১১ বছরেও হয়নি ফেলানী হত্যার বিচার

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ , জানুয়ারি ৭, ২০২২

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী হত্যার এগার বছর ৭ জানুয়ারি। এতদিনেও কাঙ্ক্ষিত বিচার পায়নি তার পরিবার।

সেদিন ভোরে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে মারে অমিয় ঘোষ নামের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য।

ঘটনার পর তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলেছিল ৫ ঘন্টা। ৩০ ঘন্টা পর বিএসএফ লাশ ফেরত দিলে নাগেশ্বরী উপজেলার কলোনীটারী গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছিল। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।

ওই দিন ভারতের ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনস্ত চৌধুরীহাট বিওপির কোম্পানী কমান্ডারের এফআইআর-এর ভিত্তিতে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করা হয় ( জিডি নং-৩৪৯)। পরে এরই ভিত্তিতে ওই দিন একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয় (মামলা নম্বর-৫/১১)।

এদিকে এই নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কুচবিহারে ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টের বিচার এবং পূণর্বিচারে ফেলানী হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে খালাস দেয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট ফেলানী হত্যা মামলার পুনঃবিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মাসুম সম্পাদক কিরিটি রায় এবং ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম যৌথভাবে রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনের হলফনামায় কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন স্বাক্ষর করেছিলেন।

তিনি জানান, একাধিকবার তারিখ বদলের পর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রামানা ও বিচারপতি মোহন এম সান্তনা গৌদ্ধারকে নিয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য আইটেম নম্বর-৩ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিবাদীদের শোকজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা শোকজের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে শুনানি হয়নি। বর্তমানে কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে আছে রিটটি।

এদিকে ১১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার নিজ বাড়িতে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

গত কয়েক বছর এদিনে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার ফেলানীর কবর জিয়ারত ও সেখানে সমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন। তিনি জানান, এ সমাবেশে তারা ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারসহ সীমান্ত আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পার্ক রোডের নাম ফেলানী সরণি রাখার দাবি জানাবেন।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর ২০১৫ সালে তারা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্য যে কোনো রাষ্ট্রকে প্রস্তাব আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

Loading