পদ্মা সেতু ইস্যুতে চুপ বিএনপি

প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ , ডিসেম্বর ১২, ২০২০

পদ্মা সেতু নিয়ে ২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক ঝুঁকি আছে।’

সেই সময় চেয়ারপারসনের বক্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছিলেন, ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপর পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো খালেদা জিয়া ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনো সাবধান হও, নকশাপরিবর্তন করো এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।’

কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ স্প্যান বসানোর পর পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হলেও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ এ সেতু নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না পদ্মা সেতুকে সরকারের ভালো উদ্যোগ বললেও নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

দলের নেতারা পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল ফেসবুকে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যানটি বসানো উপলক্ষে উচ্ছ্বসিত আবেগে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই সেতু সম্পর্কে আমার কিছু জানার আছে, জিজ্ঞাসা আছে। এই সেতু তো বাংলাদেশের জনগণের টাকাতেই হচ্ছে। তাই অবশ্যই তাদের বিশদ জানার অধিকার আছে। এত বিপুল ব্যয়ের একটা প্রকল্পে স্বচ্ছতার দরকার আছে। কারণ, এই প্রকল্পে দুর্নীতির মতলবের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটি থেকে সরে গেছে। শুধু তারা নয়, বিদেশি আরো যেসব সংস্থা ঋণ দিতে চেয়েছিল তারাও টাকা না দিয়ে প্রকল্প থেকে সরে গেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডার এসএনসি লাভালিন কম্পানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় সে দেশের একটি আদালত প্রমাণ সংগ্রহের পুলিশি পদ্ধতিকে অগ্রহণযোগ্য মনে করায় অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়েছে। তবে দুর্নীতির চেষ্টার মূল যে অভিযোগ, সেটার কিন্তু বিচার হয়নি।’ তিনি পদ্মা সেতুর ১২টি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুইজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও দুইজন যুগ্ম মহাসচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে এই সেতুকে। আরো দুই বছর সময় লাগবে, দেখা যাক তারা কী করে।

অন্যদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় বিএনপির মিত্র মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যত গালি দেন, উনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করবেন না। আমি এ জন্য ঠিক করেছি, তাঁকে একটা প্রশংসা করি। এটা কোনো দালালি করছি না। সত্যি সত্যি আমি মনে করি, পদ্মা সেতু একটা ভালো কাজ হয়েছে। এটা একটা স্বপ্নের সেতু তো বটেই, অন্তত দক্ষিণাঞ্চলের জন্য তো বটেই। কিন্তু এই সেতুর নির্মাণ নিয়ে কথা আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে আসাম ও অরুণাচল এই দুটি রাজ্যের মাঝামাঝি একটা ব্রিজ করা হয়েছে, এটার নাম ভুপেন হাজারিকা সেতু। ৯.১৫ কিলোমিটার লম্বা। পদ্মা সেতু হচ্ছে ৬.২৫ কিলোমিটার। ৯.১৫ কিলোমিটার লম্বা সেতু নির্মাণ করতে লেগেছে এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা। আর আমাদের সোয়া ছয় কিলোমিটার ব্রিজ এখনো হয়নি, শুরুতে এর প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন পর্যন্ত ঠিক কত হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে একদম আপডেটেড হিসাব করা হয়নি। সবাই হিসাব মনে করছেন, সর্বশেষ যেটা বলেছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা, তার সঙ্গে আরো ১০-২০ হাজার কোটি টাকা যুক্ত হয়েছে। কমপ্লিট করতে আরো হয়তো ২০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। তার মানে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা লাগবে এই সোয়া ছয় কিলোমিটার লম্বা সেতু বানাবার জন্য।’

মান্না বলেন, ‘আমি বলতে কি পারি না—ওরা যদি সোয়া ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা দিয়ে করতে পারে, এখানে (পদ্মা সেতু) এত টাকা লাগবে কেন? খুব ডাট মারায়। আমরা কাউকে কেয়ার করি না, নিজেদের টাকায় করেছি। কেন? আপনারা তো চীন থেকে লোন নিয়েছেন। ওই টাকার মধ্যে চীনা কম্পানি নেই, তারা করেছে না? তারা সুদ দিচ্ছে না? সুদের হার কত? মিনিমাম ৪%। আর বিশ্বব্যাংক যে টাকা দিত সেই টাকার সুদের হারের পরিমাণ ছিল .২৫% থেকে .৫০%। মানে .৫%। নেননি কেন সেই টাকা? ওরা (বিশ্বব্যাংক) একটা দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। দুর্নীতির তদন্ত করেননি। শুধু গায়ের জোরে বলেছেন, নেব না তোমাদের টাকা। কেন? কারণ বিশ্বব্যাংক যদি টাকা দিত তাহলে বিশ্বব্যাংক এটা মনিটর করত এবং তখন এই ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকত না। এখন এই যে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেতুটা হচ্ছে এ সম্পর্কে কোনো হিসাব চাইতে পারব? চাইলে সরকার দেবে?’

তিনি বলেন, এই দেশের কত টাকা বছরে লুট হয় তার কোনো হিসাব আছে। একটা হিসাব সরকারি ব্যাংকগুলো দিয়েছে, ব্যক্তি মালিকানা যে সমস্ত ব্যাংক দিয়েছে, তারা বলেছে যে, প্রত্যেক বছর অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। আরো যে হুন্ডি-টুন্ডির মাধ্যমে যায় ওটা সোয়া লাখ কোটি টাকা। সোয়া লাখ কোটি টাকা বাদ দেন ৭০ হাজার কোটি টাকা যে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ওই টাকা হলে প্রত্যেক বছর একটা করে পদ্মা সেতু বানাতে পারি। এত গল্প কেন? একটা স্পেন বসান আর হুলুস্থুল লাগিয়ে দেন। অথচ প্রতিবছর একটা করে পদ্মা সেতু পাচার হয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেন না।’ ## কালের কন্ঠ

Loading