ফোনে আড়িপাতা বন্ধে রিটের আদেশ রোববার

প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১

ফোনালাপে আড়ি পাতা বন্ধের নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্ত চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে আগামী রোববার আদেশের জন্য রেখেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার আদেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে দেয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর বিটিআরসিটির পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজা-ই রাকিব।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফোনে আড়িপাতা রোধে এবং ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি দুই সপ্তাহ পিছিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেটি আরও এক দফা পিছিয়ে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে শুনানির জন্য সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।

গত ১৬ আগস্ট ফোনে আড়িপাতা রোধে এবং ফাঁস হওয়া ২০টি ফোনালাপের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পেছানো হয়েছিল। ওইদিন আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার সময় আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনও আদালত দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন।

ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, রিট আবেদনে অনেক নথিপত্র যুক্ত করা হয়েছে। এসব পর্যালোচনা ও প্রস্তুতির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হলে আদালত দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ-সংক্রান্ত রিট আবেদন করেন। আবেদনে বিভিন্ন সময়ে ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনা তদন্তে নির্দেশনা চাওয়া হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়।

ফোনে আড়িপাতা ঠেকাতে আইন অনুযায়ী বিটিআরসির নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চেয়ে গত ২২ জুন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ওই রিট আবেদন করা হয়।

রিটে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ফোনে ২০টি আড়িপাতার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সংবিধানে এ অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংবিধানের তৃতীয় ভাগে যেসব মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ আছে, তার মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ৩০ (চ) ধারা অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাও কমিশনের দায়িত্ব।

আবেদনে বলা হয়, দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হলো, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা।

২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চের দেওয়া রায়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা-সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণও রিট আবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও সেবাদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য দিতে পারেন না।

রিট আবেদনে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০ (১) (চ) ধারা এবং সংবিধানের ৩৯ ও ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল চাওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত আইনজীবী মওদুদ আহমদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের ফোনালাপ, মামুনুল হকের ফোনালাপ, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ফোনালাপ ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনাও উল্লেখ করা হয় রিটে।

আদালত এ নিয়ে রুল জারি করলে কমিটি গঠন করে ফাঁস হওয়া ব্যক্তিগত ফোনালাপের ঘটনাগুলো তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনাও চাওয়া হয় সেখানে।

Loading