ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাঁশ-বেতের কারিগররা ভালো নেই

প্রকাশিত: ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ , আগস্ট ৪, ২০২১

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার গুটি কয়েক পরিবার বাঁশ এবং বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসেবে আঁকড়ে রেখেছে। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ত্রিশাল উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি মনকাড়া বিভিন্ন পণ্যের।

সত্যি কথা বলতে কী- শুধু ত্রিশাল এলাকায় নয় গ্রামেগঞ্জেও ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশের তৈরি আকর্ষণীয় বিভিন্ন আসবাবপত্রের কদর কমে যাচ্ছে; হারিয়ে যাওয়ার পথে বাঁশ-বেতের পণ্য। কিন্তু ত্রিশালে অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তবে এ উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার শত অভাব অনটনের মাঝেও তাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এই পেশাটি ধরে রেখেছেন। ত্রিশাল পৌরসভা সংলগ্ন গোহাটা মাঠ, ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাত্র ১৫-২০টি পরিবার এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন।
বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পণ্যের কদর কমে যাওয়ায় তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কয়েক দশক আগে ময়মনসিংহ জেলা সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে চালান হতো এসব বাঁশ ও বেতের পণ্য। কিন্তু বর্তমানে বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এর ব্যবহার কমে যাওয়ায় শিল্পটি আজ হুমকির মুখে। বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি সামগ্রী যেমন- পাখা, ঝাড়ু, টোপা, বাচ্চাদের দোলনা, ডালী, মাছ ধরার পলি, খলই সহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র বিস্তার ছিল। এক সময় যে বাঁশ ২০-৩০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে ক্রয় করতে হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি এসব পণ্যের দাম। স্থানীয় কারিগর আকরাম, মকবুল, আতিকুল সহ আরো অনেকই বলেন,’ ত্রিশালে আমরা হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও একাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১৫ টি ডালি তৈরি হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-১৫ টাকা করে লাভ থাকে। তবে আগের মত আর লাভ হয়না। সীমিত লাভ দিয়ে পরিবার চালানো এখন অতিকষ্টের।’

তারা আরো বলেন,’ খেয়ে-না খেয়ে অতিকষ্টে ধার-দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোন রকমে বাপ-দাদার এই পেশাকে আঁকড়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমাদের এই শিল্পটির উন্নতিকল্পে যদি সরকারিভাবে অল্প লাভে ঋণ দেওয়া হয় তাহলে আমরা হারিয়ে যাওয়া শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবো।’

Loading