তৃতীয় লিঙ্গকে চাকরি দিতে বিল আনছেন মমতা

প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ , নভেম্বর ৩০, ২০২২

সরকারি চাকরিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বেশি সংখ্যায় নিয়োগের উদ্যোগ রাজ্যের। এতে কি তাদের বৃত্তির সংকট কিছুটা কাটবে?

২০১৪ সালে ভারতের শীর্ষ আদালত তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই রায় অনুসারে রূপান্তরকামীরা আর পাঁচজন নাগরিকের মতো মৌলিক অধিকার ভোগ করেন। অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও রূপান্তরকামীদের অবস্থার খুব একটা উন্নত হয়নি বলে নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি উদ্য়োগ নিয়েছে। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এ বার থেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা সাধারণ বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। তবে এখনই নয়, বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর। আগামী বাজেট অধিবেশনে বিল এলে তা অনুমোদন করা হবে। এই আিন চালু হলে রূপান্তরকামীদের সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে বলে দাবি রাজ্যের।

কোভিড পরবর্তী সময়ে এমনিতেই বেকারত্বের হার যথেষ্ট বেশি। বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সররকারি ক্ষেত্রেও নিয়োগ সংকুচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের সামনে চ্যালেঞ্জ আরো কঠিন। গত জুলাইতে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার ছিল পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। অক্টোবরে ছিল চার দশমিক আট শতাংশ।

এখনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পথেঘাটে, ট্রেনে-বাসে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিযুক্ত থাকতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষের কাছে অর্থ সংগ্রহ করে এই সমাজের একটা বড় অংশকে অন্ন সংস্থান করতে হয়। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের অনেকে ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সেই হার অনেকটাই কম।এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন রূপান্তরকামীদের একটা অংশ। শুধু চাকরি নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও রূপান্তরকামীদের জন্য সুখবর থাকছে বলে দাবি করেছেন ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড-এর ভাইস চেয়ারপার্সন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, ‘’বিলের খসড়া আমার কাছে আছে। এতে স্বাস্থ্য, ঋণ, পুনর্বাসন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে।‘’

রাজ্যের এই উদ্যোগ নিয়ে এখনই উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন অনেকে। ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড-এর প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিনহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘’এতে আমরা বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যাব। এসসি, এসটি, ওবিসি-র মতো আমাদের আর একটা শ্রেণিতে রাখতে পারতো। তাহলে নয়া আইনের সুবিধা আমরা পেতাম।‘’

সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর আট বছর কেটে গিয়েছে। এই স্বীকৃতির পরও রূপান্তরকামীরা বিশেষ এগিয়েছেন বলে মনে করেন না এই সমাজের অনেকেই। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের কথা বলেছিল আদালত। সংরক্ষণ না হোক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আইন পাশ করে কিছুটা জায়গা কি করে দিতে পারবে তৃতীয় লিঙ্গকে?ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, এতে তেমন সুবিধা হবে না। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘’এতো দিন আবেদন করা যেত। কিন্তু সেখানে পুরুষ-নারীর বিকল্প থাকতো বলে একটা অস্বচ্ছতা ছিল। সেই জায়গাটা ঠিক হলেও জেনারেল ক্যাটেগরিতে আবেদনের রাস্তা খুলে দিয়ে ততটা লাভ হবে না। প্রতিযোগিতা বাড়বে।‘’

এই কারণেই রূপান্তরকামীদের মধ্যে থেকে জোরালো হচ্ছে সংরক্ষণের দাবি। রূপান্তরকামী আইনজীবী ও নৃত্যশিল্পী মেঘ সায়ন্তনী ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘’জেনারেল ক্যাটেগরির সঙ্গে আমাদের জুড়ে দিলে আরো প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে। তাতে লাভ নেই। আমাদের গোষ্ঠীর পক্ষে পড়াশোনা করাই যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। কেউ যোগ্যতা অর্জন করলে তাকে সুযোগ করে দিতে চাকরিতে সংরক্ষণ দরকার।‘’

সুপ্রিম কোর্ট সংরক্ষণের কথা বললেও এ ব্যাপারে রাজ্যগুলি তেমন আগ্রহ দেখায়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কোনো রাজ্য নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কিছু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। কর্নাটক সরকার পুলিশে নিয়োগের জন্য সংরক্ষণ করেছে। মহারাষ্ট্রের আদালত এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে।

তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা চাইছেন বিধিবদ্ধ সংরক্ষণ যা প্রযোজ্য হবে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে। রঞ্জিতাও বলেন, ‘’সংরক্ষণ দিলে আমাদের সমাজের মানুষেরা প্রতিষ্ঠা পাবে। আমরা এসসি, এসটি, ওবিসি— সবার থেকে দুর্বল।‘’

রূপান্তরকামীদের মতে, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্য পেলে সমাজের দৃষ্টিতে তাদের গুরুত্ব বাড়বে। তার হাত ধরে আসবে মর্যাদা, সম্মান। কিন্তু দেশজোড়া সংরক্ষণ মিলবে কবে? শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের এতো বছর পরও এই প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজছে তৃতীয় লিঙ্গ। – DW

Loading