মায়ের অপূর্ণ স্বাদ পুরন করতেই কলকাতার নৃত্যশিল্পী “লাবণ্য”

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ , জুলাই ১৩, ২০২১

কামাল পারভেজ ::

নামেই যেনো প্রতিভার ভাষা ফুটে উঠেছে। লুকিয়ে থাকা প্রতিভা ভালোবাসায় আক্রিয়ে ধরেছে দর্শকদেরকে। তুমি পারবে, আমি যেটা পারিনি সেই স্বপ্নের জায়গাটা তুমি পূরণ করবে, মা’র পরিশ্রম ফসল আজ আমি। অবশ্য ছোট বেলা থেকে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের নাচের সাথে চলতো আবুলতাবুল নাচ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে শুরু মায়ের সাথে নাচের ক্লাসে যাওয়া।

এবং খুব কম বয়সে দূরদর্শন Ezcc তে গ্রেডেড আর্টিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া লুকায়িত প্রতিভার সেই শিশুটি, (আগে বলা হয়েছে) নামেই যার প্রতিভার বাহার এই হলো সেই লাবণ্য ঘোষ। ২৫ মে ১৯৯৯ খ্রিঃ লাবণ্য ঘোষ’র জন্ম কলকাতা শহরে। বাবা কুণাল কান্তি ঘোষ,মা নন্দিনী ঘোষ দুজনেই সংস্কৃতি মনোভাব। মা নন্দিনী ঘোষ ও একসময় নাচ করতেন। বাবার বদলির চাকরি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হতো, তারপরও হেরে যেতে নয়,এগিয়ে যাওয়াটাই প্রতিবদ্ধ দর্শকের কাছে। লাবণ্য ঘোষ
এভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রথম স্থান অধিকার করে দেশে ও দেশের বাইরের প্রচুর মানুষের ভালোবাসায় শিক্ত। লাবণ্য’র তৈরি নাচ অনেকের মনে এতটাই আনন্দ দিয়েছে যে তারা সেটাকে পুনর্নিবান করেছে। এভাবে দর্শক ও স্রোতার মধ্যে লাবণ্য নিজের শিল্পকে ছড়িয়ে দিয়েছে । ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চায় ।
দু বছর বয়স তখন গড়িয়াতে বাড়ির পাশেই একটি নাচের স্কুলে মা নাচ শিখতে নিয়ে যেতো । কিন্তু বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় চলে যেতে হয় ভুবনেশ্বর। সেখান থেকেই লাবণ্য’র ওড়িশি নাচ শেখার শুরু গুরুমা শ্রীমতী রাজশ্রী প্রহরাজের কাছে। নৃত্যজীবনের ভিত্তিস্থাপন করেছেন শ্রীমতী।
বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় নানা সময়ে নানা জায়গায় থেকেছি কিন্তু নাচ কখনো বন্ধ হয়নি। অবশেষে কলকাতা আসার পর স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী শ্রীমতি নন্দিনী ঘোষালের কাছে দীর্ঘ ৭ বছর ওড়িশি শিখে এবং কলকাতা ও বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। লাবণ্য ঘোষ বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যবিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং গুরু শ্রীমতী পৌষালি মুখার্জির তত্ত্বাবধানে শিক্ষা গ্রহণ করছে।

মা, বাবা দুজনেই লাবণ্য’র পাশে ছিল,বলে আজ যেটুকু সাফল্য পেয়েছে ওনাদের আর অবশ্যই গুরুদের আশীর্বাদে। তবে লাবণ্য ঘোষ’র মা ছোটবেলায় নিজেও নাচ করতেন কিন্তু তাঁর পেশাগতভাবে কোনদিনও নাচ নিয়ে এগোনো হয়নি। মা বলে মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে হলে তাকে মা নাচ শেখাবেন। মায়ের অপূর্ণ সাধ যে পূরণ করতে পেরেছে এটাই লাবণ্য ‘র প্রথম বড় পাওনা।

প্রতিটি পুরস্কারই এই নৃত্য শিল্পীর কাছে মনে রাখার মত। যেমন যুগলশ্রীমল এক্সেলেনস অ্যাওয়ার্ড পর পর দুবার, সংযুক্তা পাণিগ্রাহী মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, রাজ্যসঙ্গীত আকাদেমিতে পর পর দুবার দ্বিতীয় স্থান , এছাড়াও ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট একাডেমীর ডান্স ড্রামা মিউজিক ও ফাইন আর্টস আয়োজিত ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামে প্রথম স্থান, ২০১৪ ত্রিধারা উৎসবে দ্বিতীয় স্থান, পঞ্চম বার্ষিকী কটক উৎসবে শ্রেষ্ঠ ওড়িশি নৃত্য শিল্পী মনোনিত হয় লাবণ্য । মুরারী স্মৃতি সংগীত সম্মিলনীতে প্রথম স্থান,সমগ্র ভারত নৃত্য প্রতিযোগিতা ২০১৪ তে ওড়িশি নৃত্যের প্রথম স্থান,ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স এর ২০১৬-১৭ দ্বিতীয় স্থান,ভারত সংস্কৃতি উৎসব ২০১৪ প্রথম স্থান,পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমী আয়োজিত ওড়িশি নৃত্য প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পায়।

এক একটি প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার নৃত্য শিল্পী লাবণ্য ঘোষকে এগিয়ে দিয়েছে অনুপ্রাণিত করেছে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। লাবণ্য’র জীবনে
অনেকবার, অনেক রকম ভাবে কখনো উচ্চতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে কখনো একক ভাবে নৃত্য পরিবেশন করায় কথা শুনতে হয়েছে। লাবণ্য জেনেছে, বুঝেছে খুব কম মানুষ তাঁর উলটো দিকের মানুষটির মন থেকে উন্নতি চান। এমনকি অনেক তথাকথিত কাছের মানুষদের কাছ থেকেও নানান কটু কথা শুনতে হয়েছে ছোটবেলা থেকে। একসময় সিদ্ধান্ত ও নেয় যে লাবণ্য নাচ করবে না। কিন্তু বাবা মা পাশে ছিলেন বলেই লাবণ্য আবার নিজের মন কে নাচের প্রতি স্থির করেছে।

পড়াশুনা এবং নাচ লাবণ্য একসাথে করেছে । যখন পরীক্ষার আগের দিন নাচের অনুষ্ঠান থাকত লাবণ্য মেকাপ করতে করতে পড়েছে।
প্রতিনিধির সাথে মুঠোফোনে আলাপচারিতায় জানান, কিন্তু নাচ আমার (লাবণ্য’র) কাছে সব কিছু তাই, নাচকেই জীবনে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি।কোন কিছুকেই অবজ্ঞা করেনি।
একসময় আমাকে বলা হয়েছিল আমি নাচটা ঠিক করে করলেও Expression ঠিক মত দিতে পারি না। তারপর জেদ নিয়ে আমি সেই বিষয়ে মনোযোগ দিই, এখন সবাই আমাকে Expression queen বলে ডাকেন। এটাই আমার প্রাপ্তি।
আমি জানি যত খারাপ কথা, অহেতুক নিন্দা ও হিংসা বিদ্বেষের জবাব একদিন আমি আমার কাজ দিয়েই দেবো।

আমার আনন্দের মুহূর্ত এটাই যে আমার কোরিওগ্রাফি মানুষ ভালোবেসে নিজে থেকে দেখে শিখে পরিবেশন করছে..ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ এবং আরও অনেক দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

এখন আমি নাচ শেখানো ও নৃত্য প্রদর্শনী শুরু করেছি। সকলেই সানন্দে অংশগ্রহন করছেন এটাই ভীষণ আনন্দের আর আমি জীবনে এমন কিছু করে যেতে চাই যাতে আমি না থাকলেও আমার কাজটা থেকে যায়। অনেকটা পথ চলা বাকি, আশাকরি সবার আশীর্বাদ পাবো।

Loading