রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- শৈলজারঞ্জন মজুমদার-দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় অতঃপর নেত্রকোণা

সুস্থির সরকার সুস্থির সরকার

বিভাগীয় প্রধান ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১:৫২ অপরাহ্ণ , জুলাই ১৯, ২০২১

……………………………….. বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী

গারো পাহাড়ের পাদদেশে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ, হাওর বাওর খাল বিল নদী নালায় ভরপুর, মহুয়া মলুয়া স্মৃতি বিজরিত নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের বাহাম গ্রামে জন্ম নেয়া শৈলজারন্জন মজুমদার, যিনি বিভাগপূর্ব কলিকাতায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে এসে কবি গুরুর গানের সুর ও স্বরলিপি তৈরী করে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে প্রানবন্ত করে তুলেছেন এবং কবিগুরুর স্নেহধন্য হয়ে রবীন্দ্রাচার্য্য উপাধি পেয়ে গুরু দেবের শান্তিনিকেতন কে সম্মৃদ্ধ করেছিলেন।

তিনি আমাদের নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের গর্বিত সন্তান শৈলজারঞ্জন মজুমদার। যার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে মোহনগঞ্জ বাহাম গ্রামে, মোহনগঞ্জেরই আর এক গর্বিত সন্তান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানে শৈলজারঞ্জন মজুমদারের বাড়িতে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলা হচ্ছে।

সাজ্জাদুল হাসানের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি এপার বাংলায় (আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ) আর একটি শান্তিনিকেতন গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। শৈলজারঞ্জন মজুমদার নেত্রকোণার গর্ব।

শৈলজারঞ্জন মজুমদার বৃটিশ ভারতের তথা বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম নামক গ্রামে ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই তথা ৪ ঠা শ্রাবণ ১৩০৭ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহন করেন।  পিতা ছিলেন নেত্রকোণা সদরের আইনজীবী রমণীকিশোর দত্ত মজুমদার।নেত্রকোণা সদর সাতপাই এলাকায় মডেল থানার পাশে বর্তমানে খানকা শরীফ মসজিদ ও কয়েকটি ফার্নিচারের দোকান উনাদের পৈতৃক ভিঠা।কারা কিভাবে মালিকানা পেয়েছেন তা আমি অবগত নই । সরকারের। প্রবীনদের কাছ থেকে শোনা যায় শৈলজারঞ্জন মজুমদার এর পিতা রমণীকিশোর দত্ত মজুমদার একজন ভালো ও উঁচু মাপের আইনজীবী ছিলেন। অবসর সময়ে মগড়া নদীতে বড়শী দিয়ে মাছ ধরাটা ছিলো উনার নেশা। মায়ের নাম সরলা সুন্দরী।তিনি ছিলেন একজন গৃহিনী। সন্তান ও স্বামীর প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল।

 

১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার মেট্রোপলিটন কলেজ হতে আই.এসসি পাশ করেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এসসি পাশ করেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এসসি প্রথম শ্রেণীতে পাশ করেন। এরপর তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উনার পিতার ইচ্ছা ছিলো তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হউক।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল শৈলজারঞ্জনের সাথে সাক্ষাতের। সময়টা ছিল ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। সাপ্তাহব্যাপী ভাষা দিবস উদযাপনকালে বাংলা একাডেমীতে। সেসময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। উনার কাছ থেকে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতায় যখন জানলাম উনি নেত্রকোণা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সেদিন আমার বুকটা গৌরবে ভরে উঠল কারণ আমিও দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। তাই উনার সাথে কথা বলার আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমরা যে নেত্রকোণার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সে মেসেজটা সেদিন তাকে দিতে পেরেছিলাম। পরবর্তিতে তিনি যখন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে নেত্রকোণায় এসেছিলেন সেদিন নেত্রকোণার সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ তাকে ফুলেল সংবর্ধনা প্রদান করেছিলেন। নেত্রকোণা পাবলিক হলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় তিনি অংশগ্রহন করেছিলেন। সেসময় তিনি নিজ গ্রামেও গিয়েছিলেন। মোহনগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছ থেকে জানলাম গ্রামের বাড়ির মাটি সেদিন তিনি কপালে স্পর্শ করেছিলেন। মোহনগঞ্জের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক এমপি মরহুম ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর বাসায় আতিথিয়তা গ্রহন করেছিলেন। শৈলজারঞ্জন মজুমদার নেত্রকোণার এমন একজন গুণী মানুষ যাকে ভালবেসে তার (শৈলজারঞ্জন) জন্ম দিনে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর লিখেছিলেন- “জন্মদিন এল তব আজি, ভরি লয়ে সংগীতের সাজি বিজ্ঞানের রসায়ন রাগ রাগিণীর রসায়নে পূর্ণ হল তোমার জীবনে। কর্মের ধারায় তব রসের প্রবাহ যেথা মেশে সেই খানে ভারতীর আশীর্ব্বাদ অমৃত বরষে।” নেত্রকোণার প্রতি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের যে গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিলো তা শৈলজারঞ্জন মজুমদার এর কারনে। যার ফলে কলকাতার বাহিরে নেত্রকোণা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে কবির প্রথম জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়েছিল। যার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আমাদের প্রিয় শৈলজারঞ্জন মজুমদার। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও পরমআত্মার শান্তি কামনা করছি।

 

লেখক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক

 

 

Loading