কে কখন টিকা পাবে

প্রকাশিত: ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ , ডিসেম্বর ২২, ২০২০

সরকার এর মধ্যেই প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে দেশে টিকা আসার পর কিভাবে, কাকে, কখন তা দেওয়া হবে বা কারা কখন কিভাবে পাবে—সেই পরিকল্পনা। এতে কিছু পরিবর্তন বা সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যা ঠিকঠাক আছে, সে অনুসারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষ পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসের টিকা বিনা মূল্যে পাবে। পাঁচ পর্বে ৫০ ভাগে এটা দেওয়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রত্যেককে প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

সরকারের তরফ থেকে গত কয়েক দিন ধরে আভাস দেওয়া হচ্ছে, ক্রিসমাসের আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদন পেলে পরবর্তী দুই সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে দেশে টিকা চলে আসবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য সূত্র অনুসারে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ শতাংশ হিসাবে প্রথমে পাবে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন। দ্বিতীয় দফায় পাবে ৪-৭ শতাংশ হিসাবে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন। তৃতীয় দফায় ১১-২০ শতাংশ হিসাবে পাবে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন। পরের ধাপে ২১-৪০ শতাংশের মধ্যে পাবে তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জন এবং শেষ ভাগে ৪১-৮০ শতাংশের আওতায় পাবে ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জন। ১৯ ক্যাটাগরিতে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা এই মানুষজন প্রথম ধাপেই টিকা পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা প্রায় সম্পন্ন করে এনেছি। এ ক্ষেত্রে সবাইকেই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তার পরও নিয়মিত আপটেড হচ্ছে। কোনো বিভাগকে হয়তো সমপর্যায়ের অন্যদের সঙ্গে যুক্ত করে হিসাব করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে তিন কোটি টিকা পাব সেরাম থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার। পরে আসবে কোভেক্স থেকে বাকিটা। এমনকি সেরাম থেকেও আরো আসতে পারে। এ ছাড়া প্রাইভেট সেক্টরকেও আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। ফলে কিছুটা সময় লাগলেও টিকার কোনো সংকট হবে বলে মনে হয় না।’

টিকাসংক্রান্ত পরিকল্পনাপত্র অনুসারে দেখা যায়, সবার আগে পাবে সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্সচালক, যাঁদের সংখ্যা মোট তিন লাখ ৩২ হাজার ২৭। পাশাপাশি পাবেন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা ছয় লাখ চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্সচালক।

এরপরই টিকা পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে কাজ করা অন্যান্য বিভাগের আরো এক লাখ ২০ হাজার চিকিৎসক-নার্স ও অন্যরা; দুই লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সরাসরি করোনায় দায়িত্ব পালন করা পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন, সশস্ত্র বাহিনীর তিন লাখ ৬০ হাজার সদস্য; বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পাঁচ হাজার শীর্ষ কর্মকর্তা (সংখ্যা আরো কিছু বাড়বে), সাংবাদিকদের মধ্যে যাঁরা সরাসরি করোনার খবরাখবর সংগ্রহে কাজ করেছেন—এমন ৫০ হাজার, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত এক লাখ ৫০ হাজার জন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ষাটোর্ধ্ব বয়সের পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার জন, দাফন ও সৎকারকর্মী ৭৫ হাজার; সরকারি ও স্বায়ত্তশায়িত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপককর্মী চার লাখ, বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মী এক লাখ ৫০ হাজার, বিদেশগামী অদক্ষ শ্রমিকরা এক লাখ ২০ হাজার, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী চার লাখ, ব্যাংককর্মী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন, যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ক্যান্সার রোগী ছয় লাখ ২৫ হাজার, অন্যান্য জরুরি সেবায় জড়িত ৭৭ হাজার ৮০৪ জন। এসব ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনের টিকা দেওয়া শেষ হবে।

দ্বিতীয় ধাপে মোট জনগোষ্ঠীর ৭ শতাংশের আওতায় ষাটোর্ধ্ব প্রায় এক কোটি ২১ লাখ মানুষ, তৃতীয় ধাপের ৫০-৫৫ বছরের প্রায় ৫৬ লাখ, ৪০ থেকে ৫০ বছরের প্রায় ১৮ লাখ, গণমাধ্যমের বাকিদের মধ্য থেকে আরো ৫০ হাজার, পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলের এক লাখ ১১ হাজার জন, ১২ লাখ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ, পাঁচ লাখ পরিবহন শ্রমিক, দুই লাখ ৪২ হাজার ৯৬৪ জন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফার্মেসিকর্মী, ৩৬ লাখ গার্মেন্টকর্মী, অন্যান্য তিন লাখ ধরে এই পর্বে শেষ হবে।

পরিকল্পনা অনুসারে পরের ধাপে দেওয়া হবে তিন কোটি ৪৬ লাখকে। এর মধ্যে থাকছেন আগের ধাপগুলোতে শিক্ষকদের মধ্যে বাদ পড়া আরো ছয় লাখ ৬৭ হাজার জন, প্রসূতি নারী (যদি তাঁদের নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়) ৩৮ লাখ ১৫ হাজার, সরকারি অন্যান্য ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো ৪৩ লাখ সদস্য, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ছয় লাখ কর্মচারী, অন্যান্য আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বাকিদের মধ্য থেকে ২২ লাখ, আমদানি রপ্তানিতে জড়িত দুই লাখ ৮১ হাজার ৮৮৪ জন, বেসরকারি কর্মী ২৫ লাখ, কারাবন্দি ও কারারক্ষী ৯৭ হাজার ২৪৫ জন, বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষের মধ্যে ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ জন, কৃষি ও খাদ্য খাতের কর্মী ১৬ লাখ ৫০ হাজার, আবাসিক কর্মী পাঁচ লাখ, গৃহহীন দুই লাখ, অন্যান্য কারখানা কর্মী ৫১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৪ জন।

এই ধাপে আরো টিকা পাবেন বাকি থাকা পরিবহন শ্রমিকদের মধ্য থেকে আরো তিন লাখ, ৫০-৫৪ বছরের জনগোষ্ঠীর বাকিদের মধ্য থেকে আরো ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৩ জন, অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থাপনায় জড়িত পাঁচ লাখ। সব শেষ ধাপে দেওয়া হবে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে তিন কোটি ২২ লাখ ৩৪ হাজার, শিশু ও স্কুলগামীরে মধ্য থেকে তিন কোটি ৬০ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৭ জন ও সব শেষে বাকিদের মধ্য থেকে আরো আট লাখ ৪২ হাজার ৫৯৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (জাতীয় টিকা দান কর্মসূচি) ডা. সামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিদিনই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে থাকা সংখ্যা কমানো-বাড়ানো হচ্ছে। অনেক কিছুই আপডেট হচ্ছে। এটা চলমান থাকবে একদম শেষ সময় পর্যন্ত। আমরা চাই যাতে করে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলার মাধ্যমে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারি।’## কালের কন্ঠ

Loading