সমালোচনার মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সাহিত্য মেলা

প্রকাশিত: ৬:৩১ অপরাহ্ণ , ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩

কামাল পারভেজ

কবি সাহিত্যিকরা খুবই আড্ডাবাজ হয়ে থাকেন। তবে এই আড্ডা কবি সাহিত্যিক ভাষালোপ আড্ডা বলা যায়। আড্ডাতে জমে উঠে তাদের নিজস্ব কাব্যিক ভাষায় কবিতাসুলাপ আলোচনা ও সমালোচনা। তবে দশ থেকে বিশজন কবি সাহিত্যিক যখন এক সাথে আড্ডা দেন তারা সেটাকে একরকম মিলন মেলাও বলে থাকেন। যখন জানতে পারলেন চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে এই প্রথমবারের মতো বৃহৎকারে সাহিত্য মেলা হতে যাচ্ছে। সবাই মহাখুশী এই অপেক্ষাটাই ছিলো চেনা -অচেনা কবি সাহিত্যিকরা একসাথে হবেন চেনা পরিচয় ও মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠবে। কিন্তু অবশেষে ভারাভাতে ঘি ঢেলে দেওয়ার মত হলো। চট্টগ্রামে এই প্রথম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি যৌথ উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসন বাস্তবায়নে গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি দু’দিনব্যাপি সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্য মেলায় যোগদান করতে হলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক দেওয়া ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। কিন্তু কখন ও কত তারিখ এই সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে তা উল্লেখ করেননি ও কাউকে জানানো হয় নি।
একমাস আগে থেকে ফরম জমা নিতে শুরু করেন। কবি সাহিত্যিকরা ফরম জমা দিয়ে যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্থসময় কাটাচ্ছে। এদিকে কোন কথাবার্তা ও বলা ছাড়াই ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করে অনুষ্ঠানের আগের দিন ৪ ফেব্রুয়ারি মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হলো। ঐদিকে কবি সাহিত্যিকরা বইমেলার আয়োজন নিয়েও ব্যস্থ হয়ে পড়েছেন আবার অনেকে বিভিন্ন কাজে চট্টগ্রামের বাইরে চলে গেছেন।
যতটুকু জানা যায় আয়োজক কমিটির দায়িত্বে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি চেয়েছিল হাতে গুনা তাদের নিজস্ব বলয়ের কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে অনুষ্ঠানে শেষ করবেন। হাতে গুনা ১৫-২০ জনকে দুই দিন আগে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে আয়োজক কমিটি সুকৌশলে অনুষ্ঠানের আগের দিন যারা ফরম পূরণ করেছেন তাদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা মেসেজ পাঠিয়ে দিয়ে নিজ কর্তব্য শেষ করলেন। এটা হচ্ছে একটা দায়সারা কাজের রুটিন। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন উদ্বোধন নিবন্ধনের নামে কবি সাহিত্যিকদের লাইনে দাড় করিয়ে ধাক্কাধাক্কির অবস্থাও হয়েছে। আবার অনেকে নিবন্ধন গ্রহীতার স্বাক্ষর করতে পারেনি। যারা দুপুরে এসেছেন তাদের কোন স্বাক্ষর নেননি এবং তারা স্বাক্ষর করতে চাইলে নিবন্ধন তালিকাটি অনেক দূরে আছে বলেন, পরে নেওয়া হবে। উপস্থিত কবি সাহিত্যিকদের দেওয়া একটা কলম একটি নোট প্যাড ও বোতাম ব্যাগ তবে যা ছিল নিম্নমানের, সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে ৯০ টাকা। দুপুরে খাবার সেটাও ছিলো নিম্নমানের রেস্টুরেন্ট থেকে আনা, বিকেলের নাস্তা সর্বোচ্চ ৬০ টাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ও গবেষক মাহবুবুল হক, কবি ও সাহিত্যিক আবুল মোমেন এবং গবেষক মোহাম্মদ শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। উল্লেখ থাকে যে, এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাজ-বিজ্ঞানী অনুপম সেনকে। অবশ্য তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি এবং একজন (যুগ্ম সচিব) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান অতিথি ও একজন উপাচার্য সমাজ বিজ্ঞানী অনুপম সেনকে বিশেষ অতিথি করায় কবি সাহিত্যিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তেমনি আয়োজক কমিটি সমালোনায় পড়েন। সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দেড় ঘন্টা পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধনী সময় ও প্রথম অধিবেশনে প্রায় ১২০-১৫০ মনের মত কবি সাহিত্যিক দেখা গেলেও দুপুরের পর কর্মশালায় ৫০-৫৫ জনের মত উপস্থিত ছিলো। দ্বিতীয় দিন অনুুষ্ঠানে কবি সাহিত্যিকদের কবিতা আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠ নিয়েও চলে ভিতরগত তুলকালাম কান্ড। প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিন তেমন কবি সাহিত্যিকদের সমাগম মেলেনি। আয়োজক কমিটির তিনজন দায়িথ্ব থাকা তারা সুকৌশলে নাম তালিকা করেন এবং তাদের নিজস্ব বলয়ে তারা চেনা পরিচিত কবিদের নামের তালিকা করে নেন।
তাদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে এই সাহিত্য মেলা এই তিনজনের আয়োজনেই হচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও শিল্পকলা অডিটোরিয়াম হলের ভিতর কানাঘুষা হতে থাকে। অনেকে ফরম পূরন করলেও তাদের নাম রাখা হয়নি কবিতা পাঠে। নিজেই গিয়ে উপস্থাপকের কাছে বলে নাম লিপিবদ্ধ করতে হয়েছে। একটা বিশ্রী কান্ড। দ্বিতীয় দিনের সকালের নাস্তাও প্রথম দিনের মত ৬০ টাকা দুপুরে খানাও আগের মতই নিম্নমানের । কবিতা পাঠ ও আবৃত্তিতে কোন সিরিয়াল না মেনে পরিচিত জনদেরকে আগে অপরিচিত কবি সাহিত্যিকদের শেষে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে ৬৫ জনকে নগদ অর্থ দিয়ে সম্মান দেওয়ার নামেও সমালোচনায় পড়েন আয়োজক কমিটি। মনে হয় যেনো ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেওয়া হলো। ৪৫০ টাকা একটা খাম দিয়ে বিদায় দিলেন। কবি সাহিত্যিক বলেন এটা না দিলেও পারতেন। কমপক্ষে ১৫০০-২০০০ দিয়ে সম্মান করতে পারতো। কিন্তু হতাশ হয়ে গিয়ে সাহিত্য মেলা থেকে বিদায় নিতে হলো। কবি তানজিনারাহী দুঃখ করে বলেন, সাহিত্য মেলার নামে এখানেও সজন প্রীতি ও বন্ধুপ্রীতি করেছে, ফরম চাইলেও প্রথম দিকে দিতে চায়নি পরে সিনিয়র এক কবি বলাতে ফরম দেয়। কবি সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, এটাকে সাহিত্য মেলা বলা যাবে না বলতে হবে তেলবাজি মেলা।
লেখক – ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম
আমাদের নতুন সময়

Loading