ত্রিশালে আমেজহীন জাতীয় কবির ১২২তম জন্মবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ , মে ২৫, ২০২১

বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ।

বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতীয়ভাবে উন্মুক্তস্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। তবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কৈশোর স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ঘরোয়া আয়োজনে পালিত হয় বিভিন্ন কর্মসূচী।

প্রতি বছর ২৫মার্চ থেকে তিন দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের আয়োজনে কবি নজরুলের বাল্য বিদ্যাপীঠ সরকারী নজরুল একাডেমী (সাবেক দরিরামপুর হাইস্কুল) মাঠে আয়োজন করা হতো আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নজরুল মেলা। তবে গত দুই বছর যাবত করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে নেই মেলা বা অন্যকোন অনুষ্ঠানের আয়োজন। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে কবির স্মৃতিধন্য ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত কবির ভাস্কর্য উদ্বোধন, পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দীন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবির, প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধান, জাককানইবি শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু নীলদল, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে  তিনদিন ব্যাপী ভার্চ্যূয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, গেস্ট অফ অনার ভারতের আসানসোল কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাধন চক্রবর্তী।  তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান মালার ২য় ও ৩য় দিনেও ভার্চ্যূয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উক্ত দুই দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী খালিদ বাবু ও ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, গেস্ট অফ অনার কবি পৌত্রী খিলখিল কাজীর উপস্থিতি থাকার কথা রয়েছে।

 

এছাড়াও স্থানীয় ভাবে ত্রিশালের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন কলধ্বনী সংঘের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জুয়েল  জানান, জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে  অনলাইন লাইভ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।  স্থানীয় শুকতারা সংঘের আয়োজনে কেক কাটা, মোমবাতি প্রজ্জলন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বলে জানান সংঘের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন শিহাব। অপরদিকে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীতেও মোমবাতি প্রজ্জলন ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর সরকারী ভাবে কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ঘরোয়া ভাবে ত্রিশালের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অনুষ্ঠনের আয়োজন করেছে।

উল্লেখ্য; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসনসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। আসানসোলে রুটির দোকানে কর্মরত অবস্থায় ওই সময়ে সেখানে চাকুরীরত ছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাজীর শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজ উল্লাহ। তিনি তাঁর প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে লেখাপড়া করানোর জন্য নিয়ে আসেন ত্রিশালের কাজীর শিমলা গ্রামে। সেখান থেকে কবি নজরুল ইসলামকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দেন দরিরামপুর হাইস্কুলে (বর্তমান সরকারী নজরুল একাডেমী)। পরে কাজীর শিমলা থেকে ত্রিশাল দুরবর্তি হওয়ায় দারোগা কাজী রফিজ উল্লাহ কবি নজরুল ইসলামকে জায়গির হিসেবে পাঠিয়ে দেন ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া বেপারীর বাড়ীতে। ওখান থেকেই তিনি ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

 

ত্রিশাল উপজেলার কাজীর শিমলা ও ত্রিশাল নামাপাড়া গ্রামে কবি নজরুল ইসলামের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত স্থান রয়েছে।

Loading