পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু

প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ৪, ২০২৩

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)র অবসরে যাওয়া উপ-পরিচালক ছৈয়দ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। পরিবারের দাবি-পুলিশ তাকে পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউতে হৃদরোগ জনিত সমস্যায় তার মৃত্যু হয়েছে।

ছৈয়দ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর বড় ছেলে ইউএস বাংলার পাইলট ক্যাপ্টেন নাফিস শহিদ বলেছেন, রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানার দু’জন সহকারী উপ-পরিদর্শক গিয়ে আমার বাবাকে থানায় নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার চাচারা থানায় যান। তিনি হার্টের রোগী। তাকে সব সময় ইনহেলার আর ওষুধ নিতে হয় সব সময়। বাবাকে থানায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূলফটক বন্ধ করে দেয়। ইনহেলার ও মেডিসিনও বাবার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। পরে বারোটার দিকে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আমি ঢাকায় ছিলাম।

তিনি বলেন, আমাদের জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধ ছিল। তবে সা¤প্রতিক কোনো মামলার বিষয়ে আমরা শুনিনি। এমনকি আমার বাবা আদালত থেকে কোনো নোটিশও পাননি।

তবে শহীদুল্লার আরেক পুত্র আসিফ শহীদ অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে আমার আব্বাকে হত্যা করেছে। কোনো ওয়ারেন্ট না দেখিয়েই ধস্তাধস্তি করে বাবাকে নিয়ে যায় পুলিশ। বাবা দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ন্যূনতম সম্মান টুকুন ওনাকে দেয়া হয়নি। মার্ডার করেছে তারা, স্প্রেটা পর্যন্ত নিতে দেয়নি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাÐ।

তিনি আরও বলেন, বাবাকে দু’দিক থেকে দুজন ও একজন পেছনে শার্টের কলার ধরে ছিলেন। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা যেখানে যেখানে আছে সেটা পয়েন্ট আউট করে সেখান দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছৈয়দ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় জসিমউদ্দিন, মো: শাহজাহান, মো: শাহীন, মো: লিটন, মান্নান, নুসরাত তাসুর বিরোধ ছিলো। তার শ্বশুরের কাছ থেকে স্ত্রীর হেবাসূত্রে প্রাপ্ত এ সম্পত্তি নিয়ে একাধিকবার এই ব্যক্তিদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। এ ঘটনায় ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লা বাদী হয়ে চাঁন্দগাঁও থানায় মামলাও করেছেন। ওই সম্পত্তিকে কেন্দ্র আসামিপক্ষ ছৈয়দ শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে সিআর (নালিশী) মামলা করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশকে। তদন্ত পর্যায়ে শহীদুল্লাহকে পুলিশ জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপরই রাতে তার পরিবার মৃত্যুর সংবাদ পায়।

এদিকে পুলিশের এডিসি পংকজ দত্তের দাবি, একটি সিআর মামলায় রাতে তাকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের ১৫ মিনিট পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত পার্কভিউ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে নিহতের সঙ্গে কোনো ধরণের অসদাচারণ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওনাকে গ্রেফতারে খারাপ লাগছে বলে জানান। তখন আমার কক্ষে এনে বসিয়েছি। পরে তার ভাইদের জানিয়ে তাদেরকেসহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এই ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ২০১৭ সালে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। ১৯৮৫ সালে ইন্সপেক্টর হিসেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে তৎকালিন দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে যোগদান করেন। অবসরের পর তিনি চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন। এদিকে পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর পর তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা জানান, শহীদুল্লাহর মতো সৎ, অমায়িক ও প্রাণবন্ত মানুষ হয় না। – ইনকিলাব

 

Loading