই হয়নি৷ আমি এখন উত্তর ক্যারোলাইনায় থাকি৷ কমপক্ষে ১২,৫০০ বছর এখানে টলোয়াই ইন্ডিয়ানরা বসবাস করেছে৷ ১৯০ বছর আগে এখানে যখন ইউরোপীয়রা এলো, জায়গাটা তখনও স্বর্গের মতো ছিল৷ এখান থেকে একটু দক্ষিণে ক্লামাথ নামের একটা নদী আছে৷ সেখানে কালো টলমলে জলে স্যামন মাছ ভেসে বেড়াতো৷ স্যামন মাছ নেই বলে সেখানে গত কয়েক বছর ধরে ইন্ডিয়ানরা আর স্যামন উৎসব করতে পারছে না৷ দৃষ্টিভঙ্গিটা রোমান্টিক হয়ে গেল না? প্রস্তর যুগে ফিরে যাওয়া মানে তো ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর এক জীবন, প্রতিনিয়ত অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম৷ সত্যিই তা চান আপনি? আমি কী চাই সেটা কোনো ব্যাপার নয়৷ টেকসই ব্যাপারটা আসল৷ এ্মন জীবন যাপন বেশিদিন চলতে পারে না৷ তবে আমি মানুষের বিরুদ্ধে নই৷ এই গ্রহে মানুষ তো এক হিসেবে ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ বছর টিকেছে৷ এর বেশিরভাগ সময়ই আমরা টেকসই উপায়ে বেঁচেছি৷ কিন্তু সভ্যতা সবসময়ই ধংসাত্মক৷ সেটাই সমস্যা৷ প্রাক-সভ্যতা যুগে ফিরে গেলে আমরা সমান্তরাল ধংসপ্রক্রিয়া দেখতে পাবো; যেমন ব্যবসা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হারিয়ে যাওয়া৷ আমার কাউন্টিতে এখন ৩৫ হাজার মানুষের বাস৷ সভ্যতা শুরুর আগে এখানে ১৮ হাজারের মতো মানুষ ছিল৷ তাদের কোনো রেফ্রিজারেটর ছিল না৷ আসলে রেফ্রিজারেটরের দরকারও ছিল না, কারণ, তাদের তো নদীভরা স্যামন মাছ ছিল৷ আমাদের নদী ভর্তি স্যামন মাছ নেই বলেই নিজেকে এক কোণে যতন করে এঁকে রেখেছি৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মহাসাগর মাছশূন্য হয়ে যেতে পারে৷ কিন্ত আপনি যে সিস্টেমের কথা বলতে চাইছেন, তা তো সবাই যোগ না দিলে কার্যকর হবে না? একটা গল্প বলি, তাহলে পুরো ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যাবে৷ ছোট বেলায় মা সবসময় আমাকে ঘর পরিষ্কার করতে বলতেন৷ কিন্তু আমি করতাম না৷ বারবার বলেও কাজ না হওয়ায় মা একদিন বললেন, দেখো, হয় তুমি ঘর পরিস্কার করো, না হয় আমি করবো৷ আমি করলে কিন্তু তোমার পছন্দ হবে না, কারণ, তখন আমি তোমার সব জিনিস ফেলে দেবো৷ তাই আমাদের উচিত নিজেদের ঘরটা পরিষ্কার করতে শুরু করা. কারণ, আমরা যদি না করলে প্রকৃতি আমাদের হয়ে কাজটা শুরু করে দেবে এবং তখন প্রকৃতির কাজটা আমাদের পছন্দ হবে না৷ প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে ঘরটা সত্যিই নোংরা৷ তবে সমস্যা হলো, আমরা সিস্টেমে আসক্ত৷ তাই আমি যে পরিবর্তন চাই তা সবাই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করবে না, কারণ, সিস্টেম তো কেউ ছাড়তে চায় না৷ ডয়চে ভেলে শেয়ার সাক্ষাতকার বিষয়: