অসহায় ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ময়নার মা শরীরের সামর্থ্য হারিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন নেত্রকোণা বড় বাজার সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন হিন্দু উপাসনালয় আখড়ায়। শারীরিক দুর্বলতার কারণে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। এই বৃদ্ধা মায়ের নেই কোন নিরাপদ সামাজিক আশ্রয়স্হল। তাই তিনি আখড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন ;উপাসনালয়ে আরতী শেষে প্রসাদ খেয়েই কোনরকমে জীবনীশক্তি ধরে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে তার স্বামী নিহত হন।তারপর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেয় নেত্রকোণা শহরের সাব-রেজেস্ট্রি অফিসের পাশে কোন এক ভাড়া বাসায়। পরে নাগড়া শিববাড়ী রোড এলাকায় সুজিত সরকারের পিতা মৃত নরেন্দ্র সরকারের নিকট থেকে জায়গা ক্রয় করে টিনসেড বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। তার এক ছেলে মারা গেছেন ;অন্য ছেলেটির খোঁজ নেই, নিরুদ্দেশ। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরে। কিছুদিন পূর্বে মেয়ের স্বামীও মত্যুবরণ করেন এবং স্বামীহারা মেয়ে অসুস্হ ও দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে।
ইতোমধ্যে ময়নার মায়ের বাড়ীতে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয় প্রতিবেশী মৃত নরেন্দ্র সরকারের ছেলে সুজিত সরকার। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ীতে প্রবেশ করতে না পারায় বাড়ীটি ভেঙ্গে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্বামী -সন্তান, বাড়ী ও সহায় সম্বলহীন নিঃস্ব -রিক্ত অবস্হায় বহুদিন যাবৎ পথে পথে ঘুরছিলেন এই অসহায় ময়নার মা।
পরিশেষে শারীরিক সামর্থ্যহীন ময়নার মা প্রায় ৩মাস যাবৎ আশ্রয় নিয়েছেন নেত্রকোণা বড় বাজার সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন হিন্দু উপাসনালয় আখড়ায়।
আখড়ার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অসিত কুমার সাহা বলেন, প্রায় ৩মাস যাবৎ ময়নার মা আখড়ায় থাকেন। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না;এমতাবস্থায় ময়নার মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আমরা মন্দির কমিটির লোকজন বেশ উদ্বিগ্ন।
নেত্রকোণা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃআলাল উদ্দিনের মাধ্যমে ময়নার মায়ের অসহায়ত্বের খবর পেয়ে নেত্রকোণা জেলার মানবিক জেলা প্রশাসক কাজী মোঃআব্দুর রহমান শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় ছুটে যান নেত্রকোণা বড় বাজার সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন হিন্দু উপাসনালয় আখড়ায়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে
দেন তিনি অসহায় এই ময়নার মায়ের প্রতি। সঙ্গে নিয়ে যান ময়নার মায়ের জন্য ২টি নতুন শাড়ী, গামছা,বেডশীড,বালিশ, কম্বল,কয়েকটি সাবানও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। তিনি অসহায় ময়নার মাকে
সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসক কাজী মোঃআব্দুর রহমান উপহার সামগ্রী নিয়ে অসহায় ময়নার মায়ের সামনে হাজির হওয়ায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় নেত্রকোণা শিশু পরিবারের উপ তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসাইন ও মন্দির কমিটির লোকজন উপস্থিত ছিলেন।