যোগদানের আড়াই বছরেও কোনও ক্লাস নেননি সহকারী প্রধান শিক্ষিকা

প্রকাশিত: ১২:১৯ অপরাহ্ণ , এপ্রিল ১৫, ২০২১

ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার ইনচার্জ সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হোসনেয়ারা আরজু যোগদান করার পর আড়াই বছরেও কোনও ক্লাস নেননি। এমনকি বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীও তাকে চেনে না আর নামও জানেন না। এদিকে অনেক শিক্ষকও তাকে বিদ্যালয়ে কখনো দেখেনি।

এরই মধ্যে ২৯ মার্চ এই শিক্ষিকাকেই বদলি করা হয় ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটিও শূন্য। নিয়ম কারণেই তাকেই নিতে হবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। ২৯ মার্চ বদলি করা হলেও ১৪ দিন চলে যাবার পরেও এখনো যোগদান করেননি তিনি। যে শিক্ষিকা তার আগের কর্মস্থলে ঠিকমত উপস্থিত ছিলেন না। আবার তাকেই দেয়া হচ্ছে আরেকটি সরকারি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। এতে শঙ্কিত ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা।

জানা গেছে, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ সাহা ২০১৯ সালে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে পদটি শূন্য হয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন সহকারী শিক্ষক ফরিদ হোসেন। এদিকে বছরের শুরুতেই সিরাজ সিকদার নামে একজন সহকারী শিক্ষক যোগদান করেন এ বিদ্যালয়ে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া কথা থাকলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

এই বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক জোহর আলী, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের দ্বারস্থ হলেও কোন সুফল পাননি সিরাজ সিকদার। জোর করে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ফরিদ হোসেন। এ অবস্থায় শিক্ষকরা পরেছেন বিপাকে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কেউ সিরাজ সিকদারের পক্ষে কেউ আবার ফরিদ হোসেনের পক্ষ নেন। যার কারণে একে অপরের সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন।

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বিভাজনের প্রভাব পড়েনি শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিজি’র নির্দেশে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হোসনেয়ারা আরজুকে গত ২৯ মার্চ ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। নিয়মানুযায়ী নির্দেশের পরপরই তিনি কর্মস্থলে যোগদান করবেন। কিন্তু বদলির ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।

১২ এপ্রিল সোমবার বেলা ১১ টার দিকে সরকারি হরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে তার যোগদানের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে দুই সহকারী শিক্ষকের লড়াই থামাতে নতুন একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক দেয়া হলেও তিনি অজ্ঞাত কারণে যোগদান করছেন না। শোনা যাচ্ছে তিনি যোগদান করলেও আবার ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য চলে যেতে পারেন। তাহলে বিদ্যালয়ের যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এভাবে থেকেই যাবে।

এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে জ্যেষ্ঠতার কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। জোর যার তিনিই প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করেন। এদিকে যাকে নতুন করে বদলি করে আনা হচ্ছে তিনি আগের কর্মস্থলে আড়াই বছরে ঠিকমতো আসেননি। তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে বিদ্যালয়ের জটিলতার কোনো অবসান হবে না। তাই বিদ্যালয়ের শূন্যপথে একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে হোসনেয়ারা আরজু ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাকে প্রভাতি শাখার ইনচার্জ করা হয়। যোগদানের পর কয়েকদিন তিনি বিদ্যালয়ে আসেন। পরবর্তীতে নানা সময় ছুটি নিয়ে তিনি আড়াই বছরে ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেননি। তার বাসা বরিশালে হওয়ায় মাঝে মধ্যে তিনি একটি মাইক্রোবাসে করে ঝালকাঠি কর্মস্থলে এসে হাজিরা খাতায় সই দিয়ে চলে যেতেন। এ সুযোগে বিদ্যালয়ের প্রভাতি ও দিবা শাখার দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মারুফা বেগম। অভিযোগ রয়েছে দুই শাখার দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি হোসনেয়ারা আরজুকে একাধিকবার ছুটিসহ নানা সুবিধার সুযোগ করে দিতেন।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজোয়ান ইসলাম বলে, হোসনেয়ারা আরজু নামে কোনো শিক্ষিকাকে আমি চিনি না। তিনি কখনো আমাদের ক্লাস নেননি। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলে, আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আমি চিনি। কিন্তু হোসনেয়ারা আরজু নামে কোনো স্যারকে কখনো দেখিনি।

ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মারুফা বেগম বলেন, হোসনেয়ারা আরজু শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ। এখন করোনার মধ্যে আসেননি। আগে ছুটিতে থাকা ছাড়া তিনি বিদ্যালয়ে আসতেন। আড়াই বছরে তিনি কতদিন ছুটিতে ছিলেন এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনি আরও বলেন, হোসনেয়ারা আরজু এখন আমাদের বিদ্যালয়ে নেই। তাকে হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।

হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জটিলতার কারণে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, হোসনেয়ারা আরজু এখনো বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। তিনি যোগদান করলেও মন্ত্রণালয় থেকে তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে হবে। এতে সময় লেগে যেতে পারে। ততক্ষণ পর্যন্ত আগের যিনি দায়িত্বে আছেন ফরিদ হোসেন, তিনিই থাকবেন। তাহলে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা রয়েই যাবে। হোসনেয়ারা আরজু তার পূর্বের কর্মস্থলেই ঠিকমতো আসেননি। এ কারণে তাকে নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই চিন্তিত।

শিক্ষকদের অভিযোগ, তিনি এ বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েও ঠিকমতো আসবেন না। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। তাই শূন্য পদে নতুন একজন প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নতুন বদলি হওয়া শিক্ষিকা হোসনেয়ারা আরজুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা ধরেননি।

এ সমস্যার বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হলেও সরকারি বিদ্যালয়ের কোনো তথ্য আমাদের জানায় না। তবে শুনেছি সরকারি হরচন্দ্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় দায়িত্ব পালন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে নতুন একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকে বদলি করা হয়েছে। তিনি যোগদান করলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবেন। ## rtv

Loading