আজ সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি

প্রকাশিত: ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ , মার্চ ২৭, ২০২১

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিতে এসে শুক্রবার কর্মব্যস্ত সময় পার করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শনিবার তিনি সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জে যাবেন। ঢাকার বাইরে তার সফরকে কেন্দ্র করে এই দুই জেলা প্রশাসন সব ধরণের প্রস্তুিত সম্পন্ন করেছে।

শনিবার তার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশেশ্বরী মন্দির ও টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল ও ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি মন্দিরে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। তার সফরকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ প্রশাসন ব্যস্ত সময় পার করছে।

সাতক্ষীরা যশোরেশ্বরী দেবী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাদের সাথে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, মোদির সফরকে কেন্দ্র করে বহুদুর বিস্তৃত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সাধারনের যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে। যশোরেশ্বরী দেবী মন্দিরসহ রাস্তাঘাটের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। মন্দির চত্ত্বরে রাষ্ট্রীয় এই অতিথির জন্য নতুন অবকাঠামো গড়ে তুলে তার বিশ্রাম কক্ষ, আপ্যায়ন কক্ষ সাজানো হয়েছে।

শনিবার সকালে ঈশ্বরীপুরের এ. সোবহান হাইস্কুল ময়দানে অবতরনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ৯০০ মিটার দূরে মন্দির প্রাঙ্গনে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি শক্তিপীঠে পূজা দেবেন বলে কথা রয়েছে।

যশোরেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জানান, মহাদেবের মৃত স্ত্রী সতীবালাকে সুদর্শন ত্রিশূলে রেখে ঘুরানোর ফলে তার দেহ ৫১টি খন্ডে ছড়িয়ে পড়ে। এর একটি খন্ড পতিত হয় এই ঈশ্বরীপুরে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় কালী মন্দির। সতীবালার দেহের অপর খন্ডগুলি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকাসহ কয়েকটি দেশে পতিত হয়। নরেন্দ্র মোদি এই শক্তিপীঠে পূজা দেবেন।

এদিকে শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এছাড়া এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শন করবেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-০১ মোহাম্মদ শামীম মুসফিক স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় জানান, সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে গণভবন থেকে রওনা হয়ে সকাল ৯টায় বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে অবতরণ করে ১০টা ৪৫ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০টা ৫০ মিনেটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পন করে গভীর শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করবেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী গাছের চারা রোপন করার সময় তিনি সাথে থাকবেন। বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকাপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করবেন। অন্যদিকে, বেলা ১১টা ২৫ মিনেট নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়া থেকে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং ১১টা ৩৫ মিনিটে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হরিচাঁদের ঠাকুরের বাড়িতে পৌঁছাবেন। এরপর তিনি সেখানে পূঁজা আর্চনা করবেন। পরে তিনি ঠাকুর বাড়ির সদস্য ও মাতুয়া নেতাদের সাথে মত বিনিময় করবেন। পরে তিনি বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি হেলিকপ্টার যোগে কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ী ত্যাগ করবেন।

এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বহনকারী বিমানটি ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। উনিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানোর পর বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিমানবন্দরেই তাকে গার্ড অব অনার এবং লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং তিনি গার্ড পরিদর্শন করেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নরেন্দ্র মোদিকে বহনকারী মোটরবহর তেজগাঁও হেলিপ্যাডে যায় এবং সেখান থেকে হেলিকপ্টার যোগে সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সেখানে তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ, ভিজিটর বইয়ে স্বাক্ষর ও গাছের চারা রোপণ করেন।

স্মৃতিসৌধ থেকে হেলিকপ্টারে ফিরে তিনি যান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে। সেখানেও তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তিনি হোটেলে যান এবং পরে বিকেল তিনটায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন তার সাথে সাক্ষাত করেন।

দুপুরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোটের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। পরে জাতীয় পার্টির নেতারা মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া, ক্রিড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনের তরুন তারকাদের সঙ্গেও দেখা করেন মোদি। তাদের মধ্যে ছিলেন মাশরাফী বিন মুর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, সালমা খাতুন ও  জাহানারা আলম, অভিনেত্রী জয়া আহসান, নুসরাত ফারিয়া, চিত্র পরিচালক রেদোয়ান রনি, সংগীত তারকা শারমিন সুলতানা সুমি প্রমুখ।

বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। রাতে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী।

Loading