আইএমএফের পরামর্শে সুদের হার বাড়াব না

প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ , জুলাই ২৮, ২০২২

দেশের সরকারী- বেসরকারী ব্যাংকিং খাতে সুদের হার আপাতত বাড়ানো হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ ও আমানতের ওপর সুদহার যথাক্রমে ৯-৬ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত সুদের হার উঠিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফ পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি এখন ভাল অবস্থানে আছে। যদি ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯-৬ নির্ধারিত না করা হতো তাহলে কোভিডের সময় ছোট, বড়, মাঝারি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারত না। ভয়াবহ বেকারত্ব সৃষ্টি হতো।

আমি মনে করি, ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯-৬ শতাংশ করার উদ্যোগটি ভাল। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে ডলারের চাহিদা মেটানো হবে। ডলার নিয়ে কারসাজি করা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে সহজ শর্তের ঋণ চাওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা বলেন। এর আগে সভায় ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে এক হাজার ১৯৮ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকায় এক লাখ ৩০ হাজার টন এমওপি ও ইউরিয়া সার ক্রয়ের দুটি এবং ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদের বর্তমান হার ৯-৬ শতাংশ ঠিকই আছে। যদিও আইএমএফ এই হার উঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত এই হার উঠিয়ে দেয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সুদের এই হার সঠিক ছিল এবং আছে। শুধু তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় আইএমএফের পরামর্শে সুদ হার বাড়ানো হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদহার ৯-৬ করার কারণে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বেসরকারী খাতও চাঙ্গা হয়েছে। সুতরাং আইএমএফ যে কথা বলেছে, তা সঠিক নয়।

তিনি আরও জানান, যদি সুদহার ৯-৬ নির্ধারিত না করা হতো তাহলে কোভিডের সময় ছোট, বড়, মাঝারি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারত না। ভয়াবহ বেকারত্ব সৃষ্টি হতো। ডলার সঙ্কট মোকাবেলায় অনেক উদ্যোগ নেয়ার পরও কোন কাজে আসছে না কেন, সে প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, কাজ হবে, একটু সময় লাগবে। রফতানি বাড়ছে, রেমিটেন্সও বাড়ছে। গত বছর রেমিটেন্স কিছুটা কম হলেও চলতি অর্থবছর আশা করছি ভাল রেমিটেন্স পাব।

রেমিটেন্স ও রফতানির মাধ্যমেই ডলারের চাহিদা মেটানো হবে। তিনি বলেন, কিছু আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি করে আমদানি করছে। আমরা এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখছি, তবে ডলারের মূল্য নির্ধারিত হবে চাহিদার ও জোগানের ভিত্তিতেই। এছাড়া বাংলাদেশ যে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে, তা স্বীকার করে তিনি বলেছেন, দর কষাকষির সুবিধার জন্য তিনি চার দিন আগে সংবাদমাধ্যমকে অন্য কথা বলেছিলেন।

আর্থিক খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়ে দুই রকম কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি যদি আমার চাহিদা এক্সপোজ করে দিই, তাহলে আমার ওপর ঋণের বার্ডেন বা কস্ট তারা বেশি নেবে। সেজন্য ‘নেব, নিচ্ছি, বা প্রয়োজন নেই’ এই কথাগুলো বলে ম্যানেজ করতে হয়। তাতে করে আমরা লাভবান হই।

এদিকে, বাংলাদেশ যে ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে, আইএমএফ এর একজন মুখপাত্রও তা নিশ্চিত করেছেন। আইএমএফের ঋণ দরকার নেই- বলার পরে কেন গত রবিবার সংস্থাটির কাছে চিঠি পাঠানো হলো, সেই প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ডলার প্রিন্ট করি না, ডলার অর্জন করতে হয়। রেমিটেন্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে আমরা ডলার অর্জন করি। এর মাঝে খারাপ কিছু হয়নি। এটা খুব সহজ জিনিস।

আপানারা আমার জায়গায় থাকলে একই কাজ করতেন। আমরা বার্গেইন করে এভাবে ঋণ নেই। শক্ত কোন টার্ম এ্যান্ড কন্ডিশনস যেন ঋণের মধ্যে ঢুকে না যায়, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থ চাইব বলেছি। কিন্তু কত লাগবে সেটা আমরা বলিনি। তারা কী শর্তে দিতে চাচ্ছে আমরা সেটা দেখব। তারা যদি পজিটিভলি এগিয়ে আসে এবং কম রেটে পাই, তাহলে ইন দ্যাট কেস, আমরা বিবেচনা করতে পারি।

আমরা বিবেচনা করবই- এমন কোন প্রস্তাব আমরা দেইনি। আইএমএফকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম আমাদের সক্ষমতাগুলো তারা বুঝুক। সে কারণে তখন এটা পাবলিক করা হয়নি। আমরা ভালভাবেই হ্যান্ডেল করে যাচ্ছি। এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত আইএমএফের একজন প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ আইএমএফের রেসিলিয়ান্স এ্যান্ড সাসটেনেবলিটি ফ্যাসিলিটিস বা আরএসএফ ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।

২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন ॥ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এক লাখ ৩০ হাজার টন এমওপি ও ইউরিয়া সার ক্রয়ের দুটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ১৯৮ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

Loading