শিক্ষকদের চাপে ফেলতে মাউশির চার নির্দেশনা

প্রকাশিত: ১০:৫৫ অপরাহ্ণ , জুলাই ১৮, ২০২৩

শিক্ষকদের চাপে ফেলতে মাউশির চার নির্দেশনা
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষকরা একদফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এসব শিক্ষকের প্রতিনিধিদের ডেকে সোমবার সরকারের তরফে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বান শিক্ষকরা প্রত্যাখ্যানও করেছেন।

এ অবস্থার মধ্যে মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনাসহ তিনটি বিষয় সামনে রেখে নির্দেশনা জারি করেছে। এতে শিক্ষকদের ক্লাসরুমে উপস্থিতির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি (জিবি) ও মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনকেও বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পরোক্ষভাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের চাপে ফেলতেই এমনটি করেছে সংস্থাটি।

তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন, কোনো চাপের কাছে তারা নতি স্বীকার করবেন না। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবি আদায় করেই তারা ক্লাসে ফিরবেন।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ মো. কাওছার বলেন, শিক্ষকরা কোনো রক্তচক্ষুর কাছে নতি স্বীকার করবে না।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল কবির চৌধুরী স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন, কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট শিখন ঘাটতি পূরণ ও শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার কথা উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত জানুয়ারি থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন টিচিং-লার্নিং অ্যাপ্রোচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের (যেমন- প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি, শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সবার) কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করবেন প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি।
দৈনন্দিন শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে শিক্ষকদেরও তা পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়মিত উপস্থিতি অপরিহার্য। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কোনো কোনো শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছেন।

পাশাপাশি এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডিরও কোনোরূপ নজরদারি না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। এতে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস নেয়াসহ গভীর নজর দেওয়া হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের অনিয়মিত উপস্থিতি এ কার্যক্রমসহ শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ভণ্ডুল করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রতিপালনে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এরপর চারটি নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে-
এক. প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি সক্রিয় তদারকি করবে; শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যকর ভূমিকা নেবেন;
দুই. মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে গৃহীত বিশেষ ব্যবস্থা কার্যকর রাখা;
তিন. সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কোনো রূপ মিথ্যা ও উসকানিমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করা;
চার. শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরবছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। উল্লিখিত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনে কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষকদের অবস্থান: মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ১১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। মঙ্গলবার আন্দোলনের অষ্টম দিন অতিবাহিত হয়েছে।

এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের দুই পাশের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাদের এ কর্মসূচির ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র গরমে তৈরি হয়েছে দুর্ভোগ।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এই শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। এমন দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতারা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষক নেতারা ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও সকাল ১১টার দিকে সড়কের দুই পাশই বন্ধ করে দেন শিক্ষকরা। এ সময় পুলিশ এসে সড়কের একপাশ সচল করার চেষ্টা করলে সেখানে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ১১টার পর থেকে দুই পাশের সড়ক দিয়েই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

Loading