আগুন সন্ত্রাস বিএনপি’র প্ল্যানড গেম

প্রকাশিত: ১০:৪৭ অপরাহ্ণ , নভেম্বর ১৯, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সরকারের সমালোচনার নামে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় বিএনপি সহ সুবিধাবাদি শ্রেণীর কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, আগুন সন্ত্রাস বিএনপি’র প্ল্যানড গেম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে সেখানে তারা (বিএনপি) নামকা ওয়াস্তে ক্যান্ডিডেট দেন, খুব হৈ চৈ করেন। এটা তাদের একটা পরিকল্পিত খেলা, প্ল্যানড গেইম। আমরা এখন জানি তারা এটাই করবে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-১৮ আসনে যখন নির্বাচনটা করতে গেলাম (১২ নভেম্বর) তখনও একই ঘটনা, কতগুলো বাসে তারা আগুন দিল। পার্লামেন্টে বিএনপি’র এক নেতা (সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ) এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুললো। আমার কাছে এ বিষয়ে তার দলের লোকের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড ছিল।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা চালিয়ে অপপ্রচারের মাধ্যমে সেটির দায়ভার আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ সকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সভায় একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি দলীয় প্রধান কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভেনিউতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সংগে যুক্ত হন।

তিনি বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে সংগঠনের জন্য বাইরে থেকে ভাল ফান্ড আনতে পারবেন, বাংলাদেশকে এখনও দরিদ্র, ক্ষুধার্ত বা গরিব দেখিয়ে ফান্ড আনতে পারবেন। তবে, এই ফান্ডটা যায় কোথায়, কি কাজে ব্যবহার হয় তারও একাউন্টেবিলিটি থাকতে হবে, তারও হিসেব দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু কথা বলে লাভ নেই (ঢালাও সমালোচনা), ভবিষ্যতে সেই হিসেবটাও আমরা আস্তে আস্তে নিতে শুরু করবো।’
তিনি বলেন, ‘অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং বিদেশে গিয়ে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচার করা, আজেবাজে কথা বলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে আসা, এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং তারা ঠিক (বিএনপি) এই কাজটাই করে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন,‘সমালোচনা করা ভাল, এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কোথাও কোন ত্রুটি রয়েছে কি না। কিন্তু বিদেশে অপপ্রচারে যে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, সেটা তারা ভুলে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং অবাধ বাক স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মিডিয়াতে সরকারের ঢালাও সমালোচনার তীব্র নিন্দা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি আমাদের এক ধরনের শহুরে লোক রয়েছে। আমরাই ডিজিটাল করে দিয়েছি, বেসরকারী টিভি চ্যানেল দিয়েছি, সবার হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের দেয়া জিনিষ ব্যবহার করেই তারা বলছে যে, এটা হলো, ওটা হলোনা, তাদের কেউ দেখছে গণতন্ত্রই নাই।’

তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, তাহলে জিয়াউর রহমান যখন হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মার্শাল ল’ দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তখন কি গণতন্ত্র ছিল! নাকি ১৫ ফেব্রুয়ারি (’৯৬ সালে) নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় গেল ওটা গণতন্ত্র!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি-অনিয়ম করে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজে আসে না- করোনাভাইরাস এই শিক্ষাই দিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, করোনা বুঝিয়ে দিয়ে গেল দুর্নীতি আর অনিয়ম করে উপার্জিত টাকা-পয়সার কোন মূল্য নেই। যারা কিছু হলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেতেন তাদের জন্য করোনাভাইরাস শিক্ষা দিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, এমনকি অনেক উন্নত দেশে প্রবৃদ্ধি মাইনাস-এর দিকে চলে গেছে।
তিনি বলেন, করোনা শনাক্তের পর থেকে দ্রুত এবং সুদূর প্রসারী ও পরিকল্পিত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তার সরকার সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবারো করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আবার একটা ধাক্কা আসছে।’ এক্ষেত্রে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবারো আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ঘাবড়ে না গিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে করোনা মহামারীতে বাংলাদেশের মৃত্যুর হার কম রাখা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের জন্য কাজ করে, ফলে দলটির প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তিনি এ সময় বিএনপির মিথ্যাচার সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকারও আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে নানা গবেষণা চলছে, সরকার আগাম টাকা দিয়ে রাখছে এবং যখনই ভ্যাকসিন বাজারে আসবে বাংলাদেশে পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখতে তার সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ শুরুর পর পরই দুই হাজার ডাক্তারের পাশাপাশি নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।- বাসস

Loading